প্রতারণার উদ্দেশ্যে অবৈধ ভাবে খোলা হয় জেকেজি হেলথকেয়ার


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


প্রতারণার উদ্দেশ্যে অবৈধ ভাবে খোলা হয় জেকেজি হেলথকেয়ার

করোনার ভুয়া রিপোর্ট দেওয়ার মামলায় জেকেজি হেলথকেয়ারের চেয়ারপারসন ডা. সাবরিনা চৌধুরী ও তার স্বামী প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আরিফুল হক চৌধুরীসহ ৮ জনকে ৩ টি ধারায় ১১ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। 

মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) ঢাকার অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের আদালতে এ রায় ঘোষণা করেন।

রায় ঘোষণার সময় আদালত বলেন, ৮ আসামির প্রত্যেকেই পরস্পর যোগসাজশে অপরাধ করেছেন। করোনা মহামারির ১ মাস আগে প্রতারণার উদ্দেশ্যে অবৈধ ভাবে ভুয়া দলিলপত্রের মাধ্যমে খোলা হয় জেকেজি হেলথকেয়ার নামক প্রতিষ্ঠান। ৩৪ ধারার বিধান অনুসারে আসামিরা সকলেই সমান অপরাধে অপরাধী। এ মামলায় মোট ৪০ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৬ জন বিভিন্ন সময়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন। রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের আইনজীবীগন সাক্ষীদের জবানবন্দি ও জেরা করেছেন। সাক্ষীগণের সাক্ষপ্রমাণ ও জবানবন্দির ভিত্তিতে আসামিদের বিরুদ্ধে আদালাত ৪২০/৪৬৫/৪৭১ ধারার অপরাধের সত্যতা পেয়েছে। 

তিনটি ধারায় প্রত্যেকে আলাদা আলাদাভাবে সাজা ভোগ করতে হবে। ৪২০ ধারায় প্রত্যেককে ৩ বছরের কারাদণ্ড ও ৩ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে ৩ মাসের কারাদণ্ড। ৪৬৫ ধারায় প্রত্যেককে ৪ বছরের কারাদণ্ড ও ৪ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে ৪ মাসের কারাদণ্ড। ৪৭১ ধারায় প্রত্যেককে ৪ বছরের কারাদণ্ড ও ৪ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে ৪ মাসের কারাদণ্ড। একটি ধারার সাজা শেষ হলে অন্য ধারার সাজা শুরু হবে তিনটি ধারা মিলিয়ে সকলকে ১১ বছরের কারাদণ্ড এবং ১১ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ১১ মাসের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে বলে জানান আদালত।

সাবরিনা ও আরিফুল ছাড়াও এ মামলার সাজাপ্রাপ্ত অন্য আসামিরা হলেন, আবু সাঈদ চৌধুরী, হুমায়ূন কবির হিমু, তানজিলা পাটোয়ারী, বিপ্লব দাস, শফিকুল ইসলাম রোমিও এবং জেবুন্নেসা।

গত ২৯ জুন ঢাকার অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য ধার্য করেন।

এর আগে গত ১১ মে ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থনে নিজেদের নির্দোষ দাবি করে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করেন আসামিরা।

গত ২০ এপ্রিল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোর্শেদ আল মামুন ভূঁইয়া একই আদালতে সাক্ষ্য দেন। এরপর রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষ্যগ্রহণ সমাপ্ত ঘোষণা করে। এ মামলায় এখন পর্যন্ত ৪০ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৬ জন বিভিন্ন সময়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন।

মামলা সূত্রে জানা যায়, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় করোনা শনাক্তের জন্য নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষা না করেই জেকেজি হেলথকেয়ার ২৭ হাজার মানুষকে ভুয়া রিপোর্ট দেয়। এ অভিযোগে ২০২০ সালের ২৩ জুন অভিযান চালিয়ে প্রতিষ্ঠানটি সিলগালা করে দেওয়া হয়।

করোনার ভুয়া রিপোর্ট প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান জেকেজি হেলথ কেয়ারের কর্ণধার আরিফুল চৌধুরীর স্ত্রী ডা: সাবরিনা চৌধুরী জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের একজন চিকিৎসক। মামলার পর ওই প্রতিষ্ঠান থেকে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

২০২০ সালের ১২ জুলাই সাবরিনাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তেজগাঁও বিভাগীয় উপ-পুলিশ (ডিসি) কার্যালয়ে নেওয়া হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, ডিসিসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি সদুত্তর দিতে না পারায় তাকে তেজগাঁও থানায় আগেই আরিফুলের বিরুদ্ধে হওয়া মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।

২০২০ সালের ৫ আগস্ট ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে সাবরিনা ও আরিফসহ আটজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন ডিবি পুলিশের পরিদর্শক লিয়াকত আলী। চার্জশিটভুক্ত অন্য আসামিরা হলেন- আবু সাঈদ চৌধুরী, হুমায়ূন কবির হিমু, তানজিলা পাটোয়ারী, বিপ্লব দাস, শফিকুল ইসলাম রোমিও এবং জেবুন্নেসা।

চার্জশিটে সাবরিনা ও আরিফকে প্রতারণার মূলহোতা বলে উল্লেখ করা হয়। বাকিরা প্রতারণা ও জালিয়াতি করতে তাদের সহযোগিতা করেছেন বলে জানানো হয়।

একই বছরের ২০ আগস্ট ঢাকা মহানগর হাকিম সরাফুজ্জামান আনছারী আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এ সময় তারা নিজেদের নির্দোষ দাবি করে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করেন।

এসএ/