যৌন নিপীড়ন: চবি প্রক্টরিয়াল বডির সময় ৪ দিন, ব্যর্থ হলেই পদত্যাগ


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


যৌন নিপীড়ন: চবি প্রক্টরিয়াল বডির সময় ৪ দিন, ব্যর্থ হলেই পদত্যাগ

যৌন নিপীড়নের বিচার ও সান্ধ্য আইন বাতিলের দাবিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি)আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ৪ দফা দাবি মেনে নিয়ে চার দিনের মধ্যে যৌন নিপীড়নের বিচার করার আশ্বাস দেন প্রশাসন। 

বুধবার(২০ জুলাই) রাত ১০টা থেকে শেখ হাসিনা হল ও উপাচার্যের বাসভবনের সামনে বিভিন্ন স্লোগানের মাধ্যমে ৪ দফা দাবি নিয়ে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।এসময় প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা উপস্থিত হয়ে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেন।

প্রসঙ্গত,গত রবিবার(১৭ জুলাই) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রীতিলতা হল সংলগ্ন এলাকায় ৫ জন দুর্বৃত্তের হাতে শারীরিক হেনস্তার শিকার হন এক ছাত্রী।তাকে ওই জায়গা থেকে একটু দূরে নিয়ে গিয়ে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করে বলেও জানান ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানালে তারা ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান।পাশাপাশি ১৯ জুলাই(মঙ্গলবার) উপাচার্যের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রক্টরিয়াল বডির সদস্য ও বিভিন্ন হলের প্রভোস্ট।এসময় তারা রাত ১০ টার মধ্যে ছাত্রীদের হলে ঢোকার নির্দেশনা দেন।যা বুধবার থেকে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে ছাত্রীদের এ নির্দেশনা জানানো হলে তারা সাথে সাথে তা প্রত্যাখ্যান করেন।এবং এই আইন বাতিল, যৌন নিপীড়নে অভিযুক্তদের দ্রুত শাস্তির আওতায় আনা ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে ৪ দফা দাবি নিয়ে আন্দোলন শুরু করেন।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি ছাত্রীদের দাবিগুলো হলো-

  • বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল ও মেডিকেল সেন্টারে প্রবেশের সময়সীমা তুলে নেয়া ও ক্যাম্পাসে ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
  • যৌন নিপীড়ন সেল ভেঙে নতুন করে কার্যকরী সেল গঠন করতে হবে । ওই সেলে বিচার নিশ্চিতের জন্য সর্বোচ্চ সময় থাকবে এক মাস। এক মাসে বিচার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হলে যৌন নিপীড়ন সেল নিজে শাস্তির আওতাভুক্ত হবে।
  • যৌন নিপীড়ন সেলে জমা হওয়া অভিযোগগুলো আগামী চার কার্যদিবসের মধ্যে নিষ্পত্তি করে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। 
  • যৌন নিপীড়নের সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর বিচার আগামী ৪ কার্যদিবসের মধ্যে করতে না পারলে প্রক্টরিয়াল বড়ির সবাইকে পদত্যাগ করতে হবে।

লিখিত আকারে পেশকৃত এসব দাবি মেনে নেওয়ার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক এসএম মনিরুল হাসান স্বাক্ষর করলে ছাত্রীরা আন্দোলন থেকে সরে আসেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এসএম মনিরুল হাসান বলেন, আন্দোলনরত ছাত্রীরা আমাদের কাছে লিখিত আকারে ৪ দফা দাবি জানায়। আমরা দাবিগুলো মেনে নিলে তারা হলে ফিরে যায়।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়,রেজিস্ট্রার কর্তৃক তাদের ৪ দফা দাবি মেনে নেয়ায় তারা হলে ফিরে যান।কিন্তু দাবি অনুযায়ী ৪ দিনের মধ্যে অভিযুক্তদের বিচার না করলে ও নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিত করতে না পারলে তারা পুনরায় আন্দোলন করবেন।

আরেক শিক্ষার্থী বলেন, সময় মাত্র ৪ দিন, আমরা দেখেছি এর আগে প্রশাসন আশ্বাস দিলেও কোনো ঘটনার সমাধান দিতে পারেনি।কিন্তু আমরা আর চুপ করে থাকব না। এবার বিচার করতেই হবে।না হলে প্রক্টরিয়াল বডি পদত্যাগ করবে।

অপরদিকে,ক্যাম্পাসে ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সান্ধ্য আইন করায় তীব্র ক্ষোভের মুখে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।প্রশাসনের এমন আইনের বিরুদ্ধে সবাই নানাভাবে প্রতিবাদ করছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আশরাফী নিতু বলেন, ‘প্রত্যেকবারই যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটলে প্রথমেই প্রশাসন মেয়েদের হলের সময়সীমার দিকে নজর দেয়। এটা মাথাব্যথা হলে মাথা কেটে ফেলতে হবে ধরনের সমাধান।’

ক্যাম্পাসে ছাত্রীদের নিরাপত্তাহীনতার জন্য প্রশাসনের ব্যর্থতাকেই দায়ী করে নৃবিজ্ঞান বিভাগে পূর্বাশা আচার্য্য বলেন, ‘এর জন্য ১০টায় হলে ঢোকার নির্দেশ দিয়ে দেবেন, এটা কেমন কথা! নিজেদের ক্যাম্পাস। নিজেদের ক্যাম্পাসে নিজেরাই সেফ না! সেটা কি মেয়েদের দোষ, না আপনাদের?’

জান্নাত মুমু নামে আরেক শিক্ষার্থী লেখেন, ‘চবিতে ছাত্রীই ভর্তি করানোর কী দরকার? প্রশাসন আরেকটু চালাক হলে কেবল ছাত্রদের ভর্তি করানোর সিস্টেম চালু করত।’

প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া জনবাণীকে বলেন, ‍“গত রোববার (১৭ জুলাই) রাতে প্রীতিলতা হলের এক ছাত্রীকে হেনস্থার অভিযোগ পাওয়ার পরপরই আমরা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তদন্তের বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন। এরপরও ছাত্রীরা যে আন্দোলন করছে, আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের দাবিগুলো শুনেছি। আমরা যৌক্তিক দাবিগুলো মেনে নেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছি।”

এসএ/