Logo

ইবিতে নিয়োগ কান্ডে ভিসির সামনেই লাঞ্চনার শিকার শিক্ষকরা

profile picture
জনবাণী ডেস্ক
৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪, ০৫:২৩
97Shares
ইবিতে নিয়োগ কান্ডে ভিসির সামনেই লাঞ্চনার শিকার শিক্ষকরা
ছবি: সংগৃহীত

এছাড়াও প্রচারিত সকল দুর্নীতির তদন্ত দ্রুততময় শেষ করা সহ নানা দাবী তুলে ধরেন শিক্ষকরা

বিজ্ঞাপন

কেন্দ্রীয় মসজিদের ইমাম নিয়োগকে কেন্দ্র করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে(ইবি) উপাচার্যের সামনেই লাঞ্চনার শিকার হয়েছেন শিক্ষকরা। মূলত ভিসির বিরুদ্ধে দূর্নীতির তদন্তাধীন অবস্থায় কেন্দ্রীয় মসজিদের ইমাম নিয়োগবোর্ড স্থগিত করাকে কেন্দ্র করেই ঘটনাটি শুরু হয়। এসময় পক্ষে বিপক্ষে শিক্ষক লাঞ্চনা, সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকর্মী দ্বারা শিক্ষকদের অকথ্য ভাষায় গালি দেয়া, অস্থায়ী কর্মচারী দ্বারা ভিসি ও শিক্ষক অপদস্তের মতো ঘটনার সৃষ্টি হয়। ফলে ক্যাম্পাস জুড়ে অস্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করছে। 

মঙ্গলবার (০৬ ফেব্রুয়ারী) সকাল ১০ টার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির কার্যালয়, মেইন গেইট, প্রশাসন ভবন এবং ভিসির বাস ভবনের সামনে দফায় দফায় এসব ঘটনা ঘটে। এতে পক্ষে বিপক্ষে নিজ নিজ অবস্থান থেকে বক্তব্য তুলে ধরেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং কর্মকর্তারা।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

এদিন সকালে নিয়োগ বোর্ড আপাতত স্থগিত রাখার দাবি জানাতে উপাচার্যের কার্যালয়ে গিয়েছিলেন শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ। তাদের কথোপকথনের একপর্যায়ে হুড়মুড়িয়ে উপাচার্যের কার্যালয়ে প্রবেশ করে ইবিতে দীর্ঘদিন বিভিন্ন দপ্তরে চুক্তিভিত্তিক কর্মরত সাবেক ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ ও কর্মকর্তা সমিতির সদস্যরা। একপর্যায়ে ভিসির বিপক্ষে সাবেক ছাত্রলীগের কর্মীরা বিভিন্ন স্লোগান ও অকথ্য ভাষায় গালগালা ও লাঞ্চিত করে। একই সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এসময় তারা উপস্থিত শিক্ষকদের বিপক্ষে বিভিন্ন স্লোগান ও অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও লাঞ্চিত করে। তবে অভিযোগ রয়েছে ভিসির নির্দেশেই পরবর্তীতে কার্যালয়ে প্রবেশ করেন ছাত্রলীগের কর্মীরা। তুমুল হট্টগোলের একপর্যায়ে অপদস্ত হয়ে, গালাগাল ও লাঞ্ছিতের প্রতিবাদে শাপলা ফোরাম, বঙ্গবন্ধু পরিষদ ও শিক্ষক সমিতির শিক্ষকবৃন্দ কার্যালয় থেকে বেরিয়ে মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব ম্যুরালের সামনে মানববন্ধন করেন।

মানববন্ধনে ইউজিসির তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিয়োগ বন্ধ রাখা, বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক নিয়োগ না দেওয়া পর্যন্ত অন্যান্য নিয়োগ বন্ধ রাখা, প্লানিং কমিটির সুপারিশ মোতাবেক বিশেষজ্ঞ সদস্য নিয়োগ না দেওয়া পর্যন্ত সকল শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ রাখার দাবি জানায় শিক্ষকরা। এছাড়াও প্রচারিত সকল দুর্নীতির তদন্ত দ্রুততময় শেষ করা সহ নানা দাবী তুলে ধরেন শিক্ষকরা।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ যারা ইতিমধ্যে শিক্ষাজীবন শেষ করেছে, তারা দীর্ঘদিন যাবৎ এ বিশ্ববিদ্যালয় চাকরির দাবিতে আন্দোলন করছে। তাদের দাবি, সঠিক নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তারা যদি যোগ্য হিসেবে প্রতীয়মান হয়, প্রশাসনের যদি মনে হয় যে তারা যোগ্য তবে তারা এ বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি পাবে। তবে এক্ষেত্রে প্রশাসনের পক্ষে বিপক্ষে দাঁড়ানোর মত কোন বিষয় আছে বলে আমার মনে হয় না। 

প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, মানুষের দাবি-দাওয়া থাকতে পারে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরাও চাই যে কেউ অফিসে ঢুকার আগে পিএস'র সাথে কথা বলে বা অনুমতি নিয়ে ঢুকুক। কিন্তু তারা প্রথমে এক পক্ষ নিচে মাইক বাজিয়ে বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য, কর্মকাণ্ড করছিলো। তারপর তারা পর্যায়ক্রমে না ঢুকে প্রথমে কর্মচারী-কর্মকর্তা, এরই মাঝে আদর্শিক শিক্ষক গ্রুপ, পরক্ষণেই ছাত্রলীগ ঢুকে পড়ে। আমি জানি না পিএস'র সাথে অনুমতি নিয়েছে কিনা। একটু ডেকোরামের মাধ্যমে একটা গ্রুপ শেষ হলে অন্য গ্রুপ আসবে এভাবে তো শৃঙ্খলা থাকে। আমার প্রথম পরিচয় শিক্ষক, দ্বিতীয়ত আমি দায়িত্বশীল ব্যক্তি। সবার প্রতি এটাই অনুরোধ থাকবে। 

বিজ্ঞাপন

ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শেলিনা নাসরীন বলেন, যেহেতু নিয়োগ নিয়ে একটি বিষয় তদন্তাধীন রয়েছে তাই আমরা বলেছিলাম যে তদন্ত প্রতিবেদন ইতিবাচক না হওয়া পর্যন্ত আপনি নিয়োগে যাবেন না। আর যদি নিয়োগে আপনি নির্দোষ প্রমাণিত হন বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক নিয়োগের মত ভাল একটি কাজ দিয়ে শুরু করা যেতে পারে। এই সামান্য কথাটি আমরা বলা শেষ করতে পারেনি কিন্তু অনেক সন্তান সমতুল্য শিক্ষার্থী, অছাত্র বা বহিরাগতদের আমাদের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত ভাবে দাঁড় করানো হয়েছে, আমাদের লাঞ্ছিত করা হয়েছে। 

বিজ্ঞাপন

শিক্ষক ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. তপন কুমার জোদ্দার বলেন, ইমামের মতো একটি পদ নিয়ে এমন হচ্ছে, এটি অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট করে। আমি নিজেই এখানে শিক্ষক সমিতির সেক্রেটারী ছিলাম। আমি দেখেছি, এখানে যারা এসেছে তাদের অধিকাংশেরই ছাত্রত্ব শেষ হয়ে গেছে। তারা আমাদের এখানে উপস্থিত সম্মানিত শিক্ষকদের সম্মানহানি করেছে।

বিজ্ঞাপন

শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এর আগে এমন ঘটনা ঘটেনি। কয়েকজন মুষ্টিমেয় শিক্ষক যারা নানা কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত এমন কয়েকজন কুচক্রী মিলে একটা নিয়োগ বোর্ড ছিল তারা সেটা বন্ধ করতে গিয়েছিল। যা একটি গর্হিত এবং রাষ্ট্র বিরোধী কাজ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অনুরোধ করবো এ বিষয় গুলো সরকারের উচ্চ পর্যায়ে অবহিত করতে। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রাখার দাবি জানাচ্ছি।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, সরকারের বিভিন্ন পর্যায়েও এমন হয়ে থাকে যে একেকজনের নাম বিকৃতি করে চাকরি দিয়ে দিচ্ছে বা চাকরির প্রলোভনে আর্থিক লেনদেন হয়েছে। যেখানে এসব বিষয়কে কেন্দ্র করে আমার কোন কনভারসেশনই নেই সেখানে ওই চ্যাট বা কল রেকর্ড আমার কিনা এর তো কোন প্রশ্নই আসেনা। 

অভিযোগের প্রেক্ষিতে নিয়োগ বোর্ড স্থগিত হবে কিনা জবাবে বলেন, যদি এরকম কল রেকর্ড বা অভিযোগের প্রেক্ষিতে নিয়োগ বোর্ড বাতিল হয় তবে তো বাংলাদেশে কোন কিছুই করা সম্ভব হবে না। এ বিষয়ে আমি আমার বোর্ড মেম্বারের সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেব। আমার শিক্ষকরা যে আজকে এখানে আসবেন এটাও পূর্বনির্ধারিত ছিল না। শিক্ষক নেতাদের সাথে কথা বলতে বলতেই ছাত্ররা এখানে প্রবেশ করে। আমি জানিও না তারা কারা, তাদের প্রবেশটা সম্পূর্ণই অপ্রত্যাশিত ছিল।

বিজ্ঞাপন

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, নিয়ম মেনে যথাসময়ে নিয়োগ বোর্ডে লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেয়ার এক পর্যায়ে তাদের বের করে দেন কর্মকর্তা সমিতির নেতারা। তবে পরবর্তীতে লিখিত পরীক্ষা ফলাফল অনুযায়ী উত্তীর্ণ ৭ জনের ভাইভা অনুষ্ঠিত হয়।

এমএল/

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ

মোঃ শফিকুল ইসলাম ( শফিক )

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ৫৭, ময়মনসিংহ লেন, ২০ লিংক রোড, বাংলামটর, ঢাকা-১০০০।

ফোনঃ 02-44615293

ই-মেইলঃ dailyjanobaninews@gmail.com; dailyjanobaniad@gmail.com

জনবাণী এর সকল স্বত্ব সংরক্ষিত। কপিরাইট © ২০২৫

Developed by: AB Infotech LTD