জালিয়াতি করে সহকারী অধ্যাপক আব্দুল হাই

গাইবান্ধা জেলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বোনারপাড়া সরকারি ডিগ্রি কলেজে একজন প্রভাষকের বিরুদ্ধে প্রায় ২৪ লাখ টাকা সরকারি অর্থ অবৈধভাবে উত্তোলনের বিস্ফোরক অভিযোগ উঠেছে।
এই অভিযোগ সংবলিত একটি বিশদ চিঠি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর সরাসরি দাখিল করেছেন গাইবান্ধা জেলা দায়রা জজ কোর্টের অতিরিক্ত পিপি মোঃ রেওয়ানুল হক মন্ডল। চিঠিতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, প্রভাষক মো. আব্দুল হাই, যিনি ১৯৯১ সালে যোগদান করেন, তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিয়ম ভেঙে অবৈধভাবে উচ্চতর স্কেল ও টাইমস্কেল গ্রহণ করে দীর্ঘ ২০ বছর ধরে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করে আসছেন। ২০০৫ সালের ৮ জানুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি স্পষ্ট বিজ্ঞপ্তি (নং: শিম/শা/১১/৮ বিবিধ (এমপিও)-১১/২০০৪/০৯) এর মাধ্যমে জানানো হয় যে, বেসরকারি কলেজ ও মাদ্রাসাগুলোর প্রভাষকদের ২ বছর পূর্তিতে উচ্চতর স্কেল ও ৮ বছর পূর্তিতে টাইমস্কেল প্রদানের নিয়ম সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে।
কিন্তু অভিযোগ অনুসারে, মো. আব্দুল হাই এই সরকারি আদেশ সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করে ২০০৫ সালের জুলাই থেকে টাইমস্কেল গ্রহণ করেন এবং এই ধারায় তিনি ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে কলেজ সরকারি হওয়ার আগ পর্যন্ত এবং অবসরকালীন সময় (৩১/১২/২০২৪) পর্যন্ত অতিরিক্ত বেতন গ্রহণ করে আসেন।
একই তারিখে (০৬/০৮/১৯৯১) যোগদানকারী ৬ জন প্রভাষকের মধ্যে মোঃ আব্দুল হাই ছিলেন বয়স অনুযায়ী কনিষ্ঠতম, কিন্তু শুধুমাত্র ইনডেক্স নম্বরকে ভিত্তি করে তাকে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়।
বিজ্ঞাপন
নিচে ৬ জন প্রভাষকের তথ্য তুলে ধরা হলো:
নাম ইনডেক্স নম্বর জন্ম তারিখ বিষয় যোগদানের তারিখ
মো. আব্দুল হাই ০১৯৫৯৯ ৩১/১২/১৯৬৪ রাষ্ট্রবিজ্ঞান ০৬/০৮/১৯৯১
বিজ্ঞাপন
মো. শফিকুল ইসলাম মন্ডল ০১৯৬০০ ৩১/১২/১৯৬৪ ইতিহাস ০৬/০৮/১৯৯১
মো. তাজুল ইসলাম ০১৯৬০১ ৩০/০৬/১৯৬২ অর্থনীতি ০৬/০৮/১৯৯১
মো. ফারুকুল ইসলাম ০১৯৬০২ ০১/১১/১৯৬৫ হিসাববিজ্ঞান ০৬/০৮/১৯৯১
বিজ্ঞাপন
মো. শফিকুল ইসলাম ০১৯৬০৩ ১৭/০১/১৯৬২ ব্যবস্থাপনা ০৬/০৮/১৯৯১
মো. রকিবুদ্দৌলা আলম ০১৯৬০৪ ৩০/০৬/১৯৬৪ ব্যবস্থাপনা ০৬/০৮/১৯৯১
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, জন্ম তারিখ অনুসারে সিনিয়র থাকা সত্ত্বেও তাজুল ইসলাম, শফিকুল ইসলাম প্রমুখ কেউ সহকারী অধ্যাপক হতে পারেননি, বরং কনিষ্ঠ মো. আব্দুল হাই এই পদে উন্নীত হন। অভিযোগ অনুসারে, ২০০৫ সাল থেকে ২০১৮ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত এবং পরবর্তীতে অবসরকালীন সুবিধা পর্যন্ত, মো. আব্দুল হাই অনৈতিকভাবে প্রায় ২৪ লক্ষ টাকা উত্তোলন করেছেন। এই অর্থ বেতন, ইনক্রিমেন্ট, টাইমস্কেল, এবং উচ্চতর স্কেল হিসেবে গ্রহণ করা হয়। এই অর্থের উৎস মূলত সরকারি কোষাগার, যা জনগণের করের টাকায় গঠিত। অর্থাৎ, এই অর্থ আত্মসাৎ রাষ্ট্রীয় অর্থনীতির জন্য সরাসরি ক্ষতিকর এবং একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমন অনিয়ম প্রশাসনিক দুর্বলতার পরিচয় বহন করে।
বিজ্ঞাপন
চিঠিতে মোঃ রেওয়ানুল হক মন্ডল নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর ওপর গুরুত্ব দিয়ে মহাপরিচালকের জরুরি হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন। পাশাপাশি তদন্ত কমিটি গঠন করে পুরো বিষয়টি গভীরভাবে খতিয়ে দেখা, ২৪ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরতের জন্য নির্দেশ জারি, অবসরের পূর্বে কোনো পেনশন, আনুতোষিক বা গ্র্যাচুইটি সুবিধা না দেওয়ার জন্য অফিসিয়াল স্থগিতাদেশ এবং অভিযোগে জড়িত অফিসার/কর্মচারীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশের বিদ্যমান আইন অনুযায়ী রাষ্ট্রের টাকা আত্মসাৎ একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ (দণ্ডবিধির ধারা ৪০৯ ও ৪২০ অনুযায়ী)। সরকারি চাকরিতে মিথ্যা তথ্য বা অনিয়ম করে আর্থিক সুবিধা গ্রহণ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আওতায় পড়ে। এক্ষেত্রে দুদক স্বপ্রণোদিতভাবে তদন্ত শুরু করতে পারে।
এই ঘটনা কেবল একজন ব্যক্তির অনিয়ম নয়, এটি বাংলাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি ও জবাবদিহিতার ঘাটতির একটি প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে যেখানে সরকার শিক্ষা খাতে ডিজিটালাইজেশন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে নানামুখী পদক্ষেপ নিচ্ছে, সেখানে এই ধরনের ঘটনা তা প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
বিজ্ঞাপন
এ ব্যাপারে টিআইবি নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, জালিয়াতি করে পদোন্নতি এটা একধরনের দুর্নীতি। এই ধননের দুর্নীতিবাজ শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। সে যতই প্রভাবশালী হউক, দুদককে ব্যবস্থা নিতে হবে।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন