কৃষি আবহাওয়া তথ্য পদ্ধতি উন্নতকরণ প্রকল্পের সাংবাদিক অবহিতকরণ কর্মশালা
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২
জলবায়ু পরিবর্তন এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকির মধ্যে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম সারিতে। কাজেই নির্ভরযোগ্য কৃষি আবহাওয়া বিষয়ক তথ্য কৃষকদের মাঝে সময়মত পৌঁছে দেওয়া কৃষি প্রধান বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর ফলে বিরূপ আবহাওয়ার ক্ষতিকর প্রভাব থেকে যেমন ফসল রক্ষা করা যাবে তেমন অনুকূল আবহাওয়াকে কাজে লাগিয়ে উৎপাদন খরচ কমানোর পাশাপাশি কৃষি উৎপাদন বাড়ানো যাবে। সে কারণেই বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষি আবহাওয়া তথ্য পদ্ধতি উন্নতকরণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, আবহাওয়া এবং নদ নদীর সামগ্রিক অবস্থা সম্পর্কিত উন্নত মানের এবং নির্ভরযোগ্য তথ্য কৃষকের কাছে পৌঁছানো এবং এ সংক্রান্ত তথ্য উপাত্ত সংগ্রহের উন্নত পদ্ধতি ব্যবহারে ডিএই’র সক্ষমতা বৃদ্ধি করা।
প্রকল্পের কার্যক্রমও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা বিষয়েপ্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দকে অবহিতকরণের জন্যসাংবাদিক অবহিতকরণ কর্মশালা (২৩ জুন) থ্রি ডি সেমিনার হল, কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশন বাংলাদেশ কমপ্লেক্স, খামারবাড়ি, ফার্মগেট, ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়।
কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মো: বেনজীর আলম, মহাপরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। বিশেষ অতিথি ছিলেন দিলীপ কুমার অধিকারী, পরিচালক, পরিকল্পনা, প্রকল্প বাস্তবায়ন ও আইসিটি উইং, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। মাহমুদ আল ফয়সাল, বার্তা প্রধান, এসএ টিভি। মো: আশরাফ আলী, যুগ্ম সম্পাদক, জাতীয় প্রেস ক্লাব ও সভাপতি এগ্রিকালচারাল রিপোর্টার্স ফোরাম এবং দেওয়ান সিরাজ, উপস্থাপক, বাংলাদেশ টেলিভিশন।
সভাপতিত্ব করেন হাবিবুর রহমান চৌধুরী, পরিচালক, সরেজমিন উইং,কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। কর্মশালায়মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রকল্প পরিচালক ড. মো: শাহ কামাল খান। বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধিবৃন্দ কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন।
মূল প্রবন্ধে প্রকল্প পরিচালক প্রকল্পের কার্যক্রম তুলে ধরেন। তিনি জানান, “এ প্রকল্পের মাধ্যমে নির্ভরযোগ্য কৃষি আবহাওয়া এবং জলবায়ু বিষয়ক ঝুঁকি সংক্রান্ত তথ্য উপাত্ত কৃষকের উপযোগী করে প্রস্তুত করে তা বিভিন্ন সম্প্রসারণ পদ্ধতির মাধ্যমে কৃষকের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। এটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে বামিস পোর্টাল স্থাপন, ৪৮৭ টি উপজেলায় কৃষি আবহাওয়া বিষয়ক কিওস্ক স্থাপন, ৪০৫১ টি ইউনিয়ন পরিষদে অটোমেটিক রেইন গেজ এবং কৃষি আবহাওয়া ডিসপ্লে বোর্ড স্থাপন ও এসএএওদের কৃষি আবহাওয়া এবং জলবায়ু বিষয়ক তথ্য প্রেরণের জন্য ইন্টারনেট কানেক্টিভিটি সহ ৬৬৬৪ টি ট্যাব সরবরাহ করা হয়েছে।”
প্রকল্পের আওতায় স্থাপিত বামিস পোর্টালএকটি ডায়নামিক ওয়েব পোর্টাল - যেখানে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য উপাত্ত এবং বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে প্রাপ্ত নদ নদীর তথ্য উপাত্ত সন্নিবেশিত হয়। তথ্য উপাত্ত সমূহ যাচাই বাছাই এবং অনুবাদ করে প্রয়োজনীয় কৃষি আবহাওয়া পরামর্শ সেবা পোর্টালের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়। এই পোর্টাল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠানসমূহের সাথে সংযুক্ত। প্রকল্পের আওতায় প্রতি সপ্তাহে একবার জাতীয় পর্যায়ে, দুইবার ৬৪ জেলার জন্য নিয়মিতভাবে এবং জরুরি অবস্থায় প্রয়োজন অনুযায়ী বিশেষ কৃষি আবহাওয়া বুলেটিন তৈরি করা হয় যা বামিস পোর্টালে নিয়মিত আপলোড করা হয় এবং বামিস পোর্টালের মাধ্যমে এই সেবা সবার জন্য উন্মুক্ত।
৪৮৭ উপজেলা কৃষি অফিসে স্থাপিত কিওস্ক ব্যবহার করে কৃষির সাথে সংশ্লিষ্ট যে কোন ব্যক্তি কৃষি আবহাওয়া তথ্য পোর্টাল (bamis.gov.bd), কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (dae.gov.bd), বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর (bmd.gov.bd), বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (ffwc.gov.bd) থেকে তথ্য সংগ্রহের পাশাপাশি কৃষি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ওয়েবসাইট পরিদর্শন ও প্রয়োজন অনুযায়ী তথ্য সংগ্রহ/প্রিন্ট করে নিতে পারেন। সর্বসাধারণের সহজে ব্যবহারের জন্য এ কিওস্কটি সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়ের উন্মুক্ত স্থানে রাখা হয়।
কৃষি আবহাওয়া এবং জলবায়ু বিষয়ক তথ্য প্রেরণের জন্য ইন্টারনেট কানেক্টিভিটিসহ ৬৬৬৪ টি ট্যাব এসএএওদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। এই ট্যাব ব্যবহার করে মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সদর দপ্তর থেকে কৃষক পর্যায় পর্যন্ত কৃষি আবহাওয়া বিষয়ক তথ্য সহজে আদান প্রদান সম্ভব হয়। অটোমেটিক রেইন গেজ এর সাথে কানেক্ট করে প্রতিদিনের বৃষ্টিপাতের তথ্য ট্যাব এর মাধ্যমে বামিস পোর্টালে পাঠানো যায়।
ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রতিদিন বৃষ্টিপাতের তথ্য সংগ্রহের জন্য ৪০৫১ ইউনিয়ন পরিষদে অটোমেটিক রেইন গেজ স্থাপন করা হয়েছে। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাবৃন্দ ট্যাব এর সাহায্যে রেইনগেজ থেকে প্রাপ্ত বৃষ্টিপাতের তথ্য নিয়মিত বামিস পোর্টালে পাঠাতে পারেন যা কৃষি সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
জরুরি অবস্থায় কৃষি আবহাওয়া সম্পর্কিত পরামর্শসমূহ প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত ৩০০০০ কৃষক প্রতিনিধি ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের কাছে প্রেরণ করা হয়। মুঠোফোনে প্রেরিত কৃষি আবহাওয়া পরামর্শ সম্পর্কিত ক্ষুদে বার্তাপ্রতিকূল আবহাওয়ায় কৃষি ক্ষেত্রে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণে সহায়তা করে।
সংশোধিত প্রকল্পটির আওতায় নতুন যেসব কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো :
• কৃষি আবহাওয়া বুলেটিন অটোমেশন
• প্রকল্পের অর্থায়নেকৃষি আবহাওয়া বিষয়ে দক্ষ জনবল তৈরির জন্য
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি আবহাওয়া বিভাগ চালুতে সহায়তা
• ১২ টি অঞ্চলে কম্যুনিটি রেডিও স্থাপন
• ১৬০ এগ্রোমেট ওয়েদার স্টেশনস্থাপন
• ডিএই সদর দপ্তর ও ৬৪ জেলায় ডিজিটাল আউটডোর ডিসপ্লে বোর্ড স্থাপন
• প্রায়োগিক গবেষণা: কৃষি ক্ষেত্রে সাব সিজনাল থেকে সিজনাল ফোরকাস্ট, বজ্রপাতের পূর্বাভাস, কৃষি আবহাওয়া তথ্য পোর্টালের উন্নয়ন, ফসল আবহাওয়া পঞ্জিকা তৈরি।
উপস্থিত অংশগ্রহণকারীবৃন্দ প্রকল্পের কার্যক্রম সম্পর্কে মতামত ও পরামর্শ প্রদান করেন। প্রকল্প পরিচালক প্রকল্পের আওতায় প্রস্তুতকৃত কৃষি আবহাওয়া পরামর্শসমূহের প্রচারে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দের সহযোগিতা কামনা করেন।
এসএ/