হাওর পাড়ের কৃষকের কাটা ধানে ধরেছে পচন, অঙ্কুর গজিয়েছে মাড়াই করা ধানে
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২
হাওর পাড়ের কৃষকদের বিপদ যেন কাটছেই না। একের পর এক বিপদের হানায় দিশেহারা তারা। পাহাড়ি ঢলের সাথে যুদ্ধ করে ধান কাটলেও তা তোলা নিয়ে নতুন করে ঝামেলায় পড়েছেন কৃষকরা। এবার নতুন সংকট অতি বৃষ্টিপাতের কারণে কাটা ধানে ধরেছে পঁচন, অঙ্কুর গজিয়েছে কৃষকের মাড়াই করা ধানে। অশনি প্রভাবে গত কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টি হওয়ার কারণে উপজেলার উঁচু জমিতে পেকে যাওয়ায় বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে কৃষকরা তাদের স্বপ্নের ফসল ঘরে তোলার জন্য জমি থেকে ধান কাটেন। কিন্তু বৃষ্টির কারণে সঠিক সময়ে কাজ করতে না পেরে স্তুপ করে রাখায় অঙ্কুর গজিয়েছে ধানে। এখন কৃষকরা রোদের মুখ দেখার অপেক্ষায় আছেন। রোদ উঠলে তাদের কষ্টের ফসল শুকিয়ে ঘরে তুলবেন।
সরেজমিন বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অতিবৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে হাওরের উঁচু জমির ফসলও ডুবে গেছে। যে সমস্ত কৃষকরা ধান কেটেছেন তা পাড়ে আনার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। অতিবৃষ্টির কারণে কয়েকদিন এসব ভেজা ধান স্তুপ করে রাখায় ধানে পঁচন ধরেছে। কাটা ধানে গজিয়েছে অঙ্কুর। এই মুহুর্তে কৃষকের গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে এই ধান। অনেকে আবার ধানের পঁচন ঠেকাতে বস্তা বন্দি করে পানিতে ফেলছেন ধান। ধান শুকানোর খলা পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় বেকায়দায় পড়েছেন কৃষকরা কষ্টের শেষ নেই তাদের। তবে ইতিমধ্যেই হাওরের অধিকাংশ কৃষক গোলায় তুলেছেন ধান। তবে আজ রৌদ্রের দেখা মেলায় কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে কৃষকের মাঝে। ধান শুকানোর ধুম পড়েছে। যে যেখানে পারছেন শুকাচ্ছেন ধান।
কথা হয় উপজেলার নগর গ্রামের কৃষক রন্টু চন্দ্র দসের সাথে। তিনি বলেন, জমিতে ধান পেকে যাওয়ায় বৃষ্টির মধ্যেই পাঁচদিন আগে ধান কেটে নিয়ে আসছি। কিন্তু হঠাৎ বৃষ্টি শুরু ধানের গোছা স্তুপ করে রাখার কারণে ধানে অঙ্কুর গজিয়েছে। এখন এসব ধান নিয়ে চিন্তায় আছি। ৫ বিঘা জমিতে এই বছর বোরো ধানের আবাদ করেছিলেন উপজেলার গনিগঞ্জ গ্রামের কৃষক জিয়াউর রহমান। সারা বছর জমির ধানের চাউলে দিন পার করার আশায় চার মাসের বেশি সময় ধরে রাতদিন কষ্ট করেছেন তিনি। কিন্তু সে কষ্টের ফসল ঘরে তুলতে পারছেন না রোদের অভাবে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে শান্তিগঞ্জে ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২২ হাজার হেক্টর। এরমধ্যে হাওর এলাকার ১৮ হাজার হেক্টর জমির সবগুলোই কর্তন শেষ হয়েছে। নন হাওরে ৪ হাজার হেক্টর জমির প্রায় ৯৯ শতাংশ ধান কাটা শেষ হয়েছে। টানা বৃষ্টির কারনে ধান কাটায় ব্যাঘাত ঘটছে। কিছুকিছু জায়গায় পাহাড়ি ঢলে ক্ষতি হলেও পানি কমে যাওয়ায় সে ধানও কাটতে পেরেছেন কৃষকরা। আবহাওয়া ভালো হলেই সব ঠিকঠাক হয়ে যাবে এমন প্রত্যাশার পাশাপাশি যে সকল ধানে অঙ্কুর দেখা দিয়েছে তা বাড়ির উঠান, ছাঁদ কিংবা খোলা জায়গায় বিছিয়ে দিয়ে পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখার পরামর্শ দিয়েছে কৃষি বিভাগ।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাজেদুর রহমান বলেন, যারা ধান শুকাতে পারছে না আমরা তাদের পরামর্শ দিচ্ছি। যেখানে উঁচু জায়গা আছে যেখানে তারা যেন ধান গুলো শুকানোর ব্যবস্থা করে। আজ থেকে আশা করা যায় আবহাওয়া ভালো থাকবে। আর বৃষ্টিপাত না হলে ধানের তেমন ক্ষতি হবে না। আর যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। পরবর্তীতে তাদেরকে সরকারি সহায়তা প্রদান করা হবে।
এসএ/