বর্ষাকালীন তরমুজ চাষে বরগুনার দুই কৃষকের চমক
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২
বর্ষাকালীন তরমুজ চাষে চমক দেখালেন বরগুনার আঃ আলিম (৩৫) ও জুলহাস আহম্মেদ (৪০)। পরিশ্রম আর বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে দুজনেই হয়েছেন স্বাবলম্বী। আঃ আলিম গত বছর ৭০ শতাংশ জমি থেকে আয় করেন ৩ লাখ টাকা। তবে জুলহাস এ বছর নতুন, ৮০ শতাংশ জমিতে চাষা করছেন তরমুজ।
বরগুনা সদর উপজেলার সদর ইউনিয়নে আঃ আলিম এবং এম. বালিয়াতলী ইউনিয়নের জুলহাস মিয়া ইউটিউবে অসময়ে এমন বর্ষাকালীন তরমুজ চাষ পদ্ধতি ভিডিও দেখে তাঁর আগ্রহ বেড়ে যায়। এরপর আঃ আলিম নিজের ৮০ শতাংশ ও জুলহাস মিয়াও এ বছর নতুন করে ৮০ শতাংশ জমিতে চাষ করেন তরমুজ।
বর্ষার মৌসুমে তরমুজ চাষ করে এলাকায় সাড়া ফেলেছেন এই দুই কৃষক। প্রতিটি তরমুজ বেশ বড়। গড় ওজন ৫-৬ কেজি। এমন তরমুজের খেত দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন আসছেন হরহামেশাই। এ তরমুজ গুণে-মানে খুবই ভালো এবং বেশ সুস্বাদু বলে জানান এলাকবাসী। মৌসুমী তরমুজের চাইতে মিষ্টি হওয়ায় বাজারে বেশ চাহিদা রয়েছে বলে জানান এই দুই চাষী।
বর্ষাকালীন তরমুজ চাষের বিষয়ে কৃষক আঃ আলিম জনবাণীকে জানান, “অনলাইনে ঘেরের পাশে তরমুজ খেত দেখে অনুপ্রেরণা জাগে। আমি মন স্থির করি বর্ষা মৌসুমে তরমুজ চাষের। এরপর মালচিং পদ্ধতিতে জমিতে বেড তৈরী করি। গত বছর বেড তৈরিতে খরচ ৩০ হাজার টাকা, এ বছর খরচ হয়েছে মাত্র ১০ হাজার টাকা। এক হাজার টাকায় পাকিজা, ইস্পাহানি কোম্পানীর তরমুজ বীজ কিনে বপন করি।”
এম. বালিয়াতলীর জুলহাস জনবাণীকে বলেন, “সর্বমোট আমার খরচ হয়েছে ৬০-৭০ হাজার টাকা। তরমুজ বিক্রি হয়েছে আনুমানিক ৪-৫ লাখ টাকা। আমি ভবিষ্যতে তরমুজ চাষ করব। বর্তমানে দুইবিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। এর আগে শশা চাষ করে সফলতা পেয়েছিলাম। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা আর্থিক কোন সহযোগিতা করেন নি। কিন্তু সার্বক্ষণিক বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করেছেন। চাইলে যে কেউ এ তরমুজ চাষ করতে পারেন।”
বর্ষাকালে তরমুজ চাষের সুবিধা উল্লেখ করে তারা বলেন, “বছরের অন্য সময়ের চাইতে বর্ষাকালে তরমুজ চাষের সুবিধা হলো পানি দিতে হয় না। সার কম লাগে এবং মালচিং পদ্ধতিতে চাষ করার কারণে খরচ নাই বললেই চলে। এই তরমুজ চাষের আরেকটি সুবিধা হলো কোন কিটনাশক ব্যবহার করতে হয় না। বর্তমানে স্থানীয় লোকজন, সাংবাদিক ও দূর দূরান্ত থেকে তরমুজ ক্ষেত দেখতে অনেক লোক আসছে।”
এ বিষয়ে বরগুনা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোস্তাফিজুর রহমান জনবাণীকে বলেন, “জুলহাস ও আঃ আলিম আমাদের পরিচিত কৃষক। গত বছর আঃ আলিম তরমুজ চাষ করে সাফল্য লাভ করছে। এবছরও তিনি তরমুজ চাষ করেছে এবং এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের জুলহাস মিয়া গতবছর শশা চাষ করে সাফল্য এসেছিল। এবার তিনি বর্ষাকালে ৮০ শতাংশ জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। বেশ ভালো লাভ হবে মনে হচ্ছে। সিজিন্যাল তরমুজের চাইতে এ তরমুজের স্বাদ অনেকটাই বেশি। যে কেউ সবজি, ফলমূল চাষ করতে চাইলে তাদেরকে সাহায্য সহযোগিতা সবসময়ই করা হয়। বরিশাল, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, বরগুনা, মাদারীপুর ও শরীয়তপুর কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “বর্ষাকালীন তরমুজ চাষে চমক দেখালেন আঃ আলিম ও জুলহাস মিয়া। তাঁর এ সাফল্য দেখে উপজেলা অনেকেই তরমুজ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। তারা বর্ষাকালীন সবজি চাষের প্রতি বেশ আগ্রহ দেখাচ্ছেন।”
এসএ/