সব চেষ্টা ব্যর্থ, মারা গেলেন খালেদা জিয়া

দীর্ঘ ৩৭ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে অবশেষে না–ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া।
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
গত ২৩ নভেম্বর শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, তিনি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ছিলেন এবং এ ছাড়া তার শরীরে একাধিক জটিলতা দেখা দেয়। অসুস্থতার একপর্যায়ে তাকে কিডনি ডায়ালাইসিসও দিতে হয়।
এর আগে গত ২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বাসায় ফেরার পর তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। শ্বাসকষ্ট তীব্র হলে ২৩ নভেম্বর জরুরি ভিত্তিতে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরবর্তীতে ফুসফুস ও হৃদযন্ত্রের গুরুতর সংক্রমণে তার শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে ওঠে।
বিজ্ঞাপন
কয়েক বছর ধরে নানান ধরনের গুরুতর রোগে ভুগছিলেন খালেদা জিয়া। চিকিৎসার ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, অনেক বছর ধরেই খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস এবং চোখের সমস্যাসহ নানান জটিলতায় ভুগছিলেন। খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন সবশেষ জানান, ফুসফুস ও হৃদযন্ত্রের গুরুতর সংক্রমণ নিয়ে সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন তিনি।
২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে পরের দুই বছর দুই মামলায় দণ্ডিত হয়ে তিনি পুরান ঢাকার পরিত্যক্ত কারাগারে একাকী সময় কাটান। সে সময় কারাগারে নিলে তার স্বজনরা সাক্ষাৎ করতে চাইলেও তা সম্ভব হয়নি। দীর্ঘ অপেক্ষার পর কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, ‘খালেদা জিয়া অসুস্থ।’ কারাগারে থাকাকালীন স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য খালেদা জিয়াকে কয়েকবার বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। যদি দেশে সে সময় তার পছন্দ ছিল ইউনাইটেড হাসপাতাল। বারবার আবেদনেও আওয়ামী লীগ সরকার চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর অনুমতি দেয়নি। তাকে বিদেশে নিতে আন্দোলন-বিক্ষোভও করেন তার দলের নেতাকর্মীরা।
২০২১ সালের মে মাসে ঢাকায় নিজের বাসায় বন্দি থাকা অবস্থায় করোনা আক্রান্তও হন খালেদা জিয়া। শ্বাসকষ্টে ভোগার কারণে তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে থেকে চিকিৎসা নিতে হয়েছিল। তখনও তিনি মূলত হার্ট, কিডনি ও লিভারসহ বিভিন্ন ধরনের রোগে ভুগছিলেন, যা তার শারীরিক অবস্থাকে জটিল করে তুলেছিল।
বিজ্ঞাপন
২০২৪ সালের জুনে দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের বৈঠকে তার শরীরে পেসমেকার বসানোর সিদ্ধান্ত হয়। সেময় তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক জাহিদ হোসেন বলেন, ‘ম্যাডামের হৃদরোগের সমস্যা আগে থেকেই ছিল। হার্টে ব্লক ছিল। আগে একটা রিং পরানো হয়েছিল। সবকিছু পর্যালোচনা করে মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শে পেসমেকার বসানো হয়।’
২০২৪ সালের আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতির নির্বাহী আদেশে সব দণ্ড থেকে পুরোপুরি মুক্তি দেওয়া হয় খালেদা জিয়াকে। এরপর চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যের লন্ডনে যান তিনি। পরে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘ম্যাডামের নানা শারীরিক জটিলতা রয়েছে, যা আমরা বিভিন্ন সময় বলেছি। সর্বোপরি ওনার লিভারের জটিলতা অর্থাৎ লিভার সিরোসিস পরে কম্পেনসেন্টারি লিভার ডিজিজ বলে গ্রেট-টু সেটার জন্য টিপস (চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিশেষ পদ্ধতি টিআইপিস-টিপস) করা হয়েছে। টিপসের কিছু টেকনিক্যাল অ্যাসপেক্ট আছে অ্যাডজাস্টমেন্টের বিষয় আছে… আপনি দেখতে হার্টে স্টান্টিং করার পর চেক করে আবার সেটার জন্য রি-স্টান্টিং করে অথবা চেক করে দেখে যে, স্টান্টিংটা ভালোভাবে কাজ করছে কি না… এই জিনিসগুলো তো আমরা করতে পারি নাই।’
প্রায় চার মাস চিকিৎসা শেষে দেশে ফেরেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এরপর থেকে দেশেই চিকিৎসা নিচ্ছিলেন তিনি।








