রেমিট্যান্সে বইছে সুবাতাস
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২
চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরজুড়ে প্রবাসী আয়ে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হলেও অর্থবছরের শেষ দিকে নতুন আশা জাগাচ্ছে রেমিট্যান্স। চলতি মে মাসের ২৬ দিনেই প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন ১৬৫ কোটি ৫০ লাখ (১.৬৫ বিলিয়ন) ডলার। বর্তমান প্রতি ডলার ৮৯ টাকা বিনিময় হার হিসেবে টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ১৪ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা। মাস শেষ হতে এখনো ৫দিন বাকি। ঈদুল আজহা সামনে রেখে মাসের অবশিষ্ট দিনগুলোতে প্রবাসীরা আরও বেশি বেশি টাকা পাঠাবেন। ফলে রেমিট্যান্স ২ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে পৌঁছবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক বিপর্যয়সহ নানা কারণে দেশে ডলারের দাম বেড়ে গেছে। চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধিতে ভাটা পড়ে। এসব ছাপিয়ে চলতি মাসে প্রবাসী আয় বাড়ার ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন অর্থনীতিবিদরা। বাস্তবেও হয়েছে তাই। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রেমিট্যান্সে প্রণোদনা ২ শতাংশ থেকে ২.৫ শতাংশ করায় বৈধ চ্যানেলে বেশি বেশি টাকা আসছে। এছাড়া ঈদুল আজহা সামনে রেখে প্রবাসীরা দেশে বেশি বেশি টাকা পাঠাচ্ছেন। ফলে রেমিট্যান্সে জৌলুস দেখা যাচ্ছে।
এদিকে, রেমিট্যান্সের এই উল্লম্ফনে বেশ খুশি ব্যাংকসহ অর্থ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, মাসের বাকি ৫ দিনে এই হারে রেমিট্যান্স এলে গত এপ্রিল মাসের মতো মে মাসেও প্রবাসী আয় ২ বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডলারে গিয়ে পৌঁছবে।
সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরজুড়ে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধিতে থাকা প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সে নতুন অর্থবছরে ১৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে। আগামী ৩০ জুন চলতি ২০২১-২২ অর্থবছর শেষ হবে। ১ জুলাই থেকে শুরু হবে ২০২২-২৩ নতুন অর্থবছর। ওই অর্থবছরে রেমিট্যান্স বাড়ার কারণ হিসেবে মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘করোনা-পরবর্তী সময়ে দেশ থেকে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ শ্রমিক নতুন করে বিদেশে যাওয়ায় তাদের কাছ থেকে বাড়তি এই পরিমাণ রেমিট্যান্স পাওয়া যাবে।’
করোনা মহামারির মধ্যেও সবাইকে অবাক করে দিয়ে ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, যা ছিল আগের অর্থবছরের (২০১৯-২০) চেয়ে ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই এক বছর বা অর্থবছরে এতো বেশি রেমিট্যান্স দেশে আসেনি। কিন্তু চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের শুরু থেকেই অর্থনীতির এই সূচকে ভাটার টান লক্ষ্য করা যায়। প্রতি মাসেই কমতে থাকে; তবে গত তিন মাস ধরে সুবাতাস বইছে। মার্চ মাসে ১৮৬ কোটি ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এপ্রিল মাসে পাঠান ২০১ কোটি ডলার। একক মাসের হিসাবে যা ছিল ১১ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। তথ্য বলছে, চলতি মে মাসেও সেই ধারা অব্যাহত আছে। মাস শেষে ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স আসবে।
গত ৩ মে দেশে রোজার ঈদ উদযাপিত হয়েছে। ঈদকে সামনে রেখে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। প্রতি বছরই দুই ঈদকে সামনে রেখে প্রয়োজনীয় কেনাকাটা সারতে পরিবার-পরিজনের কাছে বেশি অর্থ পাঠান প্রবাসীরা। ৯ অথবা ১০ জুলাই দেশে কোরবানির ঈদ উদযাপিত হবে। সেই উৎসবকে কেন্দ্র করেও দেশে বেশি রেমিট্যান্স আসবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা।
অতীতে দেখা গেছে, দুই ঈদের পরের এক-দুই মাস রেমিট্যান্স কিছুটা কম আসে। কিন্তু এবার উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে। টানা পাঁচ মাস কমার পর ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে বেড়েছিল অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক। কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে ফের হোঁচট খায়। ওই মাসে ১৪৯ কোটি ৬০ লাখ ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। মার্চ মাসে এসেছিল ১৮৬ কোটি ডলার। সবশেষ এপ্রিল মাসে এসেছে ২০০ কোটি ৯৫ লাখ ডলার; যা গত বছরের এপ্রিল মাসের প্রায় সমান। ২০২১ সালের এপ্রিলে এসেছিল ২০৬ কোটি ৭৬ লাখ ডলার।
ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে এসেছিল যথাক্রমে ১৬৩ কোটি ৬ লাখ ও ১৭০ কোটি ৪৫ লাখ ডলার। ফেব্রুয়ারি মাস ২৮ দিন হওয়ায় ওই মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছিল বলে জানায় ব্যাংকগুলো। তবে মার্চ মাসে এই সূচকে ফের গতি ফেরে; ওই মাসে ফেব্রুয়ারি মাসের চেয়ে ২৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেশি রেমিট্যান্স দেশে আসে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘প্রণোদনা বেড়েছে। ডলারের দামও বেশি। ঈদ উৎসবকে সামনে রেখে এপ্রিল মাসে পরিবার-পরিজনের কাছে বেশি বেশি টাকা পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। সামনে কোরবানির ঈদ আছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর অর্থনীতি চাঙা হওয়ায় ওই দেশগুলো থেকে বেশি রেমিট্যান্স আসবে। সবকিছু মিলিয়ে আগামী দিনগুলোয় রেমিট্যান্সের এই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকবে।
এসএ/