রাসেল ভাইপার সাপ চিনবেন কিভাবে, কামড়ালে কী করবেন?
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:৫২ অপরাহ্ন, ২রা জুন ২০২৪
মো. সোহাগ বিশ্বাস: গত ৬ মে বিষধর রাসেল ভাইপা সাপের দংশনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এদিন রাতেই তার মৃত্যু হয়। গত কয়েক মাসে এই বিষাক্ত সাপের কামড়ে বিভিন্ন স্থানে মৃত্যুর ঘটনায় আতংকে অনেক মানুষ। বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কয়েকটি এলাকায়, বিশেষ করে পদ্মা তীরবর্তী কয়েকটি জেলা ও চরাঞ্চলে, গত কিছুদিন যাবত বিষাক্ত রাসেলস ভাইপার সাপের কামড়ে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
রাসেলস ভাইপার সাপ বাংলাদেশে চন্দ্রবোড়া বা উলুবোড়া নামেও পরিচিত। বাংলাদেশে যেসব সাপ দেখা যায় সেগুলোর মধ্যে এটিই সবচেয়ে বিষাক্ত। এই সাপের কামড়ে শরীরের দংশিত অংশে বিষ ছড়িয়ে অঙ্গহানি, ক্রমাগত রক্তপাত, রক্ত জমাট বাঁধা, স্নায়ু বৈকল্য, চোখ ভারী হয়ে যাওয়া, পক্ষাঘাত, কিডনির ক্ষতিসহ বিভিন্ন রকম শারীরিক উপসর্গ দেখা যেতে পারে।
তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো, সাপের এই প্রজাতিটি বাংলাদেশ থেকে বহু বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছিল। কিন্তু গত ১০-১২ বছর আগে থেকে আবারো এই সাপের কামড়ের ঘটনার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। এই প্রজাতির সাপ এই অঞ্চলে আবার কীভাবে ফিরে আসছে, তা নিয়ে বাংলাদেশে গবেষণাও চলছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে এই সাপের সংখ্যা বাড়ার অন্যতম প্রধান কারণ একই জমিতে বছরে একাধিক ফসল ফলানো "আগে কৃষিজমিতে বছরে একবার বা দুইবার ফসল ফলানো হত এবং বাকি সময় পানির অভাব থাকায় জমি পরিত্যক্ত পড়ে থাকতো। কৃষকরা এখন বছরে দুই থেকে তিনটি ফসল ফলানো শুরু করেন এবং জমি কম সময় পরিত্যক্ত থাকতে শুরু করে।"সারা বছর ক্ষেতে ফসল থাকায় জমিতে ইঁদুরের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে, যা এই সাপের প্রধান খাদ্য। আর ইঁদুর বাড়ার সাথে সাথে সাপ পর্যাপ্ত খাদ্য পেতে শুরু করে এবং বংশবিস্তারের জন্য যথাযথ পরিবেশ পেতে থাকে।
সাপে কামড়ানোর লক্ষণ কি?
এই প্রজাতির সাপের কামড়ের কিছুক্ষণ পরই দংশিত স্থানে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়। ব্যাখার পাশাপাশি দংশিত স্থান দ্রুত ফুলে যায় এবং ঘণ্টা খানেকের মধ্যে দংশিত স্থানের কাছে শরীরের আরো কয়েকটি অংশ আলাদাভাবে ফুলে যায়। দ্রুত চিকিৎসা না করা হলে নিম্ন রক্তচাপ, কিডনি অকার্যকর হওয়া সহ বিভিন্ন ধরণের শারীরিক সমস্যা তৈরি হতে পারে।
রাসেল ভাইপার যেভাবে চিনবেন-
রাসেলস ভাইবার সাপের দেহ মোটাসোটা, লেজ ছোট ও সরু হয়ে থাকে। মাথা চ্যাপ্টা ত্রিকোণাকার। মাথার তুলনায় ঘাড় অনেকটাই সরু। শরীরের রঙ বাদামি, হলদে বাদামি অর্থাৎ কাঠ রঙের হওয়ায় শুকনো পাতার মধ্যে এই সাপ নিজেকে লুকিয়ে রাখতে পারে। সাপটির জিহ্বার রঙ বাদামি বা কালো। সারা গায়ে স্পষ্ট বড়ো গাঢ় বাদামি গোলগোল দাগ থাকে, এই দাগগুলোর মাথা ছুঁচালো। অনেকসময় দাগগুলো একসঙ্গে দেখতে শিকলের মতো লাগে। গোলাকার দাগগুলো দেখতে অনেকটাই চাঁদের মতো। দাগগুলোর চারপাশে কালো রঙের বর্ডার থাকে, তার মধ্যে সাদা বা হলুদের ছিটে লক্ষ্য করা যায়। পেটের দিকের আঁশ এর রঙ সাদা। এদের বিষদাঁত লম্বা। বিষদাঁতের দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫-১৬ মিমি পর্যন্ত হয়ে থাকে। রাসেলস ভাইপারের বিষদাঁত পৃথিবীতে দ্বিতীয় সবচেয়ে বৃহৎ দাঁত।
সাধারণত সব সাপ মানুষকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে, কিন্তু রাসেলস ভাইপার সাপের স্বভাব ঠিক উল্টো। এরা সচরাচর পালিয়ে যায় না। নিজেদের বিপন্ন মনে করলে আক্রমণ করে বসে। বিষধর সাপ হিসেবে পৃথিবীতে রাসেলস ভাইপারের অবস্থান পঞ্চম। কিন্তু হিংস্রতা আর আক্রমণের দিক থেকে এর অবস্থান প্রথম। আক্রমণের ক্ষেত্রে এই সাপ এত ক্ষিপ্র যে, ১ সেকেন্ডের ১৬ ভাগের ১ ভাগ সময়ের ভেতরে কামড়ের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারে। এরা প্রচণ্ড জোরে হিস হিস শব্দ করতে পারে।
করণীয় কী?
সাধারণত পদ্মা গোখরা/খৈয়া গোখরা সাপ সবসময় বিষ প্রয়োগ করে না। ২০% কামড়ে তারা বিষ প্রয়োগ করে। বাকি ৮০টা ড্রাই বাইট মারে। যেসব কামড়ে বিষ থাকে না সেই সব রোগীকে কবিরাজ-ওঝারা ঝাঁড়ফুক দিয়ে সারিয়ে তোলে। ড্রাই বাইটে আক্রান্ত রোগী এমনিতেও মরে না। কিন্তু রাসেল'স ভাইপার শতকরা ৯৯ ভাগ কামড়েই এরা বিষ প্রয়োগ করে। তাই কবিরাজের কাছে না গিয়ে ১০০ মিনিটের মধ্যে এন্টিভেনাম দিতে হবে। সাপে কামড়ানোর পরবর্তী ১০০ মিনিট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ের মধ্যে এন্টিভেনাম পুশ করলে বেঁচে যায়ওয়ার সম্ভাবনা ৯৯%।
জেবি/এসবি