টিকিট কেটে বাসে উঠে দেড় বছরে ১৫ ডাকাতি ও ধর্ষণ


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


টিকিট কেটে বাসে উঠে দেড় বছরে ১৫ ডাকাতি ও ধর্ষণ

সম্প্রতি ঢাকার আশুলিয়ায় হানিফ পরিবহন ও গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে স্টার লাইন পরিবহনের বাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ওই দুইটিসহ বিভিন্ন সময়ে দূরপাল্লার বাসে ডাকাতির সঙ্গে জড়িত আন্তঃজেলা ডাকাতচক্রের ১০ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। গ্রেফতারের সময় তারা ডাকাতি প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বলে জানিয়েছে র‌্যাব। এ সময় তাদের কাছ থেকে দেশি ও বিদেশি অস্ত্র জব্দ করা হয়।

রবিবার (৫ সেপ্টেম্বর) দুপুর ২টায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানায় র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

এর আগে শনিবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাতে সাভারের আশুলিয়া ও গাইবান্ধায় অভিযান চালিয়ে চক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-১ ও ১৩। এ সময় তাদের কাছ থেকে জব্দ করা হয় ডাকাতি ও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত পাঁচটি ছুরি, লুটকৃত একটি মোবাইল ফোন ও তাদের ব্যবহৃত পাঁচটি মোবাইল ফোন।
গ্রেফতাররা হলেন- নয়ন চন্দ্র রায় (২২), মো. রিয়াজুল ইসলাম ওরফে লালু (২২), মো. ওমর ফারুক (১৯), মো. ফিরোজ কবির (২০), আবু সাঈদ মোল্লা (২৫) ও শাকিল মিয়া (২৬)। তাদের প্রত্যেকের বাড়ি গাইবান্ধা জেলায়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা বাস চালককে হত্যা ও ডাকাতির কথা স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

সংবাদ সম্মেলনে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, গত ৩১ আগস্ট রাতে হানিফ পরিবহনের একটি নন এসি বাস (ঢাকা মেট্রো-গ ১৫-৩৮১০) রাজধানীর গাবতলী থেকে পঞ্চগড়ের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। গ্রেপ্তার ডাকাতদের মধ্যে তিনজন সাভার থেকে এবং বাকি তিনজন নবীনগর থেকে যাত্রীবেশে বাসটিতে ওঠেন। পরে বাসটি মধ্যরাতে গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী এলাকায় পৌঁছলে ডাকাতরা আসন ছেড়ে বাসটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে তারা চালককে ছুরিকাঘাত করে এবং ডাকাত সদস্য লালু চালকের আসনে বসে। এ সময় অন্য সদস্যরা যাত্রীদের থেকে লুটপাট করতে থাকে। লুটপাট শেষে হলে তারা ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের পীরগঞ্জে নেমে যায়। পরে বাসটির চালক মনজুর হোসেনকে (৫৫) নিকটস্থ পলাশবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় বাসটির সুপারভাইজার মো. পইমুল ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের নামে পীরগঞ্জ থানায় একটি মামলা করে।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা আরও জানান, গ্রেপ্তাররা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, তারা ১০-১২ জনের একটি সংঘবদ্ধ দল গত বছরের ডিসেম্বর থেকে উত্তরবঙ্গগামী বাসে ডাকাতি করে আসছিল। এখন পর্যন্ত তারা ৭-৮টি বাসে ডাকাতি করেছে। এর মধ্যে গত ১৮ ডিসেম্বর রত্ন স্পেশাল, গত ১ জানুয়ারি সটিবাড়ি স্পেশাল, ১২ জানুয়ারি সৈকত পরিবহন, ৮ মার্চ শ্যামলী পরিবহন, ৪ এপ্রিল জায়দা পরিবহন ও ১৯ আগস্ট ডিপজল পরিবহনে ডাকাতি করেছেন বলে স্বীকার করেছেন।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, তিনবছর আগে ঢাকা-দিনাজপুরগামী একটি বাসে ডাকাতির সময় ধর্ষণের মত ঘটনা ঘটায় বলে জানায়। সর্বশেষ তারা ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জগামী স্টারলাইন পরিবহনে ডাকাতি করেন। ডাকাতির জন্য তারা ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন দূরপাল্লার আন্তঃজেলা বাসগুলোকে টার্গেট করেন। এক্ষেত্রে চক্রটির কয়েকজন আগে থেকেই কাউন্টার থেকে টিকিট কেনার মাধ্যমে বাসে ওঠেন। অন্য সদস্যরা পরবর্তী বিভিন্ন কাউন্টার থেকে টার্গেটকৃত বাসে ওঠেন। এছাড়াও, যেসব দূরপাল্লার বাস কাউন্টার ব্যতীত যাত্রী ওঠায় তারা এসব বাসকে প্রাধান্য দিয়ে ডাকাতি করেন।

চক্রটি সাধারণত পলাশবাড়ী থেকে পীরগঞ্জ মহাসড়কের ৪৮ কিলোমিটার নির্জন এলাকায় ডাকাতি করত এবং ডাকাতি শেষে তারা পুনরায় আশুলিয়া ফিরে আসত বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে।

ওআ/