প্রতিবাদের অস্ত্র কেন হয় ডিম, যা বলছে ইতিহাস

রান্নাঘরের সাধারণ উপকরণ ডিম, কিন্তু রাজনৈতিক মঞ্চে কিংবা জনসমক্ষে এটি বারবার রূপ নিয়েছে প্রতীকী প্রতিবাদের হাতিয়ারে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে রাজনীতিকদের উদ্দেশে ডিম নিক্ষেপের ঘটনা আলোচনায় আসলেও, এর ইতিহাস বহু পুরনো এবং বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত।
বিজ্ঞাপন
মধ্যযুগে বন্দিদের ওপর প্রকাশ্যে ডিম নিক্ষেপের ঘটনা ঘটত বলে প্রচলিত আছে। লিখিত সূত্রে ডিম নিক্ষেপের প্রথম প্রমাণ পাওয়া যায় ১৮শ শতকের গোড়ায়। ১৮০০ সালের দিকে আয়েল অফ ম্যান দ্বীপে মেথোডিস্টদের লক্ষ্য করে ডিম নিক্ষেপ হয়েছিল। আবার ১৮৩৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কনকোর্ড শহরে দাসত্ববিরোধী বক্তা জর্জ হোয়াইটারকে লক্ষ্য করে ডিম ছোড়া হয়।
বিশ্ব ইতিহাসে আরও উল্লেখযোগ্য ঘটনা আছে। ১৯১৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী বিলি হিউজ জনসভায় ডিম নিক্ষেপের শিকার হন। আর ২০০১ সালে ব্রিটেনের উপ-প্রধানমন্ত্রী জন প্রেসকটকে এক তরুণ কৃষক ডিম ছোড়ার পর তিনি পাল্টা ঘুষি মারেন, যা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল।
বিজ্ঞাপন
এমনকি জনপ্রিয় সংস্কৃতিতেও এই প্রবণতা দেখা গেছে। হলিউড অভিনেতা আর্নল্ড শোয়ার্জনেগারকে একাধিকবার টমেটো ও ডিম নিক্ষেপের মুখোমুখি হতে হয়েছিল।
এ বিষয়ে কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক অ্যান্ড্রু গেলম্যান বলেন, খাবার নিক্ষেপ সস্তা, সহজলভ্য এবং নাটকীয় প্রতিবাদের মাধ্যম। ডিম বা টমেটো ফেটে গেলে এর দৃশ্যমান প্রভাব আরও তীব্র হয় এবং জনমনে একধরনের তৃপ্তি সৃষ্টি করে। তার মতে, এটি অহিংস প্রতিবাদের কার্যকর রূপ, যেখানে পুলিশের প্রতিক্রিয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
সব মিলিয়ে দেখা যায়, ক্ষোভ প্রকাশ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক প্রতীকায়ন। ডিম হয়ে উঠেছে বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদের সহজ, সস্তা এবং নজরকাড়া অস্ত্র। কৃষক থেকে শিক্ষার্থী, এমনকি দর্শক বা কর্মী সবাই কখনো না কখনো এই উপকরণটিকে ব্যবহার করেছে নিজেদের বক্তব্য জানানোর এক ভিন্ন কৌশল হিসেবে।