নির্বাচন কমিশন ও জুলাই সনদ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর পাল্টাপাল্টি অবস্থান

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও জুলাই সনদ বাস্তবায়নকে কেন্দ্র করে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তীব্র মতপার্থক্য শুরু হয়েছে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন একই দিনে আয়োজনের দাবির পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা এবং সনদ স্বাক্ষর নিয়ে দলগুলোর পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন উত্তাপ সৃষ্টি হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
শনিবার (০১ নভেম্বর) পৃথক অনুষ্ঠানে বিএনপি, গণফোরাম ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শীর্ষ নেতারা এসব বিষয়ে নিজ নিজ দলের অবস্থান তুলে ধরেন।
রাজশাহীতে এক ব্যবসায়ী সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়ে বলেন, ‘দুই থেকে তিনটি দলের মতামত জোর করে বিএনপির ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সে ষড়যন্ত্র পরিহার করে ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে।’
বিজ্ঞাপন
তিনি ঐক্যমত কমিশনের ভূমিকার সমালোচনা করে আরও বলেন, ‘ঐক্যমত হয়েছে, সই হয়েছে, এর বাইরে গিয়ে এখন নতুন নতুন দাবি নিয়ে আসছে। ঐক্যমত কমিশনে যারা আছেন, তারা নিজ নিজ কাজে ফিরে যান। জনগণকে সিদ্ধান্ত নিতে দিন।’
অন্যদিকে, ঢাকায় ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত এক ছায়া সংসদে গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘ফেব্রুয়ারিতে গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন একই দিনে হবে’। তিনি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ‘যারা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা বলে, তাদের বলব জাতীয় নির্বাচনে ৭০ শতাংশ ভোট পড়লেই তা অংশগ্রহণমূলক হবে।’
জুলাই সনদ নিয়ে দলগুলোর মধ্যে বিভক্তি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। সুব্রত চৌধুরী জুলাই সনদে স্বাক্ষর না করায় এনসিপিকে দর কষাকষি না করে সই করার আহ্বান জানান। তবে বরগুনায় এক সমন্বয় সভায় এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ এর ভিন্ন ব্যাখ্যা দেন। তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছিলাম, স্বাক্ষরের আগে আমাদের সেই সনদ দেখাতে হবে। তারা না দেখে স্বাক্ষর করেছে- এটা কি উচিত ছিল? এখন তারাই আমাদের অবস্থানে এসেছে।’
বিজ্ঞাপন
নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে এনসিপি। হাসনাত আবদুল্লাহ কমিশনকে ‘ব্যক্তি-নির্ভর ও স্বেচ্ছাচারী’ আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘কমিশনে একাধিক পক্ষের প্রভাব রয়েছে। ৫ আগস্টের পর গঠিত নির্বাচন কমিশনে বিএনপি, জামায়াত ও সেনাবাহিনীর প্রতিনিধিত্ব রয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে।’ তিনি অভিযোগ করেন, কমিশন কোনো সুস্পষ্ট নীতিমালা ছাড়াই প্রতীক বরাদ্দসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে এবং শাপলা প্রতীক না দেওয়ার কোনো লিখিত ব্যাখ্যা দিতে রাজি নয়।
অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মকাণ্ড নিয়েও সমালোচনা করেছেন গণফোরাম নেতা সুব্রত চৌধুরী। তিনি অভিযোগ করেন, অন্তর্বর্তী সরকার কিছু তরুণকে সুযোগ-সুবিধা দিয়ে বিপথগামী করেছে, যারা বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে গিয়ে খবরদারি করে ‘সরকারের ভেতরে সরকার’ তৈরি করেছে, যা সংস্কার ও আইনের শাসনকে বাধাগ্রস্ত করছে।
বিজ্ঞাপন
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ জুলাই সনদের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, ‘জুলাই সনদ জাতির এক ঐতিহাসিক দলিল ও একটি রাজনৈতিক বন্দোবস্ত। এই সনদ বাস্তবায়নের ওপর আগামীর বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে।’ তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর মতপার্থক্যের কারণে ‘অনৈক্যের বাংলাদেশ’ তৈরি হচ্ছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য অপরিহার্য বলে মন্তব্য করেন।
এদিকে, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বিএনপির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরে জানান, তারা ক্ষমতায় গেলে বড় মেগা প্রকল্প না করে অর্থনীতিকে গণতন্ত্রীকরণ এবং দুর্নীতি কমাতে অনলাইন-নির্ভরতা বাড়ানোর ওপর জোর দেবেন।








