চবি’র হলের নামই পাল্টে দিল ছাত্রলীগ!
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২
দেয়াল জুড়ে ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক উপগ্রুপ বিজয়ের চিকায় পাল্টে গেছে হলের চেহারা। বর্তমানে এই হলের নাম পরিবর্তিত হয়ে রূপ নিয়েছে বিজয় হলে।
৪ তলা উঁচু এই লাল দালান গ্রুপভিত্তিক রাজনীতির দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। চবির আবাসিক হলগুলো বর্তমানে ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক গ্রুপগুলোর কাছে জিম্মি হয়ে আছে। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের থাকতে হচ্ছে হলের বাইরে। অন্যথায় কোনো একটি গ্রুপের অনুসারী হিসেবে হলে উঠতে হয় শিক্ষার্থীদের।দীর্ঘদিন হলের আসন বরাদ্দ না হওয়ায় তৈরি হয়েছে এমন হল দখলের সংস্কৃতি।
বগিভিত্তিক উপগ্রুপ বিজয়ের দখলে রয়েছে সর্বোচ্চ তিনটি হল- এএফ রহমান, আলাওল এবং সোহরাওয়ার্দী হল। সিক্সটি নাইনের দখলে শাহজালাল হল, সিএফসির দখলে শাহ আমানত হল, এছাড়া শহিদ আব্দুর রব হলে রয়েছে বাংলার মুখ, ভিএক্স ও কনকর্ডসহ কয়েকটি গ্রুপের অনুসারীরা। সূর্যসেন হলে রয়েছে এপিটাফ গ্রুপের অনুসারীরা।
বছরের বিভিন্ন সময় বগিভিত্তিক গ্রুপগুলো ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় চিকা মেরে নিজেদের অবস্থান জানান দেয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের এএফ রহমান হলের চিত্রটা ভিন্ন। পুরো হলজুড়ে চিকা মারায় পাল্টে গেছে হলটির আসল রুপ।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ থেকে চবি ক্যাম্পাসে বগীভিত্তিক রাজনীতি ও বগীভিত্তিক সংগঠনের নামে চিকা মারা-পোস্টারসহ যেকোনো ধরনের কর্মকাণ্ডের প্রতি নিষেধাজ্ঞা দিলেও তা মানছেন না গ্রুপগুলো। চিকা মারা ছাড়াও বগিভিত্তিক সংগঠনের নামে মিছিল মিটিংসহ নানা কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছেন তারা।
গত ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ভর্তিপরীক্ষার সময় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখায় শাটল ট্রনের বগিভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকায় বিভিন্ন ধরনের বগির নামে চিকা মারা, টি-শার্ট, প্লাকার্ড এবং স্লোগান সম্পূর্ণরুপে নিষিদ্ধ করা হলো।’ কিন্ত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এমন নির্দেশের প্রতি ভ্রুক্ষেপও করছেন নেতাকর্মীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী আহসান হাবিব বলেন, “প্রথমদিন এসে ভেবেছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো চবিতেও বিজয় ৭১ হল রয়েছে। পরে জানতে পারি, এখানে ছাত্রলীগের ‘বিজয়’ গ্রুপের অনুসারীরা থাকে বলেই হলটির চিত্র এমন।”
ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী সাইফ উদ্দিন রুহান বলেন, “সাধারণ শিক্ষার্থী হওয়ায় আবাসিক হলে ঢুকতেই ভয় লাগে। পড়াশোনার চেয়ে এখানে রাজনৈতিক গ্রুপগুলোর চর্চাই বেশি হয়।”
তিনি আরও বলেন, “হলগুলোতে একবার ঘুরে আসলেই বুঝা যায়, এখানে কোন গ্রুপের আধিপত্য রয়েছে। সবসময় মনে হয়, এই বুঝি মারামারি লাগলো!”
চিকা মারার বিষয়ে বিজয় গ্রুপের নেতা ও ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক নজরুল ইসলাম সবুজ বলেন, “শাটল ট্রেনের বগিভিত্তিক রাজনীতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক আগে থেকে চর্চা হয়ে আসছে।কর্মীরা হয়তো তাদের আবেগ থেকে চিকা মারে। সেটা শুধু আমাদের গ্রুপ না প্রত্যেক গ্রুপের কর্মীরা এটা করে থাকে।যদি এ বিষয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আপত্তি থাকে সেক্ষেত্রে বিষয়টা আমরা গুরুত্বের সাথে দেখবো।আমরা সবসময় সাধারণ শিক্ষার্থীর পক্ষে।”
শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি রেজাউল হক রুবেল জনবাণীকে বলেন, “বিষয়টা আমাদের চোখে পড়ার পর আমরা প্রশাসনকে বলেছিলাম বগি ভিত্তিক সংগঠনগুলোর চিকা মুছে দেওয়ার জন্য। কিন্তু প্রশাসন এতদিনেও কেন এ বিষয়ে নীরব, এটা আমারও প্রশ্ন। যেহেতু বগি ভিত্তিক সংগঠন কেন্দ্ৰীয় ছাত্রলীগ থেকে নিষিদ্ধ, তাই আমরা এ ধরনের কর্মকাণ্ড সমর্থন করতে পারি না।”
এ এফ রহমান হলের প্রভোস্ট বলেন ড. কাজী এসএম খসরুল আলম কুদ্দুসী জনবাণীকে বলেন, “বছরখানেক আগে হলের দেয়াল পরিস্কার করার পর পরেই চিকাগুলো মারা হয়েছিল। এসব চিকার ফলে সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে যা আমার কাছে ভাল লাগেনি।যেহেতু ছাত্র সংগঠনের নামে চিকাগুলো মারা হচ্ছে সেহেতু সংগঠনের নেতাদের বিষয়টি দেখা উচিত। নিজেদের হলের সৌন্দর্য্য রক্ষার জন্য নিজেদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে।”
এসএ/