ড্রাগন চাষে বাহা উদ্দিনের বাজিমাত


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


ড্রাগন চাষে বাহা উদ্দিনের বাজিমাত

ময়মনসিংহের ত্রিশালে আমিরাবাড়ী ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চল গোপালপুর গ্রামের চারদিকে সবুজের সমারোহে বাহা উদ্দিন গড়ে তুলেছেন মেহেদী ড্রাগন বাগান। প্রায় ২ একর জমিতে গড়ে উঠেছে মেহেদী ড্রাগন বাগান। বাগানের মালিক মুন্সিগঞ্জ জেলার বাহা উদ্দিন। ড্রাগন ফল চাষে সফলতা অর্জন করেছেন তিনি। বাগানের ড্রাগন ফল বিক্রি করে প্রথম মাসেই আয় লাখ টাকা।

সরেজমিনে দেখা যায়, সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে ২ হাজারের উপরে ড্রাগন ফল গাছ। সিমেন্টের পিলারের সাথে আটকানো সবুজ গাছে শোভা পাচ্ছে গোলাপি, লাল আর সবুজ ফল। প্রথম বারই বিদেশি এ ড্রাগন ফলের চাষ করে সফলতা দেখিয়েছেন তিনি। প্রথম মাসেই তাই ১ লাখ টাকার ফল বিক্রি করেছেন। আরো ছয় মাস বিক্রি করবেন বলেও জানান তিনি। তিনি ফলের পাশাপাশি ড্রাগন ফলের চারা খুচরা ও পাইকারী বিক্রি করেছেন। তিনি ফল প্রেমি ও সৌখিন ড্রাগন চাষিদের জন্য ফল ও চারা সরবরাহ করছেন। এই ড্রাগন চাষেই নিজে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি ত্রিশাল উপজেলায় ড্রাগন চাষের বৈপ্লবিক পরিবর্তনের মাধ্যমে কৃষিক্ষেত্রে অনন্য অবদান রাখছেন বাহা উদ্দিন।

মেহেদী ড্রাগন বাগানের ব্যবস্থাপক মাজাহারুল ইসলাম জনবাণীকে জানান, ‍“আমার বাগান মালিকের বাড়ি মুন্সিগঞ্জ। সে থাইল্যান্ড থেকে ড্রাগন ফল বাংলাদেশে এনে বিক্রি করতেন। পরে এখানে ২ একর জমিতে ড্রাগন ফলের চাষ শুরু করেন ১২ মাসেই এবার প্রথম ফল আসে। এ মাসে ১ লাখ টাকার ফল বিক্রি করেছি। আরো ছয় মাস বিক্রি করতে পারবো। গাছে প্রতিদিন ফুল ও ফল আসতেছে। এক একটি ড্রাগন ফল ৭০০-৮০০ গ্রাম পর্যন্ত ওজনের হয়। বাগান থেকে প্রতি কেজি ড্রাগন ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পাইকারি দরে বিক্রি হয়। ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকার আসে। ফলের পাশাপাশি ড্রাগনের চারাও বিক্রি করা হয়। প্রতিটি চারা ৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। আমিসহ আরও তিন জন শ্রমিক বাগানের দেখাশোনা করি।”

মেহেদী ড্রাগন বাগানের মালিক বাহা উদ্দিন জনবাণীকে জানান, “আমি একজন থাইল্যান্ডে প্রবাসী। সেখান থেকে ড্রাগন ফল বাংলাদেশে এনে বিক্রি করি। ২০২১ সালে চিন্তা করি বাংলাদেশে এর চাষ করবো। তাই ত্রিশালে গোপালপুর এলাকায় ২ একর জমি লিজ নিয়ে ২ হাজার ড্রাগন ফলের চারা রোপন করি। ১ বছরেই এবার প্রথম ফল আসে। আমার বাগানে ড্রাগনের পাশাপাশি মাল্টা ও লেবুর চাষ ও শুরু করেছি। গাছে লেবু ও মাল্টা আসতে শুরু করেছে। ড্রাগন ফল শীত মওসুমে চার মাস ছাড়া বছরের বাকি আট মাস ড্রগনের ফলন অব্যাহত থাকে।”

ড্রাগন ফল কিনতে আসা পাইকার রহমত আলী জনবাণীকে জানান, “আমি এ এলাকার ড্রাগন ফলের কথা শুনে কিনতে আসছি। আমি ড্রাগন ফল নিয়ে ঢাকায় বিক্রি করি। বাগান থেকে ২০০ টাকা করে কিনে ঢাকায় ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করি। এই ফল বাংলাদেশে এখন অনেক জনপ্রিয়।”

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানিয়া রহমান জনবাণীকে বলেন, “ড্রাগন ক্যাকটাস জাতীয় গাছ হওয়ায় রোগ বালাই কম। পুষ্টিগুণ, আকার-আকৃতি ও দামের কারণে বাজারে এই ফলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে । চারা লাগানোর এক বছরের মধ্যে ফল আসতে শুরু করে। অন্য ফসলের তুলনায় ড্রাগন চাষ লাভজনক। মেহেদী ড্রাগন বাগানে ১৩ মাসে ফল আসে। তার দেখাদেখি এখন অনেকেই ড্রাগন চাষে ঝুঁকছেন।”  

ড্রাগন বিদেশী একটি ফল। বিদেশি এ ফলের ব্যাপক চাহিদা থাকায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে। ক্যালরি, প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার ও চিনি মিশ্রিত মিষ্টি স্বাদের রসালো ফল ড্রাগন। খেতে যেমর সুস্বাদু ,শরীরের জন্যও তেমন উপকার।বর্তমানে তাই লাল ও হলুদ চামড়া দিয়ে বেষ্টিত এই রসালো ফলটি বাংলাদেশে ব্যপক সাড়া পেয়েছে।

এসএ/