বিশ্বের নজরে সালমান-বাইডেন কথোপকথন


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


বিশ্বের নজরে সালমান-বাইডেন কথোপকথন

আমেরিকার এক সময়কার ঘনিষ্ঠ মিত্রদেশ সৌদি আরব। এখনো যে দুই দেশের সম্পর্ক খুব খারাপ, তা বলা চলে না। তবে এর ওপর খানিকটা ময়লা জমেছে। মূলত সৌদির সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যাকাণ্ড নিয়ে দুই দেশের সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয়। হত্যাকাণ্ডটি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে হলেও বাইডেন তাঁর নির্বাচনী প্রচারণায় ওই হত্যাকাণ্ডের বিচারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এ নিয়ে ক্ষমতায় আসার পর সৌদি যুবরাজের সঙ্গে নয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সম্পর্কটা খানিকটা শীতল হয়ে ওঠে। খাসোগি হত্যাকাণ্ডের পেছনে সৌদি যুবরাজের হাত আছে বলে অভিযোগ মার্কিন গোয়েন্দাদের। তবে সেই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন সৌদির যুবরাজ। এত কিছুর মধ্যেই সৌদি আরব সফরে যুবরাজ বিন-সালমানের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন বাইডেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বহুল আলোচিত মধ্যপ্রাচ্য সফর শুরু হয়েছে ১৩ জুলাই চার দিনের এ সফরে তিনি এখন সৌদি আরবে আছেন। ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে সৃষ্ট জ্বালানি সংকট কাটিয়ে উঠতে জ্বালানির খোঁজ ও সম্পর্ক স্বাভাবিক করার লক্ষ্যেই তাঁর এ সফর। তিনি ইসরায়েল থেকে এ সফর শুরু করেছেন। এরপর গেছেন অধিকৃত পশ্চিম তীরে। সর্বশেষ সৌদি আরবে। বাইডেনের এ সফর সামনে রেখে হোয়াইট হাউসের তোড়জোড় ছিল চোখে পড়ার মতো। এ তোড়জোড় ছিল মূলত ইসরায়েল ও সৌদি আরবের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার লক্ষ্যেই। বাইডেন তাঁর লক্ষ্যে ইতিমধ্যে সফল হয়েছেন। ইসরায়েলের সব ধরনের উড়োজাহাজের জন্য নিজেদের আকাশসীমা উন্মুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছে সৌদি আরব। দৃশ্যত ইসরায়েলের প্রতি উদার মনোভাবের অংশ হিসেবে শুক্রবার এ ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। উড়োজাহাজ চলাচলে সৌদির এ সিদ্ধান্তকে ‘ঐতিহাসিক’ মন্তব্য করে স্বাগত জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান বলেছেন, এ সিদ্ধান্ত সৌদি আরবের সঙ্গে অনেক মাস ধরে প্রেসিডেন্টের অবিচল ও নীতিগত কূটনীতির ফল, যা তাঁর সফরে চূড়ান্ত পরিণতি পেল। 

এর আগে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম ইসরায়েল সফরে এসে পশ্চিম জেরুজালেমে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী ইয়ার লাপিদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন বাইডেন। বৈঠক শেষে যৌথ বিবৃতি দেন দুই দেশের নেতারা। বিবৃতিতে ইরানের পারমাণবিক প্রকল্প নিয়ে নিজেদের অভিন্ন অবস্থানের কথা তুলে ধরেন তাঁরা। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন ঠেকাতে জাতীয় শক্তির সম্ভাব্য সব বিষয় ব্যবহার করবে ওয়াশিংটন। একই সঙ্গে চুক্তির শর্ত মেনে ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা দেওয়া অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দেন বাইডেন। সৌদি সফরের আগে শুক্রবার বাইডেন ফিলিস্তিন সফর করেছেন। অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি নেতা মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে দেখা করলেও কোনো বড় কূটনৈতিক অগ্রগতি হয়নি। বাইডেন সেখানে একটি হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন এবং চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ১০ কোটি মার্কিন ডলার সহায়তার ঘোষণা দিয়েছেন। বাইডেনের জেরুজালেম সফরের সময় বেথলেহেম ও রামাল্লায় বিক্ষোভ করেছেন ফিলিস্তিনিরা। এ সময় বিক্ষোভকারীরা বাইডেনের ফিলিস্তিনি নীতির সমালোচনা করেন। বাইডেন-লাপিদের যৌথ বিবৃতিতে অঞ্চলটিতে শান্তি ফেরাতে দুই রাষ্ট্র গঠনকে সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে ওয়াশিংটন। তবে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ফিলিস্তিন নীতি থেকে সরে আসার কোনো ইঙ্গিত দেননি বাইডেন। মার্কিন গণমাধ্যম এক্সিওএস বলছে, প্রেসিডেন্টের মধ্যপ্রাচ্য সফরের আগে থেকে অনেকটা চুপিসারেই বাইডেন প্রশাসন লোহিত সাগরের দুটি কৌশলগত দ্বীপ মিসরের কাছ থেকে সৌদিকে হস্তান্তরের জন্য মধ্যস্থতা করেছে। সৌদি আরব, ইসরায়েল ও মিসরের মধ্যে সম্ভাব্য চুক্তিতেও নীরবে মধ্যস্থতা করে যাচ্ছে দেশটি। সফল হলে সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পথে এটি প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে। বাইডেনের সৌদি আরব সফর নিয়ে সমালোচনাও কম হচ্ছে না। 

তুরস্কে সৌদি দূতাবাসে ২০১৮ সালে ওয়াশিংটন পোস্টের কলাম লেখক জামাল খাসোগির হত্যাকাণ্ডের পেছনে যুবরাজ সালমানের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে মনে করেন মার্কিন গোয়েন্দারা। খাসোগির হত্যাকাণ্ড নিয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র সৌদি আরবের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নড়বড়ে হয়ে পড়েছিল। সংবাদমাধ্যমে খবর বেরিয়েছিল, সেই সম্পর্ক ঠিক করতে সৌদি আরব সফর করছেন বাইডেন।জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারের সময় জামাল খাসোগি হত্যাকাণ্ডসহ সৌদি আরবের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছিলেন। ওই অভিযোগে তিনি সৌদিকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে একঘরে করতে উদ্যোগ নেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন শান্তিতে নোবেল জয়ী ইয়েমেনের অধিকারকর্মী তাওয়াক্কোল কারমান এখন বাইডেনের সৌদি সফরের সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার সমর্থন করার প্রতিশ্রুতি ত্যাগ করেছেন বাইডেন। সৌদি আরবের জেদ্দায় ১৬ জুলাই অনুষ্ঠিত মধ্যপ্রাচ্যের নেতাদের সঙ্গে আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও উন্নয়ন শীর্ষক সম্মেলনে অংশ নেন বাইডেন। এ সময় আরব নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ওয়াশিংটন মধ্যপ্রাচ্যে পুরোপুরি নিযুক্ত থাকবে এবং এখানে অন্য বিশ্বশক্তিকে প্রভাব বিস্তার করতে দেবে না।জো বাইডেন বলেন,আমরা একসঙ্গে পথ চলব। চীন, রাশিয়া বা ইরানকে পূরণের জন্য কোনো শূন্যতা রাখব না। এই অঞ্চলে ইরানের ছড়ি ঘোরানোও পছন্দ হচ্ছে না ওয়াশিংটনের। যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, বাইডেনের সফরের সময় যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব ইরানকে ‘পরমাণু অস্ত্রের সক্ষমতা অর্জন’ থেকে বিরত রাখার গুরুত্বের বিষয়ে একমত হয়েছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাইডেন তেলসমৃদ্ধ দেশটির নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা নিশ্চিতে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দৃঢ় ও স্থায়ী প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।তবে আব্রাহাম চুক্তিতে যোগ দিতে অস্বীকার করেছে সৌদি আরব। যার অধীনে ২০২০ সালে ইসরায়েলের সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইনের সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়েছিল। সৌদি আরব বলছে, তারা আরব লিগেই থাকতে চায়। জেদ্দায় এই সম্মেলনের পেছনে বাইডেনের অন্যতম লক্ষ্য ছিল আরব বিশ্বের সঙ্গে ইসরায়েলকে একীভূত করা এবং ইরানের বিরুদ্ধে আরব বিশ্বের যৌথ পদক্ষেপকে উৎসাহিত করা। 

এতে ইসরায়েলকে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ চালিয়ে যেতে উৎসাহিত করতে পারে। ভবিষ্যতে সৌদি আরব যদি অন্য আরব বা মুসলিম মিত্র এবং অংশীদারদের ইসরায়েলের সঙ্গে স্বাভাবিক হতে আগাম সংকেত দেয়, তাহলে আব্রাহাম চুক্তি আরও বড় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সৌদি আরবের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিককরণ এমনকি পূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার হলেও আরবের অন্য দেশগুলোর ওপর এর প্রভাব পড়বে। যদিও অনেক আরব দেশের সঙ্গে এখন ইসরায়েলের স্বাভাবিক সম্পর্ক রয়েছে।এদিকে সৌদি আরব নিজেদের আকাশসীমা ব্যবহারের জন্য সব এয়ারলাইনসের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। অনেকে মনে করছেন, ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিককরণের জন্য এটি ছোট্ট একটি পদক্ষেপ। এর ফলে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইনের সঙ্গে ইসরায়েলের অংশীদারত্ব আরও দ্রুত বাড়বে। আরেকটি বড় অগ্রগতি যা সৌদি-ইসরায়েল ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের দিকে ইঙ্গিত দেয়। তা হলো লোহিত সাগরের তিরান ও সানাফির দ্বীপ মিসর থেকে সৌদি আরবে স্থানান্তরের জন্য তেল আবিবের অনুমোদন। সৌদি আরব ও ইসরায়েল কাছাকাছি চলে আসা সত্ত্বেও বাইডেন প্রশাসন মনে করছে, বাইডেন সফরে থাকাকালে দুই দেশের মধ্যে কোনো স্বাভাবিককরণ চুক্তি ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। এ ক্ষেত্রে এটি বিশেষভাবে বিবেচনা করা হয় যে বহু দশক ধরে ফিলিস্তিনের সমর্থক হিসেবে পরিচিত বাদশাহ সালমান এখনো সিংহাসনে রয়েছেন। সৌদি আরব-ইসরায়েল সম্পর্ক স্বাভাবিক করণের বিষয়টি সামনে আসছে মূলত যুবরাজ বিন-সালমানের কারণে। তিনি রিয়াদের সঙ্গে তেল আবিবের পূর্ণাঙ্গ কূটনৈতিক সম্পর্ক দেখতে চান। কিন্তু বিন-সালমান সিংহাসনে বসলেও রিয়াদ সম্ভবত স্বাভাবিককরণের বিষয়ে সতর্কতার সঙ্গে অগ্রসর হবে। বৃহত্তর মুসলিম বিশ্বে সৌদি আরবের ভূমিকা ও সেই সঙ্গে সৌদি আরবের ভেতরে প্রতিক্রিয়ার ঝুঁকির কথা মাথায় রাখা হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় নিজের প্রচারণায় সৌদি আরবের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন জো বাইডেন। ওয়াশিংটন পোস্টের সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে হত্যার কারণে সৌদিকে বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার কথাও বলেন তিনি। ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানই যে খাসোগি হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন সেই তথ্যও প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর প্রকাশ্যে নিয়ে আসেন বাইডেন। তবে সেদিন গত হয়েছে অনেক আগেই। সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথমবারের মতো মধ্যপ্রাচ্য সফর করছেন বাইডেন। এই সফরে এ অঞ্চলের মানবাধিকার নিয়ে তার পূর্বেকার অবস্থান আর দেখা যাচ্ছে না। হোয়াইট হাউস এখন মনে করছে, যেকোনো উপায়েই হোক তার পুরনো বন্ধু সৌদি আরবকে তাদের প্রয়োজন। মূলত ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনই যুক্তরাষ্ট্রের এই অবস্থান পরিবর্তনের আসল কারণ। দেশটি এখন রাশিয়াকে শাস্তি দিতে বিশ্বজুড়ে নানা পদক্ষেপ, প্রচারণা চালাচ্ছে। এই যুদ্ধ শেষ হয়ে গেলেও রাশিয়ার সঙ্গে রেষারেষি যে নতুন যুগে পা দিয়েছে তা অস্বীকারের সুযোগ নেই যুক্তরাষ্ট্রের। আর সে কারণেই মিত্রের সংখ্যা বৃদ্ধি প্রয়োজন দেশটির। একই কারণে বাইডেনকে তার সেই পূর্বেকার কথাগুলোকে গিলে ফেলতে হচ্ছে। সৌদি আরবের মানবাধিকার রেকর্ড তুলে ধরবেন তার দিকেই নজর পুরো বিশ্বের।পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় রাশিয়া ধুঁকছে। রাশিয়াকে বিশ্ব অর্থনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন করতে উঠেপড়ে লেগেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একাংশ। কিন্তু দেশটির আছে ১.৭ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি। নিজেদের অর্থনীতির ক্ষতি না করে তাই রাশিয়াকে শাস্তি দেয়া অসম্ভব পশ্চিমা দেশগুলোর জন্য। এরইমধ্যে অনেক পশ্চিমা মিত্র দেশই রাশিয়ার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে। সিরিয়ার কারণে যে নিরাপত্তা ঝুঁকিতে ইসরাইল রয়েছে, তা থেকে নিশ্চিন্তে থাকতে রাশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে দেশটি। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক দারুণ রাখায় সৌদি আরবেরও স্বার্থ রয়েছে। সৌদি আরব তেলভিত্তিক অর্থনীতির দেশ, অন্যদিকে রাশিয়া বিশ্বের প্রধান তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর একটি। 

বিশ্বের জ্বালানি বাজারে প্রভাব বৃদ্ধিতে তাই রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক থাকার প্রয়োজন রিয়াদের।  তবে সৌদি-রাশিয়া সম্পর্ক এখনো সৌদি-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের মতো গভীর নয়। দশকের পর দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবের মিত্র রাষ্ট্র। অপরদিকে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে সৌদির সম্পর্ক ছিল বৈরী। আফগানিস্তানে সোভিয়েত ইউনিয়নের যুদ্ধ মেনে নিতে পারেনি দেশটি। ১৯৯২ সালে যদিও দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক যোগাযোগ শুরু হয়। তবে সেটি কখনো বন্ধুত্বে পরিণত হয়নি। এর মানে এই না যে, সৌদি আরবকে যুক্তরাষ্ট্র যা বলবে তা তারা মেনে নেবে। ২০১৬ সাল থেকেই ক্রমশ নিজেদের কাছাকাছি আসছে সৌদি ও রাশিয়া। তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর সংগঠন ওপেকে যোগ দিতে রাশিয়াকে রাজি করায় সৌদি আরব।  রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার কারণে এখন বিশ্বজুড়ে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে চলেছে। গত জুন মাসে ওপেক সিদ্ধান্ত নেয় তারা তেল বিক্রি বৃদ্ধি করবে। কিন্তু এখনো উৎপাদন টার্গেট পূরণ করতে পারেনি। এই অঞ্চলে তেল উৎপাদন বৃদ্ধি হলে সেটি যুক্তরাষ্ট্রের তেলের বাজারে প্রভাব ফেলতে কয়েক মাস সময় লাগবে। কিন্তু মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগে বাইডেনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে তেলের দাম হ্রাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু।  সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের উপর থেকে ভরসা হারিয়ে ফেলেছে সৌদি আরব। আর এটিই রাশিয়ার জন্য সৌদির কাছে যাওয়ার সুযোগ তৈরি করেছে। মানবাধিকার ইস্যুকে গুরুত্ব দেয়ার কারণে সৌদি আরবও অনেক ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে না। ফলে এই সম্পর্কে প্রায়ই ফাঁকা স্থানের সৃষ্টি হচ্ছে আর রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন লাফিয়ে গিয়ে সেই স্থানটি দখল করে নিচ্ছেন। যদিও দীর্ঘ মেয়াদে সৌদি আরবকে দেয়ার মতো কিছুই নেই রাশিয়ার।

লেখক: রায়হান আহমেদ তপাদার, গবেষক ও কলামিস্ট।

এসএ/