মসজিদে নববি-এর ইতিবৃত্ত (পর্ব ৫)

বিজ্ঞাপন
নববি-এর দক্ষিণ-পূর্ব পাশে অবস্থিত হযরত রাসুল (সা.)-এর রওজা মোবারকের উপরের গম্বুজটি পুনর্নির্মাণ করেন। তিনি ১৮৩৭ খ্রিষ্টাব্দে (১২৫২ হিজরি) গম্বুজটিতে সর্বপ্রথম সবুজ রং করেন। পরবর্তীতে এই গম্বুজের রং আর পরিবর্তন করা হয়নি। এই গম্বুজটি ‘কুব্বেই হাদরা’ নামে অধিক পরিচিত। আরবি ‘কুব্বেই হাদরা’ শব্দের বাংলা অর্থ সবুজ গম্বুজ (ঞযব এৎববহ উড়সব)
১৭তম সংস্কার
উদ্যোগ গ্রহণকারী: ৩১তম উসমানিয়য় সুলতান ১ম আবদুল মজিদ
বিজ্ঞাপন
সময়: ১৮৪৯-১৮৬২ খ্রিষ্টাব্দ (১২৬৫-১২৭৮ হিজরি)
বিবরণ: ১৪৮৫ খ্রিষ্টাব্দে ৪৭তম মামলুক সুলতান সাইফুদ্দিন কাইতবে মসজিদে নববি-এর ব্যাপক সংস্কার সাধন করেন। এরপর ১৪৮৫ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৮৪৯ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত প্রায় ৩৬৪ বছর কোনো মুসলিম শাসক সুলতান সাইফুদ্দিন কাইতবে-এর নির্মিত অবকাঠামোর সংস্কার করেননি। দীর্ঘকাল সংস্কার না করার কারণে মসজিদের কিছু কিছু জায়গায় ফাটল দেখা দেয়, দেওয়াল ও ছাদ নষ্ট হয়ে যায়। এমতাবস্থায় ১৮৪৭ খ্রিষ্টাব্দে (১২৬৩ হিজরি) তৎকালীন মসজিদে নববি-এর ইমাম দাউদ পাশা মসজিদে নববি সংস্কারের অনুরোধ জানিয়ে ৩১তম উসমানিয়য় সুলতান ১ম আবদুল মজিদ (শাসনকাল: ১৮৩৯-১৮৬১ খ্রি.)-কে চিঠি পাঠান। এই চিঠি পাওয়ার পর সুলতান ১ম আবদুল মজিদ তৎক্ষণাৎ মসজিদে নববি পর্যবেক্ষণ এবং পরিদর্শনের জন্য প্রকৌশলী-সহ তার বিশ্বস্ত একটি প্রতিনিধিদল প্রেরণ করেন। এই প্রতিনিধিদল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সুলতানকে জানালেন যে, মসজিদটিকে নতুনভাবে নির্মাণ করা অতীব জরুরি। অতঃপর ১৮৪৯ খ্রিষ্টাব্দে (১২৬৫ হিজরি) সুলতান ১ম আবদুল মজিদ প্রয়োজনীয় উপকরণ-সহ তার অধীনস্থ হালিম এফেন্দি-কে মদিনায় প্রেরণ করেন। শ্রমিকরা নির্মাণ কাজের জন্য পাহাড় থেকে আকিক পাথরের ন্যায় লাল রঙের বড়ো বড়ো পাথরের টুকরা কেটে আনেন। এক পাশের নির্মাণ কাজ শেষ করে অন্য পাশের নির্মাণ কাজ শুরু করা হতো, যেন নামাজিদের কোনো অসুবিধা না হয়। সুলতান ১ম আবদুল মজিদ মসজিদে নববি-কে ব্যাপকভাবে বিস্তৃত করেন। তিনি মসজিদের আয়তন ১৩,৯২০ বর্গফুট বৃদ্ধি করেন। ফলে মসজিদের মোট আয়তন হয় ১,৩৭,৪৬০ বর্গফুট। এই সময় পূর্বের স্তম্ভগুলিকে ফেলে দিয়ে নতুন স্তম্ভ তৈরি করা হয়। তিনি ছাদের বিভিন্ন অংশকে একত্রিত করেন এবং স্তম্ভগুলি সীসা দ্বারা ও দরজাগুলি স্বর্ণ দ্বারা সৌন্দর্যমন্ডিত করেছিলেন। হযরত রাসুল (সা.)-এর রওজা মোবারকের স্তম্ভগুলি সাদা ও লাল রংয়ের দুর্লভ মার্বেল পাথর দ্বারা সুসজ্জিত করা হয় যেন স্তম্ভগুলো আলাদা ও বিশেষ মনে হয়। পূর্বে মসজিদের বারান্দায় ৪টি প্রবেশদ্বার ছিল। ‘বাবে মজিদি’ নামে নতুন আরও ১টি প্রবেশদ্বার নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে এই প্রবেশদ্বারটি মসজিদের ভিতরে অবস্থিত। তবে সুলতান সাইফুদ্দিন কাইতবে-এর সময়ে নির্মিত হযরত রাসুল (সা.)-এর রওজা শরীফ, পশ্চিম দিকের দেওয়াল, মেহরাবে নববি, মেহরাবে সুলাইমানি, মেহরাবে উসমানিয়, মিম্বর এবং সুলাইমানিয়া মিনার মজবুত ও সৌন্দর্যপূর্ণ ছিল বিধায় সুলতান ১ম আবদুল মজিদ এই স্থাপনাগুলোর সংস্কার করেননি। দক্ষিণে নামাজ আদায়ের স্থানটি প্রস্থে দ্বিগুণ করা হয় এবং হযরত রাসুল (সা.)-এর রওজা মোবারক, মিহরাব অঞ্চল, বাবে সালাম ব্যতীত নামাজ আদায়ের সম্পূর্ণ স্থানটি ছোটো ছোটো আকারের গম্বুজ দ্বারা আবৃত করা হয়। ছাদের সকল গম্বুজে নকশা ও কারুকার্য করা হয়। মসজিদের সামনের দেওয়ালে সোনালি অক্ষরে পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন সূরা, হযরত রাসুল (সা.)-এর নাম ইত্যাদি নকশা অঙ্কন করা হয়।
তিনি মসজিদের বিছানার উপর এবং কেবলার দিকের দেওয়ালের অর্ধেক পর্যন্ত মার্বেল পাথর স্থাপন করেন। মসজিদে নববি-এর মেঝে সমান না থাকায় তা ভেঙে সমান করেন। সীমানার ভিত্তি পূর্বের মতো গভীর করে খনন করে কালো পাথর দিয়ে তৈরি করেন। ৫ম উমাইয়া খলিফা ১ম ওয়ালিদ-এর আমলে মসজিদের উত্তর-পশ্চিম কোণে, উত্তর-পূর্ব কোণে, পূর্ব-দক্ষিণ কোণে এবং পশ্চিম-দক্ষিণ কোণে ৪টি মিনার ছিল। সুলতান ১ম আবদুল মজিদ এই ৪টি মিনার পুনর্নির্মাণ করেন। সেই সাথে তিনি পশ্চিমে ‘বাবুর রাহমাহ’ নামে নতুন আরও ১টি মিনার তৈরি করেন। এসময় মসজিদ নববি-কে এমন সুন্দর কারুকার্যে খচিত করা হয়েছিল, যা ইতঃপূর্বে হয়নি। বর্তমান মসজিদে নববিতেও ঐ আমলের কিছু অংশ ঠিক সেইভাবেই রাখা হয়েছে, যা মজবুত ও কারুকার্যমণ্ডিত হওয়ার কারণে সংস্কারের প্রয়োজন পড়েনি। এই সংস্কারকার্যে প্রায় ৭ লাখ ৫০ হাজার উসমানিয়য় মুদ্রা ব্যয় হয়। সুলতান আবদুল মজিদ মসজিদে নববি-এর কাজ সম্পর্কে খুবই সচেতন ছিলেন। তিনি ১৮৪৯ খ্রিষ্টাব্দে (১২৬৫ হিজরি) মসজিদে নববি-এর পুনর্নির্মাণ শুরু করেন এবং প্রায় ১৩ বছর কাজ করার পর ১৮৬২ খ্রিষ্টাব্দে (১২৭৮ হিজরি) নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়।
বিজ্ঞাপন
১৮তম সংস্কার (১ম সৌদি সম্প্রসারণ)
উদ্যোগ গ্রহণকারী: বাদশাহ আবদুল আজিজ আল সৌদ এবং বাদশাহ সৌদ বিন আবদুল আজিজ
সময়: ১৯৪৯-১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দ (১৩৬৮-১৩৭৫ হিজরি)
বিজ্ঞাপন
বিবরণ: ১৮৬২ খ্রিষ্টাব্দের পরে মসজিদে নববি-এর আর কোনো সংস্কার বা সম্প্রসারণ করা হয়নি। যার ফলে মসজিদের কাঠামোতে ফাটল সৃষ্টি হয়, বিশেষ করে উত্তর অংশে। তাছাড়া ক্রমবর্ধমান মুসল্লিদের আগমন এবং হজের মৌসুমে মুসল্লিদের সংখ্যা আরো বহুগুণে বেড়ে যাওয়ার কারনে মসজিদে নববি-তে মুসল্লিদের স্থান সংকুলান হচ্ছিল না। ফলশ্রুতিতে মসজিদে নববি-এর সংস্কার ও সম্প্রসারণ করার প্রয়োজন দেখা দেয়।
তখন ১ম সৌদি বাদশাহ আব্দুল আজিজ (শাসনকাল: ১৯৩২-১৯৫৩ খ্রি.) ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দে (১৩৬৮ হি.) মসজিদে নববি-এর সংস্কার ও সম্প্রসারণের জন্য কমিশন গঠন করেন। প্রাথমিক নির্মাণ প্রস্তুতি ও জমি অধিগ্রহণে ২ বছর অতিবাহিত হয়েছিল। কমিশন গঠনের ২ বছর পর ১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দের ৫ অক্টোবর (১৩৭০ হি.) বাদশাহ আব্দুল আজিজের পুত্র বাদশাহ সৌদ বিন আবদুল আজিজ নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। সেসময় বাদশাহ আবদুল আজিজ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী ছিলেন। এই কারণে তার পুত্র সৌদ বিন আবদুল আজিজ নির্মাণ কাজের তদারকি করতেন। ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দের ৯ নভেম্বর বাদশাহ আবদুল আজিজ মৃত্যুবরণ করার পর তার পুত্র সৌদ বিন আবদুল আজিজ বাদশাহ হন। এরপর বাদশাহ সৌদ বিন আবদুল আজিজ (শাসনকাল: ১৯৫৩-১৯৬৪ খ্রি.)-এর সার্বিক তত্ত্বাবধানেই মসজিদে নববি-এর সংস্কার এবং সম্প্রসারণ হয়েছিল। এই প্রকল্পের স্থপতি ছিলেন মিশরের বিখ্যাত স্থপতি মোস্তফা আল ফাহমি।
সেসময় মদিনার বাইরে ‘আবায়ার আলী’ নামক স্থানে একটি মোজাইক কারখানা স্থাপন করা হয়। উল্লেখ্য যে, মদিনা পবিত্র নগরী হওয়ায় অমুসলিমদের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। তাই একদল ইতালীয় অমুসলিম প্রকৌশলী মদিনায় প্রবেশ না করে সেখানে অবস্থান করে পুনর্র্নির্মাণ কাজের নেতৃত্ব দেন। মার্বেল পাথর এবং অন্যান্য নির্মাণ উপকরণ মদিনার বাহিরে অবস্থিত কারখানা থেকে মসজিদে পাঠানো হতো। এছাড়াও ‘ইয়ানবু বন্দর’ থেকে যানবাহনে করে প্রায় ৩০,০০০ মেট্রিক টন পরিমাণ নির্মাণ সামগ্রী মদিনায় পরিবহন করা হয়েছিল ।
বিজ্ঞাপন
এসময় মূলত মসজিদে নববি-এর উত্তর অংশ সম্প্রসারিত করা হয়েছিল। তাছাড়াও পূর্ব ও পশ্চিম অংশ সামান্য প্রসারিত করা হয়েছিল। এই সম্প্রসারণের পর মসজিদে নববি আয়তক্ষেত্রের আকার লাভ করে।
শক্তিশালী কংক্রিট দিয়ে তৈরি ২৭৪টি বর্গাকৃতির এবং ২৩২টি গোলাকৃতির স্তম্ভের উপর মসজিদে নববি-এর নতুন কাঠামো নির্মাণ করা হয়েছিল। সমগ্র মসজিদ ভবনটি খোদাইকৃত পাথর দ্বারা অলংকৃত করা হয়। এই সংস্কারে নির্মিত উল্লেখযোগ্য কিছু স্থাপনা নিচে উপস্থাপন করা হলো-
পূর্বের দুটি মিনার (সুলাইমানিয়া ও মাজেদিয়া মিনার) ভেঙে সেখানে মামলুক স্থাপত্য রীতিতে (গধসষঁশ অৎপযরঃবপঃঁৎব ঝঃুষব) দুটি নতুন মিনার নির্মাণ করা হয় এবং আরও দুটি নতুন মিনার মসজিদের উত্তর-পূর্ব ও উত্তর-পশ্চিম দিকে স্থাপন করা হয়। এই ৪টি মিনারের প্রতিটির উচ্চতা ছিল ২৩৬ ফুট।
বিজ্ঞাপন
মসজিদের উত্তর দিকের বর্ধিত অংশে মার্বেল পাথর নির্মিত নতুন আরো একটি আঙিনা (ঈড়ঁৎঃুধৎফ) নির্মাণ করা হয়।
মসজিদের পূর্ব, পশ্চিম প্রান্তে এবং আঙিনার উভয় পাশে ছাউনি নির্মাণ করা হয়।
মসজিদের পশ্চিম প্রান্তে একটি লাইব্রেরি স্থাপন করা হয়। যেখানে পবিত্র কুরআনের ঐতিহাসিক পাণ্ডুলিপি ও অন্যান্য ধর্মীয় গ্রন্থাবলি সংরক্ষিত আছে।
বিজ্ঞাপন
নতুন ৫টি প্রবেশদ্বার নির্মাণ করা হয়। ফলে মসজিদে নববি-এর প্রবেশদ্বারের সংখ্যা দাঁড়ায় ৪১টিতে । নব নির্মিত ৫টি প্রবেশদ্বার হলো-
আবদুল আজিজ দরজা: মসজিদে নববি-এর পূর্ব দেওয়ালে বাব উন নিসা-এর পরে এটি অবস্থিত। বাব উন নিসা-এর পাশাপাশি তিনটি দরজার মধ্যে এই দরজাটি বৃহত্তম।
উসমান ইবন আফফান দরজা: মসজিদে নববি-এর উত্তর-পূর্ব কোণে এই দরজাটি অবস্থিত।
বিজ্ঞাপন
মজিদি দরজা: উত্তর দেওয়ালের মধ্যবর্তী স্থানে এই দরজাটি অবস্থিত। ৩১তম উসমানীয় সুলতান ১ম আবদুল মজিদের নির্মাণের স্মৃতি স্বরূপ এর নামকরণ করা হয়।
উমার ইবনে খাত্তাব দরজা: মসজিদে নববি-এর উত্তর-পশ্চিম কোণে এই দরজাটি অবস্থিত।
সৌদ দরজা: পশ্চিম দেওয়ালের মধ্যভাগে এই দরজাটি অবস্থিত। বাবুর রাহমাহ-এর উত্তরে পাশাপাশি তিনটি দরজার মধ্যে এটি বৃহত্তম দরজা।
বিজ্ঞাপন
মসজিদের দক্ষিণ অংশে হযরত রাসুল (সা.)-এর সাথে স্মৃতিবিজড়িত উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক স্থাপনাসমূহ এবং সুলতান আব্দুল মজিদ কর্তৃক নির্মিত স্থাপনাসমূহের কোনো পরিবর্তন করা হয়নি। যার মধ্যে ছিল হযরত রাসুল (সা.)-এর রওজা মোবারক, মিহরাবে নববি, মিম্বর, ঐতিহাসিক স্তম্ভসমূহ, সবুজ গম্বুজ এবং প্রধান মিনার। এই সংস্কারের পর মসজিদে নববি-এর নতুন ভবনের আয়তন দাঁড়ায় ১,২৫,৫৮০ বর্গফুট যা উত্তর-দক্ষিণে ৪২০ ফুট এবং পূর্ব-পশ্চিমে ২৯৯ ফুট । মসজিদ ভবনের আশেপাশের বর্ধিত এলাকার মোট আয়তন ৬৪,৮৪২ বর্গফুট। ফলে মসজিদের সর্বমোট আয়তন দাঁড়ায় ১,৯০,২২০ বর্গফুট। এই সম্প্রসারণের ফলে মসজিদে নববি-তে একসাথে ২৮,০০০ লোক নামাজ আদায় করতে পারত।
এই নির্মাণ কাজে ৭ কোটি সৌদি রিয়াল খরচ হয়। ৩ কোটি রিয়াল মসজিদ নির্মাণে এবং ৪ কোটি রিয়াল জমি অধিগ্রহণে ব্যয় হয়। মসজিদে নববি-এর নির্মাণ কাজ প্রায় ৫ বছর পর ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর মাসে (১৩৭৫ হিজরির রবিউল আউয়াল) আনুষ্ঠানিকভাবে সমাপ্ত হয়।
১৯তম সংস্কার:
বিজ্ঞাপন
উদ্যোগ গ্রহণকারী: বাদশাহ ফয়সাল বিন আবদুল আজিজ
সময়: ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দ (১৩৯৩ হিজরি)
আধুনিক অবকাঠামো নির্মাণ, সহজ যাতায়াত ব্যবস্থা এবং উন্নত বাসস্থানের ফলে ১৯৬০-এর দশকের শুরুতে মদিনায় হযরত রাসুল (সা.)-এর রওজা শরীফ জিয়ারতকারীদের সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পায়। ১৯৭০ সালে এই সংখ্যা প্রায় ১০ লাখে পৌঁছে । পূর্ববর্তী সংস্কার সত্ত্বেও মসজিদে নববি-তে মুসল্লিদের স্থান সংকুলান হচ্ছিল না। উক্ত সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে বাদশাহ ফয়সাল (শাসনকাল: ১৯৬৪-১৯৭৫ খ্রি.) মসজিদের পশ্চিম পার্শ্বে ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে (১৩৯৩ হি.) অস্থায়ী ছাউনি স্থাপনের নির্দেশ দেন। তখন মসজিদের ঐ পাশের জমি ক্রয় করা হয় এবং ক্রয়কৃত জমির ভবনসমূহ ভেঙে ৩,৭৬,৭৩৬ বর্গফুট এলাকা জুড়ে অস্থায়ী ছাউনি নির্মাণ করা হয়। এই অস্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে অধিক সংখ্যক মুসল্লিদের স্থান সংকুলান সম্ভব হয়। তবে এর একটি স্থায়ী সমাধানের প্রয়োজন ছিল। ফলে ১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দে এই অস্থায়ী ছাউনিগুলো সরিয়ে নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়েছিল। ছাউনি স্থাপনের সময় বাদশাহ ফয়সাল মসজিদে নববি-তে বৈদ্যুতিক পাখা ও মাইকের ব্যবস্থা করেছিলেন। এই পুরো প্রকল্প বাস্তবায়নে ৫ কোটি সৌদি রিয়াল খরচ হয়েছিল।
২০তম সংস্কার: (২য় সৌদি সম্প্রসারণ)
উদ্যোগ গ্রহণকারী: বাদশাহ ফাহাদ বিন আবদুল আজিজ
সময়: ১৯৮৪-১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দ (১৪০৪-১৪১৪ হিজরি)
বিবরণ: মসজিদে নববি ও মক্কার মসজিদ আল-হারাম এ আগত বার্ষিক দর্শনার্থী সংখ্যা এক হলেও, মসজিদে নববি ছিল মক্কার মসজিদে আল হারাম থেকে প্রায় ১০ গুণ ছোটো। এই কারণে মসজিদে নববি-এর ব্যাপক সম্প্রসারণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে সৌদি বাদশাহ ফাহাদ (শাসনকাল: ১৯৮২-২০০৫ খ্রি.) মসজিদে নববি-এর সংস্কারের জন্য কমিশন গঠন করেন। সংস্কারের প্রাথমিক প্রস্তুতি হিসেবে পার্শ্ববর্তী এলাকার প্রায় ৪০০ ভবন বুলডোজার (ইঁষষফড়ুবৎ) দ্বারা ভেঙে নতুন মসজিদ ভবন নির্মানের জন্য জমি প্রস্তুত করা হয়। ভবনগুলোর ধ্বংসাবশেষ শহরের কিনারায় একটি নিচু জমিতে নিয়ে যাওয়া হয়।
ইট ও কৃত্রিম পাথর উৎপাদনের জন্য প্রথম সৌদি সম্প্রসারণের ন্যায় মদিনার সীমানার বাইরে একটি কারখানা স্থাপন করা হয়। এই ইট ও পাথর ভবন নির্মাণে ব্যবহার করা হয়। জমি প্রস্তুত, পরিকল্পনা প্রণয়ন, গবেষণা ও বিভিন্ন আনুষঙ্গিক কাজে প্রায় ৩ বছর সময় অতিবাহিত হয়। ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ অক্টোবর (৫ সফর, ১৪০৫ হিজরি) বাদশাহ ফাহাদ বিন আবদুল আজিজ মসজিদে নববি-এর সংস্কারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। (বাকী অংশ আগামী সপ্তাহে)
লেখক: ইমাম ড. সৈয়দ এ. এফ. এম. মঞ্জুর-এ-খোদা








