‘লালে লাল, বাবা শাহজালাল’


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


‘লালে লাল, বাবা শাহজালাল’

‘নারায়ে তাকবির-আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’, ‘শাহজালাল বাবা কী জয়’, ‘৩৬০ আউলিয়া কী জয়’, ‘লালে লাল বাবা শাহজালাল’, এসব আবেগপ্রবন শ্লোগান দিতে দিতে ৭০০ বছরের বেশী সময়ের ঐতিহ্য অনুযায়ী হাজারো বক্ত সংগ্রহ করেছেন ওলিকুল শিরোমনী হজরত শাহজালাল (রহ.) এর আসন্ন ওরুসের শিরনী তৈরি করার জন্য লাকড়ি।

শনিবার (২৮ মে) দরগাহ মসজিদে জোহরের নামাজ শেষে নাকাড়া বেজে উঠার সাথে সাথেই হাজারো ভক্ত নাঙ্গা তলোয়ার, দা-কুড়াল, লাল-ঝাণ্ডা নিয়ে দরগাহ থেকে চার কিলোমিটার দূরে থাকা লাক্কাতুরা চাবাগানের টিলায় ছুটের লাকড়ি সংগ্রহে। সেখানে মিলাদ ও দোয়া অনুষ্ঠানের পর জঙ্গলে থাকা গাছের ডালপালা নিয়ে দরগাহ শরিফে ফিরে আসেন তারা।

জানা যায়, প্রতি বছর ২৬ শাওয়াল শাহজালাল (রহ.) এর মাজারে চলে ওরস। ৭০০ বছরের অধিক সময় ধরে চলা এ ওরস ‘শাহজালালের লাকড়ি তোড়া উৎসব’ নামেও পরিচিত।

দরগাহর সরেকওম মোতাওয়ালি ফতেহ উল্লাহ আল আমান বলেন, শাহজালাল (রহ.) এর জীবদ্দশায় এভাবে লাকড়ি সংগ্রহ করে রান্না করা হতো। সেই ঐতিহ্য রক্ষা করে ৭০০ বছর ধরে ওরসের তিন সপ্তাহ আগে লাকড়ি তোড়া সম্পন্ন হয়ে আসছে। এসব সংগ্রহ করা লাকড়ি নির্দিষ্ট স্থানে জমা করে রাখা হয়। আর এসব লাকড়ি দিয়েই ওরসে শিন্নি রান্না করা হয়। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমে যাওয়ায় এবার ঝাকঝমকভাবে দল বেঁধে হাজার হাজার মানুষ এতে অংশ নেয়। যদিও এর আগে ২০২০ ও ২০২১ সালে করোনার কারণে স্বল্প পরিসরে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে উদযাপন করা হয়েছিল লাকড়ি তোড়া উৎসব।

শাহজালাল রহ. এর জীবনী ও ইতিহাসের বরাত দিয়ে ঐতিহ্য ও পরিবেশ সংরক্ষণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি আবদুল করিম কিম বলেন, প্রায় ৭০০ বছর আগে ২৬ শাওয়াল এক কাঠুরে আসেন হজরত শাহজালাল (রহ.) এর কাছে। তিনি জানান, ঘরে তার বিবাহযোগ্য পাঁচ মেয়ে রয়েছে। তিনি কাঠুরে নিচু জাতের হওয়ায় কেউই তার মেয়েদের বিয়ে করতে চাইছে না।

এ কথা শুনে শাহজালাল (রহ.) কাঠুরেকে সিলেট বিজয় দিবসে দরগায় আসার কথা বলেন। পরে সিলেট বিজয় দিবসে সঙ্গী আউলিয়া ও ভক্তরা এলে শাহজালাল (রহ.) সবাইকে নিয়ে লাক্কাতুরা টিলায় গিয়ে কাঠ সংগ্রহ করেন। ফিরে এসে তিনি উপস্থিত ভক্তদের কাছে জানতে চান তারা আজ কী কাজ করেছেন। উত্তরে সবাই বলেন তারা কাঠুরিয়ার কাজ করেছেন।

এরপর শাহজালাল সবাইকে কাঠুরের দুঃখের কথা বললে উপস্থিত অনেক ভক্ত কাঠুরের মেয়েদের বিয়ে করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। সেখান থেকে কাঠুরে তার মেয়েদের জন্য বর পছন্দ করেন। এ ঘটনার পর থেকে সাম্য ও শ্রেণিবৈষম্যবিরোধী দিবস হিসেবেও দিনটি পালন করেন ভক্তরা।

এসএ/