প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর

মানবতার যুবলীগ উপহার দিলেন শেখ পরশ


Janobani

জনবাণী ডেস্ক

প্রকাশ: ০৫:৪৫ পূর্বাহ্ন, ১১ই নভেম্বর ২০২২


মানবতার যুবলীগ উপহার দিলেন শেখ পরশ
ফাইল ছবি

*** কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে যুবলীগ


*** সব আন্দোলনেই সক্রিয় ভূমিকা


মোহাম্মদ জামাল মল্লিক: ঠিক ৫০ বছর আগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে ১৯৭২ সালের ১১ নভেম্বর যুব সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন শেখ ফজলুল হক মনি। শেখ মনি সম্পর্কে বলতে হলে ছিলেন একজন দক্ষ সংগঠক, বিচক্ষণ রাজনীতিবিদ, লেখক এবং সাংবাদিক। শেখ মনির প্রতিষ্ঠিত যুবলীগকে আজ মানবিক ও মানবতার যুবলীগে পরিনত করেছেন তারই বড় ছেলে শেখ ফজলে শামস পরশ। 


৫০ বছরে এসে শেখ ফজলে শামস পরশের প্রচেষ্টায় কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন আজকের যুবলীগ। 


শেখ মনি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ভাগ্নে এবং বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্ত সহচর। তিনি পারিবারিকভাবে রাজনীতির জ্ঞান অর্জন করেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত অবস্থায় ছাত্ররাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ছিলেন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬-এর ছয় দফা, ৬৯-এর গণ-আন্দোলনে ছিল তার সক্রিয় অংশগ্রহণ।


১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ছিল অসাধারণ ভূমিকা। জাতির কাছে তিনি স্মরণীয় মুজিববাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করার জন্য। গণমাধ্যমেও রেখেছেন অবদান, দেশ স্বাধীন হবার পর দৈনিক বাংলার বাণী পত্রিকা সম্পাদনা করেন। সাপ্তাহিক সিনেমারও সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭৪ সালের ৭ জুন তার সম্পাদনায় দৈনিক বাংলাদেশ টাইমস প্রকাশিত হয়।


বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান তার এই বহুমুখী প্রতিভার কারণে দেশের যুবসমাজকে নিয়ে ভাবতে এবং কাজ করতে বলেন। এরই ধারাবাহিকতায় মূলত মুক্তিযুদ্ধের চেতনার চার মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে গণতন্ত্র, শোষণমুক্ত শ্রেণি সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে যুবসমাজকে ঐক্যবদ্ধ করে, শিক্ষা, বেকারত্ব দূরীকরণ, দারিদ্র্য বিমোচন, আত্মনির্ভরশীল অর্থনীতি, কর্মসংস্থানের মাধ্যমে যুবকদের স্বাবলম্বী করতে কাজ শুরু করেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট দেশের ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে কিছু ঘাতক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার আগে ঘাতকের দল প্রথম আক্রমণ করেন শেখ মনির বাসায়। তারা জানতেন শেখ মনি জীবিত থাকলে ঘাতকেদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে না, তাই তার পরিবারসহ তাকে হত্যা করে। অল্পের জন্য বেঁচে যান শিশুপুত্র শেখ ফজলে শামস পরশ এবং শেখ ফজলে নূর তাপস।


বঙ্গবন্ধু হত্যার পর দেশের রাজনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটতে থাকে, তৈরি হয় অস্থিরতা। পাকিস্তানি ভাবধারার সরকার গঠন করে মোশতাক গণভবনে চলে দেনদরবার। ক্যান্টনমেন্টে চলে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেয়া সেনাবাহিনীদের হত্যা এবং মামলা। চলে ক্যু পালটা ক্যু। দেশের আওয়ামী লীগ, যুবলীগসহ সব নেতাকর্মীদের মামলা দিয়ে জেলে আটকে রাখা হয়। 


১৯৭৮ সালের ২য় কংগ্রেসের মাধ্যমে আবার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যুবলীগ সংগঠিত হতে থাকে প্রস্তুতি নিতে থাকেন আন্দোলনের। এদিকে জিয়া সরকার থেকে শুরু করে স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সাহসী ভূমিকা পালন করে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সব কর্মী যার উদাহরণ যুবলীগকর্মী শহীদ নূর হোসেন। শহীদ নূর হোসেন নিজের জীবন দিয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ফিরে আনার পথ দেখিয়েছেন।


২০০১-২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট যখন চারদিকে হত্যা, গুম, বাড়ি লুট, শিক্ষক হত্যা, ২১ আগস্টে বোমা হামলা করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে নিঃশেষ করতে চেয়েছিলও, ৬৪ জেলায় বোমা হামলা হয়, দুর্নীতিতে বাংলাদেশ পর পর ৫ বার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হচ্ছিল, তখন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ রাজপথে প্রতিবাদ করে। 


ভূমিকা পালন করছে ২০০৭-২০০৮ সালের সেনাশাসনের বিরুদ্ধে, যখন শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করেন তখনও রাজপথে নেমেছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ। আওয়ামী যুবলীগকে যারা বিভিন্ন কংগ্রেসের মাধ্যমে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং জেল-জুলুম সহ্য করে আবদান রেখেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানায় সংগঠন। 


আমির হোসেন আমু, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, জাহাঙ্গির কবির নানক, মির্জা আজমের মতো নেতারা সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে নিয়েছেন আজকের যুবলীগকে।


২০০৮ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন নিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। ক্ষমতায় আসার পর থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভিশন ২০২১ ঘোষণা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করতে থাকে। যার অন্যতম কাজ ছিলডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যা যুবসমাজের জন্য মাইলফলক হয়েছে, হয়েছে আর্থনৈতিক উন্নয়ন, সামাজিক উন্নয়ন, খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ, দারিদ্র্য বিমোচন, বেকারত্ব দূর, কর্মসংস্থানসহ নানা কাজ।


আর তাই যুবকদের দেশের কাজে লাগানোর জন্য যুবলীগের ধারাবাহিক কংগ্রেসের মাধ্যমে নেতৃত্বের পরিবর্তন হয়। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৯ সালের ৭ম কংগ্রেসে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে যুবলীগের নেতৃত্বে আসেন শেখ ফজলে শামস পরশ। শেখ ফজলে শামস পরশকে চেয়ারম্যান এবং মইনুল হোসেন খান নিখিলকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। শেখ ফজলে শামস পরশ ও মাঈনুল হোসেন খান নিখিল যুবলীগের নেতৃত্বে আসার পর থেকে যুবলীগকে নানাভাবে সংগঠিত করে চলছেন।


এবারে যুবলীগ গঠিত হয়েছে মেধাবী তরুণদের নিয়ে যার প্রমাণ ইতোমধ্যে যুবসমাজ পেয়েছে। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশে যখন করোনা মহামারি শুরু হলো, তখন মানুষের সেবায় কাজ করছে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ। যাদের খাবার নেই তাদের খাবার ব্যবস্থা করা, করোনা কালে যখন মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারে না তখন অসুস্থ রোগীকে অক্সিজেন সরবরাহ, করোনায় মৃত্যু হওয়া লাশ পরিবার ফেলে গেলোও শেখ ফজলে শামস পরশের নেতৃত্বে যুবলীগ পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন, করেছেন দাফনের ব্যবস্থা। বেকারদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। সারাদেশে কয়েক শত অসহায় পরিবারকে ঘর তৈরি করে দিয়েছেন যুবলীগ। 


আর একারণেই আজ শেখ ফজলুল হক মণির প্রতিষ্ঠিত যুবলীগ তারই বড় ছেলে শেখ ফজলে শামস পরশের নেতৃত্বে বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন, পরিনত হয়েছে মানবিক ও মানবতার যুবলীগে।


সংকটে-সংগ্রামে, মানবিকতায় বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ থাকবে মানুষের পাশে। শেখ ফজলে শামস পরশ যুবলীগের চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকে জেলার প্রতিটি জায়গায় নতুন কমিটি করা হচ্ছে, বর্ধিত সভা করা হচ্ছে। যুবসমাজ ধর্মান্ধ রাজনীতির বিরুদ্ধে কাজ করছে, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ নির্মাণে শেখ হাসিনার হয়ে কাজ করে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্ন নিয়ে যুবলীগ প্রতিষ্ঠা করতে বলেছিলেন শেখ ফজলুল হক মণিকে সেই স্বপ্ন এখন  বাস্তবায়ন মূল লক্ষ্যে পৌঁছে নিয়ে গেছেন শেখ ফজলে শামস পরশ। সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে এগিয়ে যাচ্ছে আগামীর যুবলীগ আর এভাবে এগিয়ে যাবে। আর এবার ১১নভেম্বর যুবলীগের ৫০ বছর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় মহাসমাবেশ করবে যুবলীগ।

জেবি/ আরএইচ/