৭৫ এর হাতিয়ার বলতে কোন খারাপ কিছুকে বোঝানো হয়নি: ফখরুল
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, “৭৫ এর হাতিয়ার বলতে কোন খারাপ কিছু, বা কোন ব্যক্তিকে হত্যা করার কথা মিন করা হয়নি। ৭৫ এর হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার এই স্লোগানটা আমরা দেইনি। ৭৫ এর হাতিয়ার বলতে কি মিন করা হয়, ১৯৭৫ সালের ৭ই নভেম্বর একটা ভয়ংকর ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য সিপাহী জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে যে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে রাষ্ট্রিয় পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়, তখনকার হাতিয়ারের কথাকেই মিন করা হয়। যদিও এ কথাগুলো আমরা বলিনি। আমাদের দলের কথা নয়। যদি কেউ বলে থাকে, তারা কিভাবে বলেছে আমরা জানিনা।”
রবিবার (৫ জুন) ঠাকুরগাঁও প্রেসক্লাবের দ্বিতল ভবনের আধুনিক ভিআইপি হলরুমে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “দেশের মানুষের ভোটের অধিকার নেই। এখানে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। সাংবাদিকদের স্বাধীনতা নেই। এখানে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা বিনষ্ট হয়েছে। একের পর এক যে আইনগুলো তৈরী করা হচ্ছে সেখানে মুক্ত স্বাধীনতার ক্ষেত্রগুলোকে আরও সংকুচিত করা হচ্ছে। কুমিল্লায় বিএনপির এক নেতানের নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দেওয়া হয়েছে। কারণ হচ্ছে সেখানকার নির্বাচনে তিনি কথা বলেছিলেন। ডিজিটাল সিকিউরিটি এক্ট এর কারণ ও উদ্দেশ্য টা কি? কারণটা কি? এমন যদি হয়। মানুষকে প্রটেকশন দেওয়া কিন্তু হচ্ছে এর উল্টোটা। এটার ফলে সাধারণ মানুষকে কথা বলার কারনে, তার মতামত প্রকাশ করার কারনে এই আইনের আওতায় এনে চরমভাবে হয়রানী করা হচ্ছে। সংবাদকর্মী আইনের ব্যাপারে তিনি বলেন, এই আইনটি আরও ভয়াবহ। আজকে ভয়াবহ ভাবে সংবাদপত্রের কন্ঠ, সাংবাদিকদের কন্ঠ, মুক্ত বাক স্বাধীনতা পুরোপুরীভাবে ক্লোজ হয়ে গেছে। এটা আমরা চাই না। আমরা চেয়েছিলাম একটা মুক্ত দেশ, মুক্ত গণতান্ত্রিক দেশ। যেখানে মানুষের স্বাধীনতা থাকবে। একদিকে যেমন স্বাধীনভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা হবে। সকল মতামতের ভিত্তিতে চলবে।”
তিনি আরও বলেন, “পদ্মা সেতু তো কারও পৈত্রিক ব্যাপার না। এটা রাষ্ট্রীয় প্রচেষ্টায় হচ্ছে। আরও একটি বিষয় আপনাদের জানিয়ে দেই। পদ্মা সতেুর প্রথম ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছিলেন কিন্তু দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। একদিকে না ২ দিকে। সেকথা কিন্তু কেউ উচ্চারনও করে না। যমুনা সেতু যখন তৈরী হয় একই অবস্থা ছিল। যারা শুরুটা করলেন তাদের বাদ দিয়ে আরেকজনের নামে করা হলো। এখানে যে ক্ষমতায় যায় সে সবকিছু দখল করে নিতে চায়। এখনও ঘটনাগুলো একইভাবে ঘটছে। এখনও পদ্মা সেতু নিয়ে বিভিন্ন রকম কথা বলে দেশ ও জাতিকে বিভক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। সংকটটা পদ্মা সেতু নয়। সংকটটা আমার অধিকার। ভোটের অধিকার। সংকট হচ্ছে আমার বিচার না পাওয়া। সংকটটা হচ্ছে আমাকে অন্যায়ভাবে মিথ্যা মামলায় ফাসিয়ে দেওয়া। এ বিষয়গুলোতে আমাদের সংকট। এগুলো নিয়ে আমরা সাধারণ মানুষকদের একত্রিত করার চেষ্টা করছি। দেশকে, জনগণকে, একত্রিত করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। বিএনপি এত কিছু করার পরও বিরত করা যাচ্ছে না। বর্তমানেও বিএনপি ঐক্য তৈরী করে যাচ্ছে। মানুষের যে ভোটের অধিকার সে নিয়ে কেউ কথা বলছে না। আমরা যদি দেশ ও জাতিকে রক্ষা করতে চাই, স্বাধীনতাকে রক্ষা করতে চাই, আমাদের ভবিষ্যই প্রজন্মকে যদি সত্যিকার অর্থে স্বাধীন, মুক্ত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ উপহার দিতে চাই তাহলে এ কথাগুলো বলতে হবে। আর যারা এগুলো করছে তাদের প্রতিহত করতে হবে।”
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, “আমরা যেটা লক্ষ্য করেছি প্রত্যেক বছর একটা বাজেট ভাবনা দিতাম। এখন আমরা দেখছি এটা বেকার। আর বাজেট তো সব সময় গরীবকে আরও গরীব ও বড়লোকদের আরও বড় করার বাজেট হয়। কি করে আপনাদের দ্রব্যের উপরে ভ্যাট বসানো হবে। এ দেশের ৪২ শতাংশ মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে বাস করে। চিন্তা করতে পারা যায়, তারা যে কথাগুলো বলে। তারা বলে এদেশ ইউরোরেপের দেশে রুপান্তর হবে। আমি তাদের বলবো সেখানে থেকে নেমে আসেন। সাধারণ মানুষের কাছে যান। কিভাবে একজন রিক্সা চালক, শ্রমিক বাস করছে। প্রকৃতপক্ষে মানুষের আর্থিক অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। আমরা পরিত্রান চাই। আমরা সত্যিকারের অর্থে দেশে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য সরকার প্রতিষ্ঠা হোক সেটাই আমাদের কাম্য। বর্তমানে যে সরকার আছে তারা জনগণের প্রতিনিধিত্ত করে না। জনগনের সমস্যাগুলো সমাধান তারা করে না। চালের দাম বেড়েছে তো কি হয়েছে। এক সময় আইয়ুব খান ভুট্টা খেতে বলেছিল। এই সরকার হয়তো এখনও বলেনি তবে বলবে আমরা তো এখন ভুট্টা অনেক বেশি পরিমানে উৎপাদন করছি। তাহলে চালের পরিবর্তে ভুট্টা খান।”
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা তৈমুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমীন, সহ সভাপতি সুলতানুল ফেরদৌস চৌধুরী, অর্থ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম শরিফ, জেলা যুবদলের সভাপতি চৌধুরী মাহেবুল্লাহ আবু নুর, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মো: কায়েসসহ বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠের নেতৃবৃন্দ।
এসএ/