অপহরণের তিন মাস পর শিশু উদ্ধার, গ্রেফতার ২


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


অপহরণের তিন মাস পর শিশু উদ্ধার, গ্রেফতার ২

সাভারের আশুলিয়ায় অপহরণের তিন মাস পর দেড় বছরের শিশুকে উদ্ধার ও দুই অপহরণকারীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব-৪)। 

সোমবার (৩০ মে) রংপুর শহরের বিভিন্নস্থানে অভিযান চালিয়ে অপহরণকারী মো. রাশেদুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্য মতে, গাজীপুরের একটি বাসা থেকে রোকসানাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মঙ্গলবার (৩১ মে) র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‍্যাব-৪ এর অধিনায়ক ডিআইজি মো. মোজাম্মেল হক।

সংবাদ সম্মেলনে ডিআইজি মো. মোজাম্মেল হক জানান,গত (৩১ মার্চ) বৃহস্পতিবার আনুমানিক সকাল ১০ টার সময় ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানাধীন শিমুলিয়ার টেঙ্গুরী এলাকা থেকে দেড় বছরের শিশু আঁখি’কে এক অজ্ঞাত পরিচয়ে যুবক অপহরণ করে। শিশুটি টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ী থানার পাইক্কা গ্রামের সাদ্দাম হোসেনের মেয়ে। সাদ্দাম হোসেন পেশায় রাজমিস্ত্রি ও তাঁর স্ত্রী মিরা আক্তার পোশাক শ্রমিক। তাঁরা আশুলিয়ার শিমুলিয়া ইউনিয়নের টেঙ্গুরী এলাকায় জনৈক আলী হোসেনের বাড়িতে ভাড়া থাকেন। 

এজাহারমতে অপহরণকারী অজ্ঞাত সেই যুবক ঘটনার কয়েকদিন আগে আলী হোসেনের বাড়িতে বাসা ভাড়া নিতে আসে। তখন বাড়ির ম্যানেজার নেই বলে সে কথাবার্তা বলে চলে যায়। অপহরণকারী পুনরায় ঘটনার দিন বাসা ভাড়া নিতে আসে। সেসময় গেটের বাইরে খোলা যায়গায় মিরা ও সাদ্দাম দম্পতির সন্তান আঁখি এবং মিরাজ খেলাধুলা করছিল। অপহরণকারী কথাবার্তার একপর্যায়ে ভুক্তভোগী আঁখির ভাই মিরাজ (৫)’কে কিছু টাকা দিয়ে কৌশলে দোকানে চকোলেট কেনার জন্য পাঠায়। সেই ফাকে অজ্ঞাতনামা যুবক দোকানের আড়ালে থাকা আঁখিকে কোলে নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। 

ঘটনার পরদিন (১ এপ্রিল) শিশুটির দাদা বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় একটি শিশু অপহরণ মামলা দায়ের করেন। উক্ত ঘটনাটি প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিকস্ মিডিয়াসহ এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। যার ফলশ্রুতিতে র‍্যাব -৪ অপহৃত শিশুটিকে উদ্ধার ও অপহরণকারীদের গ্রেফতারে পুলিশের পাশাপাশি ছায়া তদন্ত শুরু করে। 

এরই ধারাবাহিকতায় র‍্যাব -৪ এর গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায় যে, অপহরণকারী রংপুর জেলায় আত্মগোপনে রয়েছে। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে র‍্যাব -৪ এর একটি আভিযানিক দল র‍্যাব -১৩ এর সহযোগিতায় (গত ৩০ মে) রাতে রংপুর শহরের বিভিন্ন স্থানে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করে অপহরণকারী মোঃ রাশেদুল ইসলাম (৩০), জেলা-রংপুর’কে গ্রেফতার করতে সমর্থ হয়। পরবর্তীতে জিজ্ঞাসাবাদে অপহরণকারীর দেওয়া তথ্যমতে গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর থানার রতনপুর এলাকার একটি বাসা হতে জনৈক রোকসানা (৩৫), জেলা-রংপুর এর হেফাজত থেকে দেড় বছরের অপহৃত শিশু আঁখি’কে উদ্ধার করা হয়। 

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, অপহরণকারী মোঃ রাশেদুল ইসলাম (৩০) বিগত ০২ বছর যাবৎ আশুলিয়া থানাধীন জিরানী বাজার কলেজ রোড এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতো। সে পেশায় একজন রাজমিস্ত্রী এবং বিবাহিত। 

অপহরণকারীর স্ত্রী নুরজাহান ও অপহৃত শিশুটির মা মিরা আক্তার আশুলিয়ায় একই গামেন্টসে চাকরি করতো। যার সুবাদে দুজনের মধ্যে সু-সম্পর্ক ছিলো। একপর্যায়ে অপহরণকারীর স্ত্রী পরকিয়ায় আসক্ত হয়ে তাদের ০৭ বছরের শিশু সন্তানকে রেখে প্রেমিকের সাথে পালিয়ে যায়। 

মাতৃহারা ০৭ বছরের শিশুটিকে নিয়ে আসামী রাশেদ বিপদে পরে যায়। রাশেদের স্ত্রী কার সাথে গেছে এবং কোথায় আছে এ বিষয়টি অপহৃত শিশু ভিকটিম আঁখি আক্তার এর মা মিরা আক্তার জানে মর্মে অপহরণকারী রাশেদ এর সন্দেহ হয়। সন্দেহের বশবর্তী হয়ে বেশকয়েকদিন ভিকটিমের মা মিরা আক্তার এর নিকট অপহরণকারীর স্ত্রীর বর্তমান ঠিকানা জানার জন্য একাধিকবার জিজ্ঞেস করে কিন্তু প্রতিবারে মিরা আক্তার জানায় যে, রাশেদের স্ত্রীর বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে সে কিছু জানে না।

আসামীর বক্তব্য অনুযায়ী তার দৃঢ় বিশ্বাস মিরা আক্তার তার স্ত্রীর অবস্থান সম্পর্কে জানে কিন্তু ইচ্ছে করে বলছে না। আসামী রাশেদ তার স্ত্রীর সঠিক অবস্থান জানার উদ্দেশ্যে সাদ্দাম ও মিরা দম্পতির দেড় বছরের শিশু আঁখি’কে অপহরণ করার পরিকল্পনা করে। পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক সাদ্দাম ও মিরা দম্পতি কাজে চলে যাওয়ার পরে গত (৩১ মার্চ) আনুমানিক সকাল ০৯.৪০ মিনিটের সময় অপহরণকারী বাসা ভাড়া নেয়ার কৌশলে অপহৃত শিশু আঁখি আক্তারের নানীকে বাসা ভাড়ার বিষয়ে কথা বলার এক পর্যায়ে কৌশলে অপহৃত শিশুর বড় ভাই মিরাজ (৫) কে ১০/- টাকা দিয়ে চকলেট খাওয়ার জন্য মুদি দোকানে পাঠায়। 

পরবর্তীতে অপহরণকারী উক্ত দোকানের পাশ থেকে সুযোগ বুঝে পরিকল্পিতভাবে ভিকটিম শিশু আঁখি আক্তারকে কোলে নিয়ে পালিয়ে যায়। অপহৃত শিশুটির অবস্থান জানার জন্য পুলিশ, র‍্যাব সহ সকল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সর্বাত্মক তৎপরতা চালাতে থাকে কিন্তু আসামী অজ্ঞাত হওয়ায় ভিকটিম শিশুটিকে উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছিলনা। ঘটনার এক সপ্তাহ পরে অপহরণকারী রাশেদ ভিকটিম শিশুটির পিতা-মাতাকে ফোন করে জানায় যে, শিশুটি তার হেফাজতে আছে এবং তার স্ত্রীর সঠিক ঠিকানা জানালে শিশুটিকে ফেরত দেওয়া হবে। 

প্রকৃতপক্ষে অপহৃত শিশুটির পিতা-মাতা অপহরণকারীর স্ত্রীর ঠিকানা জানতনা কাজেই সঠিক ঠিকানা দিতে পারেনি। ধূর্ত অপহরণকারী একপর্যায়ে লোভের বশবর্তী হয়ে অপহৃত ভিকটিম আঁখির বাবা-মার কাছে ৩০,০০০/- টাকা মুক্তিপন দাবি করে এবং সেই মোতাবেক অপহরণকারীর বিকাশ নাম্বারে ২০,০০০/- টাকা পাঠানো হয় কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তার অবস্থান জেনে যাবে সেই ভয়ে আসামী রাশেদ মুক্তিপনের টাকা উত্তোলন না করে মোবাইল বন্ধ করে দেয় এবং গ্রেফতারের পূর্ব পর্যন্ত সে কোন মোবাইল ব্যবহার করেনি। 

আসামী রাশেদের বক্তব্য অনুযায়ী ঘটনার দিনই অপহৃত শিশু আঁখিকে গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর থানার রতনপুর এলাকায় তার ফুপু আসামী রোকসানা’র কাছে নিয়ে গিয়ে নিজের মেয়ে পরিচয় দিয়ে ফুপুর কাছে কিছুদিন রাখতে অনুরোধ করে এবং সে নিজে গ্রামের বাড়ী রংপুরে গিয়ে আত্মগোপনে চলে যায়। আসামী রোকসানা’র নিজের কোন কন্যা সন্তান না থাকায় সযত্নে মাতৃ আদরে শিশু আঁখিকে লালন-পালন করতে থাকে। উদ্ধার হওয়ার আগ পর্যন্ত শিশু আঁখি আসামী রাশেদের ফুপু রোকসানা’র হেফাজতে ছিল।

উক্ত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। অদূর ভবিষ্যতেও এইরুপ শিশু অপহরণকারী চক্রের বিরুদ্ধে র‍্যাব-৪ এর জোড়ালো অভিযান অব্যাহত থাকবে।

উল্লেখ্য, এলিট ফোর্স হিসেবে র‍্যাব আত্মপ্রকাশের সূচনালগ্ন থেকেই আইনের শাসন সমুন্নত রেখে দেশের সকল নাগরিকের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে অপরাধ চিহ্নিতকরণ, প্রতিরোধ, শান্তি ও জনশৃংখলা রক্ষায় কাজ করে আসছে। 

জঙ্গীবাদ, খুন, ধর্ষণ, নাশকতা এবং অন্যান্য অপরাধের পাশাপাশি মনুষ্য অপরহরণকারী চক্রের সাথে সম্পৃক্ত অপরাধীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য র‍্যাব  সদা তৎপর। 

র‍্যাব -৪ বিগত বছরগুলোতে সাফল্যের সাথে অপহরণ বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে আসছে। 

ওআ/