পোড়া লাশ হয়ে বাড়ি যাবে ৯ অগ্নিযোদ্ধা


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


পোড়া লাশ হয়ে বাড়ি যাবে ৯ অগ্নিযোদ্ধা

সদ্য জন্ম নেওয়া সন্তানকে দেখতে যাবে মনিরুজ্জামান। এ জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে ছুটির আবেদন করেছিলেন তিনি। ক’দিন পর নিজ সন্তানের সাথে সেই ছুটি উপভোগ করতে যাওয়ার কথা তার। কিন্তু সীতাকুণ্ড বিএম ডিপোর বিস্ফোরণ তাকে শেষ ছুটিই দিয়ে দিল! সন্তানের চেহারা দেখতে যাওয়ার বদলে এখন ফায়ার সার্ভিস কর্মী মনিরুজ্জামান বাড়ি যাচ্ছে পোড়া লাশ হয়ে।

মৃত্যুর আগে ফোনে মামা মীর হোসেনকে মনিরুজ্জামান বলেছিলেন, ‍“আমার কলিজার টুকরা মেয়েটার মুখটাও দেখা হলোনা এখনো। আমি মরে যাচ্ছি। আমার শরীর পুড়ে গেছে মামা। তুমি ওদের দেখে রাখিও।”

বিএম ডিপোতে অগ্নিদগ্ধ সকলের প্রাণ বাঁচাতে গিয়ে যে ৯ জন ফায়ার সার্ভিস কর্মী নিজেদের প্রাণই বিসর্জন দিলো তাদের একজন মনিরুজ্জামান। তার বাড়ি কুমিল্লা জেলায়। তিনি কুমিরা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের নার্সিং আ্যাটেনডেন্ট পদে কর্মরত ছিলেন।

নিহত ও নিখোঁজ ১২ জনের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৩ জনের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। এ ৩ জনের মৃতদেহ সম্পূর্ণ পুড়ে যাওয়ায় তাদের পরিচয় নিশ্চিত করা যাচ্ছেনা। এছাড়াও এই বাহিনীর আরও একজন কর্মী নিখোঁজ রয়েছেন। ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়, নগরীর বিভিন্ন হাসপাতালে তাদের ১৫ কর্মীকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

নিহত ফায়ার ফাইটার
মোঃ রানা মিয়া, ফায়ারফাইটার, কুমিরা ফায়ার স্টেশন, নিজ জেলা-মানিকগঞ্জ। মনিরুজ্জামান, নার্সিং অ্যাটেনডেন্ট, কুমিরা ফায়ার স্টেশন, নিজ জেলা-কুমিল্লা। আলাউদ্দিন, ফায়ারফাইটার, কুমিরা ফায়ার স্টেশন, নিজ জেলা-নোয়াখালী। মোঃ শাকিল তরফদার, কুমিরা ফায়ার স্টেশন । মিঠু দেওয়ান, লিডার, কুমিরা ফায়ার স্টেশন, নিজ জেলা-রাঙ্গামাটি। নিপন চাকমা, লিডার, সীতাকুণ্ড ফায়ার স্টেশন, নিজ জেলা-রাঙ্গামাটি। রমজানুল ইসলাম, ফায়ারফাইটার, সীতাকুণ্ড ফায়ার স্টেশন, নিজ জেলা-শেরপুর। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, ফায়ারফাইটার, সীতাকুণ্ড ফায়ার স্টেশন, নিজ জেলা-ফেনী।

নিখোঁজ ফায়ার ফাইটার
মোঃ রবিউল ইসলাম, ফায়ারফাইটার, সীতাকুণ্ড ফায়ার স্টেশন, নিজ জেলা-নওগাঁ। ফরিদুজ্জামান, ফায়ারফাইটার, সীতাকুণ্ড ফায়ার স্টেশন, নিজ জেলা-রংপুর। মোঃ ইমরান হোসেন মজুমদার, লিডার, কুমিরা ফায়ার স্টেশন, নিজ জেলা-চাঁদপুর । শফিউল ইসলাম, ফায়ারফাইটার, কুমিরা ফায়ার স্টেশন, নিজ জেলা-সিরাজগঞ্জ।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মিডিয়া শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহজাহান সিকদার জনবাণীকে জানান, “চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে কন্টেইইনার ডিপোতে আগুনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের ৯ কর্মী নিহত হওয়ার খবর পেয়েছি। মরদেহগুলো পুড়ে যাওয়ায় শনাক্ত করা যাচ্ছে না। এ ঘটনায় এখনো একজন কর্মী নিখোঁজ এবং ১৫ জন গুরুতর আহত অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।”

তিনি আরো জানান, “১২ জন নিখোঁজ আছেন। ডেডবডি পাওয়া গেছে ৯ জনের। এর মধ্যে পরিচয় শনাক্ত করা গেছে ৮ জনের। বাকি নিখোঁজ ৪ জনের মধ্যে উদ্ধারকৃত ডেডবডি কার তা শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।”

প্রসঙ্গত, শনিবার (৪ জুন) রাত সাড়ে ৯টার দিকে সীতাকু-ের ভাটিয়ারী এলাকার বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিসের ১৫টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। পরবর্তীতে ইউনিট আরও বাড়ানো হয়। ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি ইউনিটের ১৮৩ কর্মী আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছিলেন।

এছাড়া নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর ও কুমিল্লাসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকেও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আগুন নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজ করেন।

এসএ/