রংপুরে মাল্টা-কমলা চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকের


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


রংপুরে মাল্টা-কমলা চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকের

রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলায় মাল্টা-কমলার চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের মাঝে। লাভজনক হওয়ার কারণে দেশের অন্যান্য জেলার মতোই এ জেলার কৃষকরা দিন দিন মাল্টা-কমলার চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।

তারাগঞ্জের স্থানীয় এবং ছোট-বড় পাইকারি বাজারগুলোতে দেশি ফলের সমাহার। এর মাঝেই আরেকটি গাঢ় সবুজ বর্ণের ফল গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে। এটি দেশীয় জাতের মাল্টা যা বারি মাল্টা-১ নামে পরিচিত। এই ফলের নিচের দিকে গোলাকার পয়সা সদৃশ একটি সুস্পষ্ট চিহ্ন থাকে বিধায় একে পয়সা মাল্টা নামেও অভিহিত করা হয়।

বিগত কয়েকদিনে তারাগঞ্জের ৫টি ইউনিয়ন ঘুরে প্রায় সবত্রই এই জাতের মাল্টা বাগান চোখে পড়েছে। কিছু কিছু বাগানে এবছর ফলও ধরেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় মাল্টা চাষ ২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো লেবু জাতীয় ফসলের সম্প্রসারণ, ব্যবস্থাপনা ও উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের আওতায় কিছু আগ্রহী কৃষকদেরকে বারি মাল্টা-১ জাতের মাল্টার প্রদর্শনী দেয়া হয়। পরের বছর মাল্টার পাশাপাশি দার্জিলিং, চাইনিজ ও বারোমাসি ভিয়েতনামী জাতের কমলার প্রদর্শনী দেয়া হয়। অনেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে মাল্টা চাষের দিকে ঝুঁকে পড়ছেন। এ যাবত এই প্রকল্পের আওতায় প্রায় ২৩ হেক্টর জমিতে মাল্টা ও কমলা চাষ সম্প্রসারণ হয়েছে। 

প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়িত বিভিন্ন বাগান ঘুরে দেখা যায়, ২০১৯ সালের স্থাপিত মাল্টা বাগানগুলোর সবকটিতেই প্রায় শতভাগ গাছে এ বছর ফল ধরেছে। কিসামত মেনানগরের ইলিয়াস কাঞ্চন, ইকরচালীর মাহবুবর রহমান, চড়কডাঙ্গার ফরতাজুল ইসলাম, রহিমাপুরের খানসাহেরপাড়ার হারুন-অর-রশিদ, ভীমপুরের হোসেন, কুর্শা মাস্টারপাড়ার আমজাদ হোসেনের বাগানে থোকায় থোকায় মাল্টা ধরেছে। আকার ভেদে প্রতিটি গাছে প্রায় ৩০-১০০টি ফল ধরেছে এছাড়াও এ বছর প্রথমবারের মতো কয়েকটি দার্জিলিং জাতের কমলা বাগানে কমলা ধরেছে।

সফল মাল্টা চাষি কৃষক এ উপজেলার ইকরচালী ইউনিয়নের মেনানগর গ্রামের মাহবুবর রহমান বজু জানান, ২০২১ সালে ১ একর বাগানে কয়েকটি গাছে প্রথমবারের মতো ১৫০ কেজি মাল্টা পেয়েছিলেন। এ বছর ব্যাপক ফলনের আশা করছেন। এর পাশাপাশি তিনি বারি মাল্টা-১ এর ৫০০০ এবং দার্জিলিং কমলার ১০০০ গ্রাফটিং চারা উৎপাদন করেছেন। যা থেকে তিনি সারা বছরব্যাপী বাড়তি আয়ের স্বপ্ন দেখছেন। এছাড়াও উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের রহিমাপুর খান সাহেব পাড়ার হারুন-অর-রশিদ গতবছর প্রায় ৫০ হাজার টাকার মাল্টা বিক্রি করেছেন। এ বছর দেড় লক্ষ টাকার ফল বিক্রির ব্যাপারে আশাবাদী।

কৃষি অফিসের পরামর্শে এবং সঠিক যত্ন ও পরিচর্যায় মাল্টাচাষে তারা সফল হয়েছেন। বাগানে দেশী মাল্টা ও কমলার এমন ফলন দেখে এলাকাবাসীও আশান্বিত হচ্ছেন এবং নিজেরা মাল্টা চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। 

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রাসেল সরকার জানান, আমাদের দেশে সাধারণত সেপ্টেম্বর মাসের দিকে দেশী ফল তেমন থাকে না এবং এসময়েই (সেপ্টেম্বর- অক্টোবর) মাল্টা পরিপক্ক হয় বিধায় মাল্টাচাষীরা এর মাধ্যমে লাভবান হতে পারেন এবং পাশাপাশি জনগণের পুষ্টির ঘাটতি পূরণে মাল্টা বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। মাল্টা নন-ক্লাইমেকটেরিক ফল বিধায় গাছ থেকে সংগ্রহ করার পর তা আর পাকে না, এজন্য অক্টোবর মাসে মাল্টা সবচেয়ে রসালো ও মিষ্টি হওয়ায় তিনি এ সময় মাল্টা বাজারজাতকরণের পরামর্শ দেন। 

উপজেলা কৃষি অফিসার ঊর্মি তাবাস্সুম বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে দেশীয় জাতের মাল্টা (বারি মাল্টা-১) ও কমলা চাষে নিরব বিপ্লব ঘটে যাচ্ছে। প্রকল্পের মাধ্যমে আগ্রহী ও উদ্যমী কৃষকদেরকে চারা, সার, বালাইনাশকসহ অন্যান্য উপকরণ সহায়তা এবং প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।

এছাড়াও নিয়মিত বাগান পরিদর্শনের মাধ্যমে কৃষককে যথাসময়ে সঠিক পরামর্শ প্রদানের ফলে মাল্টা ও কমলা চাষে সফলতা এসেছে। কৃষকদের সফলতা দেখে আগামী দিনে তরুণ উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে তারাগঞ্জ উপজেলায় বানিজ্যিক আকারে মাল্টা ও কমলা চাষ আরো সম্প্রসারিত হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এবছর রংপুর জেলার সবচেয়ে বড় প্রায় ৭ বিঘার মাল্টা ও কমলার মিশ্র বাগান তারাগঞ্জে দামোদরপুরে গড়ে উঠছে।

আর  এইচ/ওআ