পকেট মারতে কমলাপুর গিয়ে ম্যানেজারের ফোন-টাকা চুরি করে মাসুদ


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


পকেট মারতে কমলাপুর গিয়ে ম্যানেজারের ফোন-টাকা চুরি করে মাসুদ

ঈদের সময় কমলাপুর রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ারের ওয়ালেটে থাকা মুঠোফোন ও টাকা চুরি করা আজিজ মোহাম্মদ মাসুদ (৪৫) ৩৩ বছর সৌদি আরবে ছিলেন। সেখানে থাকতে পড়াশোনা, ব্যবসা ও চুরি করতেন। তার মধ্যে গাড়ি চুরির অপরাধে জেল খেটেছেন তিন বছর।

গতকাল বুধবার (১৮ মে) রাজধানীর পুরান ঢাকার একটি মেসে অভিযান চালিয়ে আজিজসহ রনি হাওলাদার (৪০) ও জাকির হোসেনকে (২৫) গ্রেপ্তার করা হয়েছে।  ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমানএ তথ্য জানিয়েছেন।

মশিউর রহমান বলেন, ‘গত ২৩ এপ্রিল স্টেশন ম্যানেজার মাসুদ সারওয়ারের অফিস কক্ষ থেকে দুটি মুঠোফোন, একটি ওয়ালেটের ভেতর থাকা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও নগদ ৪৫ হাজার টাকা চুরি করে চোর পালিয়ে যায়। ওই ঘটনার পর ডিবি পুলিশ বিষয়টির তদন্তে নামে। সর্বশেষ গতকাল তিনজন গ্রেপ্তার করা হয়।’

তিনি আরও বলেন, আজিজ মোহাম্মদ দীর্ঘ ৩৩ বছর সৌদি আরবে ছিলেন। আজিজের বাবা সেখানকার একটি স্বনামধন্য মসজিদের ইমাম ও খতিব ছিলেন। বাবার চাকরি সূত্রেই মাত্র ৫ বছর বয়সে সৌদি আরবে যায় সে। সেখানে বিভিন্ন মালিকের গাড়ির চালক হিসেবে কাজ করতেন। ড্রাইভিং করতে করতে তার গাড়ি চুরির নেশা পেয়ে বসে। তিনি বিভিন্ন ব্যান্ডের যেমন- BMW, PORSCHE JAGUAR, LEXUS, গাড়ির মতো দামি দামি গাড়ি চুরি করতেন। ২০১৫ সালে সৌদি আরবে গাড়ি চুরির মামলায় সৌদি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন।

এই কর্মকর্তা বলেন, ‘সৌদি আরবে গাড়ি চুরি মামলায় তিন বছর সাজা হয় তাঁর। সাজা ভোগ শেষে সৌদি সরকার তাকে দেশে পাঠিয়ে দেয়। এরপর ২০১৮ সালে কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থান নিয়ে একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা শুরু করেন। কিছুদিন পরে মাদ্রাসায় মোবাইল চুরি করে ধরা পড়লে তাঁর চাকরি চলে যায়। এরপর তিনি ঢাকা শহরে চলে আসেন। বিভিন্ন মেসে অবস্থান করতে থাকেন।’

আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে মশিউর রহমান বলেন, ‘একটি মোবাইল চুরি করতে মালিকের গতিবিধি লক্ষ্য করে মাত্র ৪ থেকে ৫ সেকেন্ড সময়ের মধ্যে পকেট থেকে চুরি করতে পারেন আজিজ। এরপর চোরাই মোবাইলগুলো নিয়ে রনি হাওলাদার ও ফকিরাপুলের জাকিরের কাছে ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা দামে বিক্রি করেন। ওই মোবাইলগুলো জাকির কিছুদিন তার হেফাজতে রেখে লক ভাঙা, আইএমইআই পরিবর্তন করেন। তারপর শহরের সাধারণ মানুষের কাছে এবং বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যম ও বিক্রয় ডটকম ইত্যাদিতে বিজ্ঞাপন দিয়ে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেন। যেসব মোবাইলের লক ভাঙলে বা আইএমইআই পরিবর্তন করতে পারেন না, সেগুলোর বিভিন্ন পার্টস খুলে বিক্রি করেন।’

ডিসি মশিউর আরও বলেন, ‘আজিজ মোহাম্মদ স্বীকার করেন যে, তিনি দীর্ঘ তিন বছর ধরে রাজধানীর কমলাপুর রেল স্টেশন, ঢাকা মেডিকেল, টিএসসি চত্বর, নগর ভবন, গুলিস্তান, ধানমণ্ডি লেক, যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতি সপ্তাহে ৮-১০টি মোবাইল চুরি করেন। চোরাইকৃত মোবাইলগুলো আসামি রনি হাওলাদার ও জাকির হোসেনের নিকট বিক্রি করতেন। আসামিরা একটি সংঘবদ্ধ চোর চক্রের সক্রিয় সদস্য। রাজধানীর কমলাপুর রেল স্টেশন থানায় এ সংক্রান্তে একটি মামলা রয়েছে।’

গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের তথ্য অনুযায়ী, কমলাপুর রেলস্টেশন, গুলিস্তান গোলাপশাহ মাজারসহ বিভিন্ন স্থান থেকে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ১৭টি উন্নত মানের চোরাই মোবাইল উদ্ধার করা হয় বলেও জানান মশিউর রহমান।

এসএ/