বন্দর কর্তৃপক্ষকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কনটেইনারের স্তূপ বাড়াচ্ছে আমদানিকারকরা


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


বন্দর কর্তৃপক্ষকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কনটেইনারের স্তূপ বাড়াচ্ছে আমদানিকারকরা

দ্রুত আমদানি পণ্য খালাস করতে গত ১৩ জুলাই বন্দর ব্যবহারকারীদের কাছে চিঠি পাঠায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। চিঠিতে চারগুণ বাড়তি মাশুল আদায়ের হুশিয়ারিও দেয়া হয়। রোববার (১৭ জুলাই) থেকে খুলেছে কারখানাও। এতদিনে বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ড থেকে আমদানি পণ্য খালাসে গতিশীলতা আসার কথা থাকলেও দেখা যাচ্ছে উল্টো চিত্র। 

পবিত্র ঈদুল আজহার কারণে দশদিনের ছুটিতে ছিল চট্টগ্রামের শিল্পকারখানা গুলোতে। পাঁচদিন আগে কারখানার চাকা ঘুরলেও পণ্য খালাসে বেশ অনীহা দেখা গেছে আমদানিকারকদের। দিনে দিনে বন্দরের ইয়ার্ডে বাড়ছে কনটেইনারের স্তূপ। চারদিন আগে ৪০ হাজারের বেশি কনটেইনার থাকলেও এখন পর্যন্ত বন্দরের ইয়ার্ডে জমেছে ৪৪ হাজার ৬২১ টিইইউএস কনটেইনার। 

চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা গেছে, স্বাভাবিক সময়ে বন্দর থেকে প্রতিদিন চার হাজার কনটেইনার ডেলিভারি হয়। তবে ঈদের পর তা হাজারের ঘরে নেমে আসলেও বর্তমানে চার থেকে সাড়ে চার হাজার কনটেইনার ডেলিভারি হচ্ছে। পণ্য ডেলিভারিতে গতিশীলতা আসলেও বন্দরের ইয়ার্ডে কমানো যাচ্ছে না কনটেইনারের স্তূপ। আমদানি পণ্য দ্রুত খালাসে আমদানিকারকের অনীহা এবং জাহাজ থেকে প্রতিনিয়ত কনটেইনার বন্দর ইয়ার্ড এ নামানোর কারণে জট বাধছে। 

সূত্র আরো জানায়, বন্দরে ৫৩ হাজার টিইইউএস কনটেইনার রাখার ধারণক্ষমতা থাকলেও বন্দরের কাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য কিছু স্পেস বা জায়গা খালি রাখতে হয়। ঈদের আগে গত ৮ জুলাই ৩৭ হাজার ৯৯০ টিইইউএস কনটেইনার ছিল বন্দরে। ঈদের ছুটির পর ১২ জুলাই তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪২ হাজার ৮শ এককে। আজ বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) বন্দরে ৪৪ হাজার ৬২১ টিইইউএস কনটেইনার জমেছে। 

বন্দর কর্মকর্তারা জানান, আমদানি পণ্য যথাসময়ে খালাস না করায় বন্দরে কনটেইনারের সারি বাড়ছে। এতে করে বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম বিঘ্ন হচ্ছে। বিদেশ থেকে আগত জাহাজের পণ্য যথাসময়ে নামানো যাচ্ছে না। এতে করে বন্দরের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। বর্তমানে বন্দরের বহিনোঙ্গরে কনটেইনারবাহী ১১টি জাহাজ, জেনারেল কার্গো ৯টি ও ক্লিংকারবাহী ১টি জাহাজ খালাসের অপেক্ষায় আছে। পাশাপাশি ১৬টি জেনারেল কার্গো, একটি ফুড গ্রেইন জাহাজ, দুটি সারবাহী জাহাজ, ১৪টি ক্লিংকারবাহী জাহাজ, একটি চিনিবাহী ও চারটি তেলবাহী জাহাজের খালাস কার্যক্রম চলমান আছে। এ কারণে বন্দরে কনটেইনার জট বাড়ছে। 

এদিকে চট্টগ্রাম বন্দরে দীর্ঘদিন পড়ে থাকা আমদানি পণ্য দ্রুত খালাস নিতে আমদানিকারকদের অনুরোধ জানিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। বুধবার (২০ জুলাই)’র মধ্যে পণ্য খালাসে প্রত্যাশিত গতি না আসলে ২৫ জুলাই থেকে চারগুণ স্টোর রেন্ট বা গুদাম ভাড়া আরোপ করা হবে- এমন সিদ্ধান্তেও অনড় রয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। তবে এরপরও আমদানি পণ্য খালাসে কোন গতি আসেনি। 

বিজিএমইএর সহসভাপতি রকিবুল আলম চৌধুরী জনবাণীকে জানান, “ঈদের পর কিছুদিন কারখানা বন্ধ থাকে। প্রতিবছরই এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়। এটা স্বাভাবিক হতে দু সপ্তাহের মত সময় লাগে। আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে কোন কারখানা মালিকের আমদানি পণ্য থাকলে তা দ্রুত খালাসের তাগিদ দিয়েছি।” 

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক জনবাণীকে বলেন, “আমদানির পর দীর্ঘসময় পেরিয়ে গেলেও বন্দর থেকে আমদানি পণ্য খালাস না করলে শেডের প্রায় পুরো জায়গা পণ্যে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। এতে করে নতুন পণ্য আনস্টাফিং করতে বাধার সম্মুখীন হতে হয়।” 

তিনি বলেন, “গত ১৩ জুলাই যথাসময়ে পণ্য খালাস না করলে চারগুণ বাড়তি মাশুল আদায় করা হবে এ মর্মে বন্দর ব্যবহারকারীদের চিঠি দেয়া হলেও বাস্তবে এর কোন ফল পাওয়া যায়নি। কারখানা খোলার পর ভেবেছিলাম ডেলিভারি বাড়বে। কিন্তু তার উল্টো চিত্রই দেখা যাচ্ছে। আমরা আর কদিন সুযোগ দিব। এরপর ২৫ জুলাই থেকে জরিমানা আদায় হবে।”

এসএ/