ইসরায়েলি অবরোধে ক্ষুধা-শীতে বিপর্যস্ত গাজার ফিলিস্তিনিরা

যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকলেও ইসরায়েলের অবরোধে গাজার মানুষের দুর্দশা কমেনি। খাদ্য, ওষুধ ও আশ্রয়ের সংকটের মধ্যে শীতের আগমনে তাদের কষ্ট আরও বেড়েছে। আন্তর্জাতিক সহায়তা সীমিত হওয়ায় ক্ষুধা, ঠান্ডা আর মৃত্যুভয় এখন গাজার নিত্যসঙ্গী।
বিজ্ঞাপন
সোমবার (৩ নভেম্বর) আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ঘোষিত যুদ্ধবিরতির পরও গাজায় sporadic বা বিচ্ছিন্নভাবে ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত রয়েছে। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত এক মাসে অন্তত ২৩৬ জন নিহত ও ৬০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন।
গত ২৪ ঘণ্টায় ধসে পড়া ভবন থেকে ছয়জনের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে, যাদের মধ্যে তিনজন আগের হামলায় আহত হয়ে মারা যান। যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পরও ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে আরও ৫০০ ফিলিস্তিনির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
আরও পড়ুন: ভারতে বাস-ট্রাক মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ১৯
বিজ্ঞাপন
এদিকে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় জানিয়েছে, রেডক্রসের সহায়তায় তিনজন ইসরায়েলি বন্দির মরদেহ ফেরত নেওয়া হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, প্রতিটি ইসরায়েলি বন্দির মরদেহের বিনিময়ে ইসরায়েল ১৫ জন মৃত ফিলিস্তিনি বন্দির মরদেহ ফেরত দিচ্ছে।
অন্যদিকে, মার্কিন সামরিক বাহিনীর সেন্টকম অভিযোগ করেছে, হামাস দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে একটি ত্রাণবাহী ট্রাক লুট করেছে। তবে গাজার গণমাধ্যম দপ্তর এই অভিযোগ ‘মিথ্যা ও পরিকল্পিত প্রচারণা’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের দাবি, ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে ত্রাণ প্রবেশে বাধা দিচ্ছে, যাতে কৃত্রিমভাবে ক্ষুধা তৈরি করে গাজায় মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করা যায়।
চিকিৎসা সেবায়ও ভয়াবহ সংকট দেখা দিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, অন্তত ১৬ হাজার ৫০০ গুরুতর অসুস্থ রোগী এখনো গাজায় চিকিৎসাহীন অবস্থায় রয়েছেন। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত মিসর, কাতার, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইতালিসহ কয়েকটি দেশ প্রায় ৭ হাজার আহত ফিলিস্তিনিকে চিকিৎসা দিয়েছে। তবু আরও কয়েক হাজার মানুষ, বিশেষ করে শিশুরা, চিকিৎসার অপেক্ষায় দিন পার করছেন।
বিজ্ঞাপন
এদিকে শীত ঘনিয়ে আসায় গাজার বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলো আশ্রয়ের মরিয়া চেষ্টা করছে। ইসরায়েলের আরোপিত নির্মাণসামগ্রীর নিষেধাজ্ঞার কারণে অনেকে ধ্বংসস্তূপের ইট ও কাদা দিয়ে অস্থায়ী ঘর বানাতে বাধ্য হচ্ছেন।
৪২ বছর বয়সী গাজার বাসিন্দা খালেদ আল-দাহদুহ বলেন, “তাঁবু বা সিমেন্ট কিছুই নেই। তাই ধ্বংস হওয়া ঘরের ইট আর কাদা মিশিয়ে অস্থায়ী আশ্রয় বানাচ্ছি, যাতে অন্তত ঠান্ডা ও বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচা যায়।”
বিজ্ঞাপন
জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)-এর প্রতিনিধি আলেসান্দ্রো ম্রাকিচ জানান, “গাজার মানুষ এখন প্রাচীন পদ্ধতিতে আশ্রয় তৈরি করছে। নির্মাণসামগ্রীর অভাবে এটিই তাদের টিকে থাকার শেষ উপায়।”
সহায়তা সংস্থাগুলো সতর্ক করেছে, শীতের তাপমাত্রা আরও কমলে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নিতে পারে। যুদ্ধবিরতি চললেও ক্ষুধা, শীত আর অনিশ্চয়তায় ফিলিস্তিনিদের বেঁচে থাকা প্রতিদিন আরও কঠিন হয়ে উঠছে।








