জেন-জির ২৪ ঘণ্টার আন্দোলনে নেপালে সরকারের পতন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৫:৩৮ পিএম, ৯ই সেপ্টেম্বর ২০২৫

দক্ষিণ এশিয়ার হিমালয় কন্যা নেপাল ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ রাজনৈতিক সঙ্কটের মুখোমুখি হয়েছে। টানা দুই দিনের ব্যাপক অস্থিরতার পর মঙ্গলবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
গত সপ্তাহে নেপালের ক্ষমতাসীন জোট সরকার ২৬টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম বন্ধের নির্দেশ দেয়। সরকারের দাবি, এসব প্ল্যাটফর্ম সরকারি নিয়ম মেনে নিবন্ধন করেনি এবং ভুয়া তথ্য প্রচার ও অনলাইন প্রতারণায় ব্যবহার হচ্ছে। তবে সমালোচকরা বলছেন, এটি মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত এবং দুর্নীতি ও রাজনৈতিক অভিজাতদের বিলাসবহুল জীবনযাপনের সমালোচনা ঠেকাতে নেওয়া হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ক্ষোভ দেখা গেছে জেন-জি প্রজন্মের তরুণদের মধ্যে। সোমবার সকাল থেকে হাজার হাজার শিক্ষার্থী ও তরুণ পেশাজীবী কাঠমান্ডুতে আন্দোলন শুরু করেন। তাদের এই কর্মসূচি নামকরণ করা হয় জেন-জি আন্দোলন, যা মুহূর্তের মধ্যে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।
সহিংসতার রূপ নেয় বিক্ষোভ
প্রথমে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ হলেও দ্রুত উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সংসদ ভবন ঘিরে বিক্ষোভকারীরা আগুন ধরান এবং শীর্ষ নেতাদের বাড়িঘরে হামলা চালান। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন নিহত এবং ২৫০ জনের বেশি আহত হয়। বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে পোখারা, বুটওয়াল, ভৈরাহাওয়া, ভরতপুর, ইতাহারি ও দামাকেও।
সরকারের ওপর চাপ বাড়াতে বিক্ষোভকারীরা সংসদ ভবনের কিছু অংশে আগুন লাগিয়ে দেন এবং প্রধানমন্ত্রী, প্রেসিডেন্ট, কংগ্রেস ও মাওবাদী নেতাদের বাড়িঘরে হামলা চালান। নিরাপত্তা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খায়, সামরিক বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীদের উড়োজাহাজে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে দেয়। ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরও কিছু সময়ের জন্য বন্ধ করা হয়।
অলির পদত্যাগ ও সরকারের ভবিষ্যৎ
পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী অলি সর্বদলীয় বৈঠকের ডাক দেন। তবে সেনাবাহিনীর পরামর্শে তিনি শেষ পর্যন্ত পদত্যাগ করেন। এর মধ্য দিয়ে ২০০৮ সালের পর অলি সরকারের চতুর্থ মেয়াদ শেষ হয়। পদত্যাগের আগে তিনি নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ, আহতদের বিনামূল্যে চিকিৎসার প্রতিশ্রুতি দেন, কিন্তু পদত্যাগের পর এই প্রতিশ্রুতির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।
অলির পদত্যাগের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, কৃষিমন্ত্রী, যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রীসহ বেশ কয়েকজন মন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। সংসদে ক্ষমতাসীন জোটের সংখ্যাগরিষ্ঠতা হুমকির মুখে পড়েছে। বিরোধী দলগুলো অস্থায়ী সরকার গঠন ও আগাম নির্বাচনের দাবি তুলেছে। সেনাবাহিনী সরাসরি ক্ষমতা গ্রহণ থেকে বিরত রয়েছে। বিক্ষোভকারীরা এখনও রাস্তায় অবস্থান করছেন এবং বাস্তব রাজনৈতিক পরিবর্তন না আসা পর্যন্ত ফিরে যাওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
সূত্র: ফার্স্ট পোস্ট, কাঠমান্ডু পোস্ট, ইন্ডিয়া টুডে,