"বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নব্য 'জিন্নাহ'দের প্রতিহত করা হবে"
ক্যাম্পাস প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৯:২৪ পিএম, ৭ই ফেব্রুয়ারি ২০২৪

"যারা সে সময় বাঙালী জাতিকে আটকিয়ে রাখতে চেয়েছিল তাদেরকে যেভাবে প্রতিহত করা হয়েছিলো তেমনি এইবার কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে আজকে নব্য যে 'জিন্নাহ' হয়েছে, ওদেরকে প্রতিহত করা হবে।"
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণের সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মেহেদী হাসান এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, 'বাঙালীর ইতিহাস থেকে আমরা জানি, ফেব্রুয়ারীর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে '৬৬ সালের ৬ দফা এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা আজকে স্বাধীন রাষ্ট্র পেয়েছি। আমরা ১৯ তারিখ নির্বাচন শেষ করে একুশের প্রথম প্রহরে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে নতুন শিক্ষক সমিতি হবে তার সাথে শহীদ মিনারে ফুল দিবো।'
আরও পড়ুন: ৭ ফেব্রুয়ারি ‘রোজ-ডে’
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. দুলাল চন্দ্র নন্দীর সভাপতিত্বে ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক সহযোগী অধ্যাপক ড. মোকাদ্দেস-উল-ইসলামের সঞ্চালনায় উক্ত সভায় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২০ জন শিক্ষক।
উক্ত সভায় উপস্থিত পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, 'নতুন শিক্ষক নিয়োগ না দিয়ে উপাচার্য বিদেশে অবস্থানরত উচ্চশিক্ষার জন্য যাওয়া শিক্ষকদের বলেন, তোমরা তো বিদেশে থাকো আর আসবা না দেশে, চাকরি ছেড়ে দাও। চাকরি ছেড়ে দিলে আমি শিক্ষক নিতে পারব। এছাড়া ইন্টারভিউ দিতে যাওয়া শিক্ষকদেরকে মানসিকভাবে হেনস্থা করা হয়। এই কাজগুলো উনি ইচ্ছাকৃতভাবে করেছেন। শিক্ষকদের মধ্যে স্ফুলিঙ্গ হয়েছে। সকল অনিয়মের বিরুদ্ধে শিক্ষকরা জেগে উঠেছে। আপনাদেরকে বলছি আর একটি অন্যায়-অনিয়মও সায় দিবেন না। আমরা চাই একটা গঠনমূলক শিক্ষক সমিতির গঠন হোক।'
সভায় উপস্থিত লোকপ্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, 'কৃচ্ছ্বতা কী কেবল শিক্ষকদের সাথে হয়, যে বিলাসবহুল গাড়ি ব্যবহার করে তার জন্য হয় না? ১৭ জানুয়ারির একটা নোটিশে বলা হয়েছে গাড়ি, কম্পিউটার, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাফ, বিদ্যুৎ, স্টেশনারি নিজের কাজে ব্যবহার করা যাবে না। তাহলে আমরা কী ল্যাপটপ বাসা থেকে চার্জ দিয়ে আনবো? আবার গবেষণার ক্ষেত্রে বলা হয়, গবেষণার কোন পরিবেশ নাই। এই পরিবেশে থেকে আমরা কীভাবে কাজ করবো? এখানে শুধু কেবল উপাচার্যের দোষ দিলেই হচ্ছে না, এখানে আমাদের এটিএম মেম্বারদের কাজ কী, সিন্ডিকেট মেম্বারদের কাজ কী! শুধু কী স্যারের হ্যাঁ এ হ্যাঁ মেলানো! নাকি খাম নিয়ে বাসায় চলে যাওয়া!'
আরও পড়ুন: ইবিতে নিয়োগ কান্ডে ভিসির সামনেই লাঞ্চনার শিকার শিক্ষকরা
তিনি আরও বলেন, 'শিক্ষক সমিতি সচল হোক সেই দাবী জানাই। আর এখানে পনেরো জন যারা আসবেন উপাচার্যের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য আসবেন না। এখানে প্রত্যেকজনকে একেকটা ফাইটার হতে হবে।'
সভায় উপস্থিত অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন বলেন, 'উনি উপাচার্য হওয়ার পর থেকে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে এমপি মন্ত্রী সবার সাথে ছবি আপলোড দেন। একদিন আমি কমেন্ট করে বলেছি আপনার এত রেফারেন্স আছে আপনি আরেকটা মেগা প্রজেক্ট নিয়ে আসেন, তাহলে কুবি উন্নত হবে। এটা বলা কী আমার অপরাধ হয়েছে? এটা বলার পরে উনি নির্দেশনা দিয়ে আমার স্থায়ীকরণ বন্ধ করে দিয়েছেন। আমি একমাত্র শিক্ষক যার স্থায়ীকরণের চিঠি দুইবার সিন্ডিকেটে গিয়েছে। উনি নিজে এটা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে আমাকে দিবেন না। আমি টিচারদের জিজ্ঞেস করেছি, হয়না কেন? উনারা বলেছেন এটা নাকি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত।'
আরও পড়ুন: নোবিপ্রবিতে শরীরচর্চা শিক্ষা বিভাগের সংবাদ সম্মেলন
তিনি আরও বলেন, 'আমি না শুধু, প্রতিটি শিক্ষক এখন শঙ্কার মধ্যে আছে। একদিন এক লেকচারার ক্লাসে লেকচার দিচ্ছে, উনি ক্লাসে ঢুকে শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞাসা করছে, তোমরা কী জানো একজন উপাচার্যের ক্ষমতা কী? এই মুহূর্তে চাইলে এই শিক্ষককে উপাচার্য ফায়ার করতে পারি। উনি উনার ক্ষমতা প্রয়োগ অলরেডি করছেন।'
সভা শেষে সকল শিক্ষকদের সম্মতিতে নির্বাচনের তারিখ ১৯ তারিখ নির্ধারণ করা হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে মনোনীত করা হয় লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম এবং দুই গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আবদুল্লাহ আল মাহবুব দীপু এবং আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক অধ্যাপক আবু বকর সিদ্দিককে (মাসুম) সদস্য হিসেবে মনোনীত করা হয়।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ১ ডিসেম্বর কুবি শিক্ষক সমিতির নির্বাচন ভণ্ডুল হওয়ার পর আর নতুন কমিটি গঠনের কার্যক্রম নেওয়া হয়নি। ফলে গত এক বছর ছিল না কুবি শিক্ষক সমিতির কোনো কার্যক্রম।
এমএল/
বিজ্ঞাপন
পাঠকপ্রিয়
আরও পড়ুন

অবৈধ দখলমুক্ত জবি এলাকা: পুলিশি অভিযানে জবি ছাত্রদলের সহযোগিতা

জাকসু নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ তুলল বামপন্থি প্যানেল

৩৩ বছর পর জাকসুতে ভোটগ্রহণ, এখন অপেক্ষা ফলাফলের

জাকসু নির্বাচন বর্জন করে কেন্দ্র ত্যাগ করলেন জাতীয়তাবাদী শিক্ষকেরা
