গর্ভবতী স্ত্রীকে হত্যা: মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী ১৯ বছর পর গ্রেফতার


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


গর্ভবতী স্ত্রীকে হত্যা: মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী ১৯ বছর পর গ্রেফতার

মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইরের চাঞ্চল্যকর গর্ভবতী জুলেখা (১৯) হত্যা মামলার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী সিরাজুলকে (৩৯) দীর্ঘ ১৯ বছর পর নারায়ণগঞ্জের চর সৈয়দপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৪।

বুধবার (২২ জুন) রাতে নারায়ণগঞ্জের চর সৈয়দপুর এলাকা থেকে চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার পলাতক মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী সিরাজুলকে গ্রেফতার করেে র‌্যাব।

গ্রেফতারকৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদ ও ঘটনার বিবরণে জানা যায়, গত ২০০২ সালের জুলাই মাসে মানিকগঞ্জ সদর থানার বাহের চর এলাকার সিরাজুল ইসলামের সাথে সিংগাইর থানাধীন উত্তর জামশা গ্রামের মোঃ আব্দুল জলিলের মেয়ে জুলেখা বেগমের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের সময় যৌতুক হিসেবে বেশকিছু নগদ অর্থ, গহনা এবং আসবাবপত্র সিরাজুলের পরিবারকে দেওয়া হয়। বিয়ের পর সিরাজুল জুলিখাকে আরো যৌতুকের জন্য শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতো এবং যৌতুক না দিতে পারলে তালাক দেওয়ার ভয় দেখাতো। এরইমধ্যে জুলেখা ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। তার পরিবারের কাছ থেকে চাহিদা মেতাবেক যৌতুক না পাওয়ার ফলে সিরাজুলের সাথে জুলেখার কলহ আরো বেড়ে যায়। এরপর সিরাজুল তার প্রতিবেশী মোশারফের সাথে জুলেখার পরকীয়ার সম্পর্কের মিথ্যা অভিযোগ তোলে এবং তাকে আরো বেশি নির্যাতন করতে থাকে। সিরাজুলের নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে ভিকটিমের বাবা ও ভাইসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে আসামীর গ্রামে সালিশ হয়। সেখানে জুলেখার কোনো দোষ না পেয়ে এবং পরকীয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় সালিশে উপস্থিত গণ্যমান্য ব্যক্তিরা সিরাজুলকে গালিগালাজ করে এবং জুলিখাকে নির্যাতন না করার জন্য সতর্ক করে। এই ঘটনার পর আসামি সিরাজুল আরও ক্ষিপ্ত হয়ে যায় এবং মনে মনে জুলেখাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পূর্ব পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২০০৩ সালের ৫ ডিসেম্বর সিরাজুল ভিকটিমকে নিয়ে শ্বশুর বাড়ি সিংগাইরের উত্তর জামশা গ্রামে যায়। ৬ ডিসেম্বর সিরাজুল জুলেখাকে ডাক্তার দেখানোর কথা বলে মানিকগঞ্জ শহরে নিয়ে যায় এবং বিভিন্ন অজুহাতে ইচ্ছাকৃতভাবে দেরি করে গভীর রাতে শ্বশুর বাড়ির উদ্দেশ্যে মানিকগঞ্জ শহর হতে রওনা হয়। মানিকগঞ্জ শহর থেকে সিরাজুল স্ত্রী জুলেখাকে নিয়ে শশুর বাড়ি না গিয়ে কৌশলে তার শ্বশুর বাড়ির নিকটবর্তী কালীগঙ্গা নদীর পাড়ের নির্জন স্থানে নিয়ে যায়। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আসামি তার ব্যাগে থাকা গামছা বের করে জুলেখার গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে নির্মমভাবে হত্যা করে নদীর পাড়ে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। এই মর্মান্তিক ঘটনায় জুলেখার নিহত হওয়ার পাশাপশি তার ৮ মাসের গর্ভস্থ সন্তানও হত্যার শিকার হয়। পরবর্তীতে ৭ ডিসেম্বর থানা পুলিশ জুলেখার মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে প্রেরণ করে। একই দিনে এ ঘটনায় জুলেখার বাবা মোঃ আব্দুল জলিল বাদী হয়ে সিংগাইর থানায় আসামি সিরাজুলসহ তার বড় ভাই রফিকুল, মা রাবেয়া বেগম, খালু শামসুল, চাচা ফাইজুদ্দিন ও তাইজুদ্দিন এবং মামা আবুল হোসেন সহ সর্বমোট ৭ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-১৬(১২)০৩। সিংগাইর থানা পুলিশ মামলার এজাহারনামীয় আসামি শামসুলকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করে। আসামি ৩ মাস হাজত খাটার পর জামিনে মুক্তি পায়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মামলার তদন্ত শেষে এজাহারনামীয় আসামী স্বামী সিরাজুল, ভাসুর রফিকুল, শ্বাশুরী রাবেয়া এবং খালু শ্বশুর শামসুলসহ সর্বমোট ৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট প্রদান করে এবং এজাহারনামীয় বাকি ৩ আসামী ফাইজ উদ্দিন, তাইজুদ্দিন ও আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় চার্জশীট থেকে অব্যাহতি দেই। পরবর্তীতে চার্জশিটের ভিত্তিতে আদালত মামলার বিচারকার্য পরিচালনা করে এবং পর্যাপ্ত স্বাক্ষ্য প্রমাণ ও উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে ভিকটিম জুলেখাকে হত্যাকান্ডে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকার অপরাধে ২০০৫ সালের শেষের দিকে মানিকগঞ্জ জেলার বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ মোঃ মোতাহার হোসেন চার্জশীটে অভিযুক্ত আসামী সিরাজুলকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করেন এবং অপর ৩ জন আসামি ভাসুর রফিকুল, শ্বাশুরী রাবেয়া এবং খালু শ্বশুর শামসুলকে বেকসুর খালাস প্রদান করেন। ঘটনার পর হতে আসামি সিরাজুল প্রায় ১৯ বছর পলাতক ছিল।

র‌্যাব জানায়, গ্রেফতারকৃত আসামীকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।

এসএ/