কুসিক এর নতুন মেয়র আরফানুল হক রিফাত


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


কুসিক এর নতুন মেয়র  আরফানুল হক রিফাত

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) অর্ধলক্ষাধিক ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছে নৌকা মার্কার প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ঘড়ি মার্কার প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু পান ৪৯৯৬৭ ভোট। মাত্র ৩৪৩ ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করেন নৌকার প্রার্থী। 

বুধবার (১৬ জুন) সাড়ে ৯টায় বেসরকারিভাবে রিফাতকে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত মেয়র ঘোষণা করা হয়।

বুধবার (১৬ জুন) সকাল ৮টায় শুরু হয়ে বিচ্ছিন্ন কিছু অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার মধ্য দিয়ে বিকেল ৪টায় বিরতীহীনভাবে কুসিক নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ হয়।

ভোটগ্রহণ শেষে সন্ধ্যায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সহিংসতা ছাড়া কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচনে ৬০ শতাংশের মতো ভোট কাস্ট হয়েছে।

সিইসি বলেন, কুসিকে প্লাস-মাইনাস ৬০ শতাংশ ভোট কাস্ট হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে তেমন কোনো বিরূপ মন্তব্য আমরা পাইনি। সার্বিকভাবে বলা যায়, ভোট সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে। ভোটারদের কাছ থেকেও তেমন কোনো অভিযোগ পাইনি।
দায়িত্ব নেওয়ার পর এটি আপনাদের প্রথম পরীক্ষা, এতে কোন 'ক্লাস' পেলেন বলে মনে করছেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ফার্স্ট ক্লাস, সেকেন্ড ক্লাস আপনারাই ঠিক করবেন। আমরা মূল্যায়ন করতে পারব না। আমি বলব আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করেছি।

তিনি বলেন, সকাল থেকে আমরা গণমাধ্যমের সংবাদ প্রত্যক্ষ করেছি। নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে, সুষ্ঠুভাবে কোনো সংঘর্ষ ছাড়াই শেষ হয়েছে। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট হয়েছে। সিসি ক্যামেরায় কন্টিনিউয়াসলি মনিটরিং করা হয়েছে। ইভিএমে ভালোভাবে ভোট হয়েছে। যারা একটু বয়োবৃদ্ধ তাদের জন্য অসুবিধা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আগে থেকেই আমরা স্বচ্ছ করার কথা বলেছিলাম। সেজন্য ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা দিয়েছি। পর্যবেক্ষকরাও তাদের দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রবলভাবে কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে বৃষ্টির কারণে ভোটগ্রহণে ধীরগতি ছিল। আজকে কুমিল্লা সিটি, পৌরসভা ও ১৩২ ইউপি নির্বাচন সার্বিকভাবে সুষ্ঠু হয়েছে। ভোটাররাও কোনো অভিযোগ করেননি। অফিসিয়াল ফলাফল আমরা এখনো পাইনি। আরও সময় লাগবে।

অপরদিকে, গতকাল দিনভর কুসিকের বিভিন্ন এলাকার ভোটকেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএমে) ভোট দিতে এসে ভোগান্তিতে পড়েন ভোটাররা। মেশিনে ভোটারদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট না মেলা, এক বুথের ভোটাররা অন্য বুথে যাওয়া, লাইন জমিয়ে ভোটে বিলম্ব সৃষ্টিসহ নানা অভিযোগ ছিল ভোটারদের।

ভোটাররা অভিযোগ করেন, লাইন ধরে বুথে ভোট দিতে গেলেই বলা হয়, এই ঘরে না, ওই ঘরে যান। ওই ঘর থেকে বলে এই ঘরে যান। তাতে ভোট দিতে ৩০ মিনিট থেকে ঘণ্টাখানেক লেগে যাচ্ছে। এ ছাড়া ভোট বিলম্ব করতে এক মেয়র প্রার্থীর সমর্থকদের অনেকে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। অনেক সময় ফিঙ্গারপ্রিন্টও মেলেনি।

তবে এসব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে প্রিসাইডিং অফিসাররা বলেছেন, ভোট দিতে ভোটারদের কোনো অসুবিধা হয়নি। সমস্যাটা করেছেন বাইরে থেকে যারা ভোটার স্লিপ দিচ্ছেন তারা। তারা ভোটারদের সঠিক তথ্য দেননি। এ কারণে ভোটারদের ভোগান্তি হয়। যার ফলে ভোটাররা এক বুথ থেকে আরেক বুথে ঘুরে বেড়ান।  

সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথমবারের মতো নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) ভোটকে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে এ কমিশন।

কুমিল্লা সিটির নির্বাচনে এবার মেয়র পদে লড়ছেন পাঁচজন। নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক (রিফাত)। টেবিলঘড়ি নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত ও সিটির সদ্য বিদায়ী মেয়র মনিরুল হক (সাক্কু), ঘোড়া প্রতীক নিয়ে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন কায়সার, হাতপাখা প্রতীক নিয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মো. রাশেদুল ইসলাম ও হরিণ প্রতীক নিয়ে কামরুল আহসান বাবুল।

রিটার্নিং কর্মকর্তার দপ্তর সূত্রে জানা যায়, সিটির ২৭টি ওয়ার্ডে ইভিএমে ভোট নেওয়া হয়। এবার নির্বাচনে মোট ভোটার ২ লাখ ২৯ হাজার ৯২০ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ১৭ হাজার ৯২ জন, পুরুষ ভোটার ১ লাখ ১২ হাজার ৮২৬ জন। আর হিজড়া ভোটার দুই জন। মোট ১০৫টি ভোটকেন্দ্রের ৬৪০টি কক্ষে ভোট গ্রহণ করা হবে। এতে মেয়র পদে ৫ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১০৬ জন ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ৩৬ জন প্রার্থী হয়েছেন।

জি আই/