শত বছরের জগৎ চন্দ্র মহাজনের প্রান্তশালা সংস্কারের দাবি পটিয়াবাসির


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


শত বছরের জগৎ চন্দ্র মহাজনের প্রান্তশালা সংস্কারের দাবি পটিয়াবাসির

চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার দক্ষিণ ভূর্ষী ইউনিয়নের ডেঙ্গাপাড়া গ্রামের ঐতিহ্যবাহী শত বছরের জমিদার জগৎ চন্দ্র মহাজনের প্রান্তশালাটি বর্তমানে জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এটি পটিয়ার ইতিহাস ঐতিহ্যের স্মৃতি হিসেবে সংস্কার করার জোর দাবি জানিয়েছেন পটিয়াবাসি। 

জানা যায়, উপজেলার দক্ষিণ ভূর্ষী ইউনিয়নের ডেঙ্গাপাড়া গ্রামের জগৎ চন্দ্র চৌধুরী মহাজন তৎকালীন জমিদার ছিলেন। ব্রিটিশ আমল থেকে দক্ষিণ চট্টগ্রাম এলাকার প্রতাপশালী জমিদার ছিলেন। এলাকায় তাদের প্রায় ২২ ধোন জায়গা সম্পত্তি। সেসময় তিনি এলাকার সমাজসেবা মূলক বিভিন্ন কর্মকান্ডে জড়িত ছিলেন। খানমোহনা এলাকার ধনপোতা সেবা হোলা মন্দির, খানমোহনা পুকুরের পাকা ঘাট নির্মাণ, ডেঙ্গাপাড়ার কৃষ্টাখালী বাজারের পাশে ১৩৩৪ বঙ্গাব্দ সনে পাকা নির্মিত ঘাটসহ জগত চন্দ্র মহাজনের প্রান্তশালা নামে একটি প্রান্তশালা নির্মাণ করেন। সেসময় চলাচলের জন্য গাড়ি কিংবা কোন যানবাহন ছিলনা। পায়ে হেটে কিংবা খাল নদীতে নৌকা-সাম্পান দিয়ে মানুষ চলাচল করত। ডেঙ্গাপাড়া কৃষ্টাখালী বাজারের পাশে ছিল কৃষ্টাখালী খাল। সে খাল দিয়ে চট্টগ্রামের কর্নফুলী নদী হয়ে বোয়ালখালী খাল, চান খালী খাল, ও কৃষ্টাখালী খাল হয়ে বিভিন্ন মালামাল এই বাজারে আনা-নেয়া করত। সপ্তাহে দুইদিন খালের পাড়ে হাট বসত। দুরদুরান্ত থেকে আসা লোকজন সে জগৎ মহাজনের প্রান্তশালায় বসে পানি পান সহ খাওয়া দাওয়া করতেন। এবং প্রান্তশালার দুথতলায় বিশ্রাম নেয়ার ও ব্যবস্থা ছিল। কালের বিবর্তনে তাদের জমিদারি জায়গা সম্পত্তি হাতছাড়া হয়ে যায়। 

আরো জানা যায়, ১৯৪৬ সালে জগৎ চন্দ্র মহাজন মারা যান। তার তিন পুত্র ও দুই কন্যা সন্তান ছিল। তারা হচ্ছেন সুরেশ চন্দ্র চৌধুরী, অনিল চন্দ্র চৌধুরী ও সুনিল চন্দ্র চৌধুরী, কন্যা স্মৃতি কনা দাশ ও সুপ্রিয়া চৌধুরী। বর্তমানে তার ৩য় সন্তান সুনিল চন্দ্র চৌধুরী জিবিত রয়েছেন। সে চট্টগ্রামে মনোহরি দোকানে ব্যবসায় নিয়োজিত আছেন। বার্ধক্যজনিত কারণে সে ব্যবসা পরিচালনা করতে না পারায় তার দুই সন্তান  সুবাশিষ চৌধুরী লিটন ও দেবাশিষ চৌধুরী টিটু শহরে থেকে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। পটিয়া ডেঙ্গাপাড়া গ্রামে জগৎ চন্দ্র মহাজনের পুত্র সুনিল চন্দ্র চৌধুরীর স্ত্রী বসাবস কওে থাকেন। সেখানে জরাজির্ণ একটি মাটির ঘরে মহাজনের পরিবরের অন্যান্য বংশধররা বসবাস করে আসছেন। 

সুনিল চন্দ্র চৌধুরী জানান, ‘তার পিতা একজন তৎকালীন জমিদার ছিলেন। এলাকায় অনেক সমাজ সেবা মূলক প্রতিষ্ঠান তিনি করেছেন। বর্তমানে তাদের আর্থিক অবস্থা ভাল না থাকায় তার পিতার নির্মিত ঐতিহ্যবাহী ডেঙ্গাপাড়ার প্রান্তশালাটি জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। তার পিতার এই স্মৃতি ইতিহাস ঐতিহ্যের সাক্ষি হিসেবে সংরক্ষন করার জন্য এলাকার এমপি, চেয়ারম্যান, সমাজসেবক সহ সকলের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।’ 

এ ব্যাপারে স্থানীয় আবৃতি শিল্পি গৌতম  চৌধুরী ও সমাজকর্মী মাষ্টার প্রবোধ চন্দ্র রায় বলেন, ‘জগৎ চন্দ্র মহাজনের এই প্রান্তশালাটি ইতিহাস ঐতিহ্য ও বাঙ্গালি সংস্কৃতির একটি অংশ। এটি সংস্কার করে সমাজসেবার অনন্য অবদান হিসেবে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য এটি সংস্কার করা প্রয়োজন। এ ব্যাপারে এলাকার সমাজসেবক বিত্তশালীরা এগিয়ে আসবেন বলে তাঁরা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।’

এসএ/