Logo

আখাউড়ায় ৬টি ও কসবা ৫টি অরক্ষিত বধ্যভূমি

profile picture
জনবাণী ডেস্ক
৫ এপ্রিল, ২০২৩, ১০:২২
68Shares
আখাউড়ায় ৬টি ও কসবা ৫টি অরক্ষিত বধ্যভূমি
ছবি: সংগৃহীত

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য ঘেঁষা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার পূর্বে আখাউড়া উপজেলা ও দক্ষিণে কসবা উপজেলা। মুক্তিযুদ্ধের সময় এ দুটি উপজেলায় কী পরিমাণ সাধারণ মানুষকে পাক বাহিনী হত্যা করেছিল তার হিসেব নেই।

বিজ্ঞাপন

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য ঘেঁষা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার পূর্বে আখাউড়া উপজেলা ও দক্ষিণে কসবা উপজেলা। মুক্তিযুদ্ধের সময় এ দুটি উপজেলায় কী পরিমাণ সাধারণ মানুষকে পাক বাহিনী হত্যা করেছিল তার হিসেব নেই। তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম গবেষক ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি ও সাহিত্য একাডেমির কবি জয়দুল হোসেনের গণহত্যা-বধ্যভূমি ও গণকবর জরিপ বইয়ের তথ্য এবং অন্যান্য উৎস থেকে জানা যায় আখাউড়া উপজেলায় ৬টি এবং কসবা উপজেলায় ৪টি বধ্যভূমির তথ্য পাওয়া যায়।

আখাউড়া উপজেলায় ৬টি বধ্যভূমির মধ্যে রয়েছে, (এক) নারায়নপুর বধ্যভূমি, আখাউড়া-আগরতলা সড়কের আখাউড়া থেকে ১ কিলোমিটার পূর্বদিকে একটি ব্রিজ। ওখান থেকে পূর্ব দিকে আগরতলা আর দক্ষিণ দিকে তারাগণ গ্রাম। আখাউড়া পৌরসভার নারায়নপুর পাক হানাদার বাহিনী কয়েকটি গ্রামের লোকজনকে ধরে এনে রাস্তার পাশে তারাগণ ব্রিজের তেতুল গাছের নিচে লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করে। স্থানীয়দের মধ্যে তারাগণ ও নারায়নপুর গ্রামের অন্তত ৪০ জন এখানে হত্যার শিকার হয়েছেন। এছাড়া দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ভারতে পালিয়ে যাবার সময় অগণিত লোককে ধরে এনে এখানে হত্যা করে লাশ ফেলে রাখা হয়েছে। এলাকাবাসী এখানে লাশের স্তুপ দেখেছেন। দিনের পর দিন লাশ পড়ে থেকে এখানে পঁচেগলে নিঃশেষ হয়েছে। এলাকাটি তাই বৃহৎ একটি বধ্যভূমিতে পরিণত হয়েছে। 

বিজ্ঞাপন

(দুই) আখাউড়া উপজেলাধীন তন্তুর হাইওয়ে রাস্তার ব্রিজের নিকট দিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা/ জনগণ পারাপার হতো। ঘটনার দিন বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজীপুরের একটি দল নৌকাযোগে যাওয়ার সময় হঠাৎ পাক হানাদার বাহিনীর একটি দল স্পেশাল টিম তাদের দখে ফেলে এলোপাতারী গুলিবর্ষণ শুরু করে। গুলিবর্ষণে বীর মুক্তিযোদ্ধারা এবং কয়েকজন পথচারী নিহত হয়। তাদেরকে তন্তর ব্রিজের দক্ষিণে গণকবর দেয়া হয়। 

বিজ্ঞাপন

(তিন) সেনারবাদি সংলগ্ন ভারতের সীমানা পিলারের ভিতর এবং বাংলাদেশ অংশে নিহত হ বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরকে কবর দেয়া হয়। 

(চার) গঙ্গাসগার গণকবর, আখাউড়া উপজেলাধীন মোগড়া ইউনিয়নের গঙ্গাসাগর রেলওয়ে স্টেশনে ছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ক্যাম্প। রেলস্টেশনের পাশে গঙ্গাসাগর দিঘির পশ্চিম পাড় দিনের পর দিন গণহত্যা হয়েছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে শতশত মানুষকে ধরে নিয়ে ওখানে হত্যা করে লাশ বন্যার পানিতে ফেলে দেয়া হয়েছে। এলাকাটি বৃহৎ একটি বধ্যভূমিতে পরিণত হয়েছিল। 

বিজ্ঞাপন

(পাঁচ) মনিয়ন্দ রেলওয়ে ব্রিজ বধ্যভূমি, আখাউড়ার মনিয়ন্দ রেলওয়ে ব্রিজের নিচ দিয়ে বহু শরণার্থী ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। অনেকে পাকিস্তানি বাহিনী ও রাজাকারদের হাতে ধরা পড়েছে। যারা ধরা পড়েছে তারা দিনের পর দিন নির্যাতন সহ্য করে হত্যার শিকার হয়েছে। এই এলাকায়ই দিনের পর দিন গণহত্যা হয়েছে। তাই এলাকাটি বৃহৎ একটি বধ্যভূমিতে পরিণত হয়েছিল। 

বিজ্ঞাপন

(ছয়) আখাউড়া রেলওয়ে জংশনের পশ্চিম দিকে তিতাস নদীতে বধ্যভূমি, আখাউড়া রেলওয়ে জংশন এলাকায় ছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ক্যাম্প ও নির্যাতন কেন্দ্র। রেলস্টেশনের একটি গুদামঘরে অগণিত মানুষকে আটক রেখে নির্যাতন করা হয়েছে। নির্যাতনের পর কাউকে কাউকে ছেড়ে দেয়া হলেও অগণিত মানুষকে রেলস্টেশনের পশ্চিম দিকে তিতাস নদীর পাড় নিয়ে হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দেয়া হয়। এপ্রিল থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত এখানে শতাধিক লোককে হত্যা করা হয়েছে বলে এলাকাবাসী জানান। 

এখানে নিহত প্রায় সকলেই অস্থানীয়। আখাউড়া উপজেলায় ৫টি বধ্যভূমির মধ্যে রয়েছে, (এক)  হরিয়াবহ বধ্যভূমি, কসবা থানার উত্তর-পূর্ব দিকে আগরতলা সীমান্তের কাছাকাছি নিভৃত দুটি পল্লীগ্রাম গোপীনাথপুর ইউনিয়নের চÐীদ্বার ও হরিয়াবহ। আখাউড়া থেকে রেলে কুমিল্লা যাবার পথে ইমামবাড়ি স্টেশনের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে গ্রাম দুটির অবস্থান। একাত্তরে এ গ্রাম দুটিতেও নেমে আসে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও রাজাকারদের নির্মম তাÐব। এই বধ্যভূমিতে ব্যাপক সংখ্যক মানুষের লাশ করব দেয়া হয়।

বিজ্ঞাপন

খুরশিদ মিয়ার পুকুর বধ্যভূমি গোপীনাথপুর ইউনিয়নের বাজারের উত্তর-পূর্ব দিকে তৎকালীন খুরশিদ মিয়ার বাড়ির পুকুরে অসংখ্য মানুষকে হত্যা করে লাশ ফেলে রাখা হয়। বিভিন্ন সময় ভারতে পলায়নরত শরণার্থীদের ধরে নিয়ে ওখানে। হত্যা করা হয়েছে। পুকুরটি কচুরিপানায় ভরাট ছিল তাই সঙ্গে সঙ্গে কারও লাশ উদ্ধার করা বা কবর দেয়া সম্ভব হয়নি।

বিজ্ঞাপন

(দুই), শাহপুর বধ্যভূমি, কসবার মুসলিম লীগ নেতা টি আলীর সাবেক বাড়ি শাহপুরে ছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ক্যাম্প। ওখানে ব্যাপক গণহত্যা ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে ধরে আনা লোকজনকে ক্যাম্পে আটক রেখে নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়। 

(তিন) কাকিনা ব্রিজ বধ্যভূমি, কসবা উপজেলার কাকিনা রেল ব্রিজ এলাকায় দিনের পর দিন গণহত্যা হয়। বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজনকে ধরে এনে এখানে হত্যা করে লাশ ব্রিজের নিচে পানিতে ফেলে দেয়া হয়। 

বিজ্ঞাপন

(চার) রাউৎহাট বধ্যভূমি, কসবা উপজেলার বিনাউটি ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের শহিদ স্মরণিকা উচ্চ বিদ্যাপীঠের উত্তর পূর্ব কোণে রাউৎহাট গ্রাম। এ গ্রামের বধ্যভূমিতে ১২ জন ঋষী সম্প্রদায়ের লোকজনসহ হাজীপুর গ্রামের অজ্ঞাত মানুষকে সমাহিত করা হয়। 

বিজ্ঞাপন

(পাঁচ) লেশিয়ারা বধ্যভূমি, কসবা উপজেলার কুটি ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের কুটি চৌমুহনী সিএনজি স্টেশন সংলগ্ন লেশিয়ারা গ্রামে হিন্দু মুসলিমসহ ১২ জনকে সমাহিত করা হয়।

আরএক্স/

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ

মোঃ শফিকুল ইসলাম ( শফিক )

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ৫৭, ময়মনসিংহ লেন, ২০ লিংক রোড, বাংলামটর, ঢাকা-১০০০।

ফোনঃ 02-44615293

ই-মেইলঃ dailyjanobaninews@gmail.com; dailyjanobaniad@gmail.com

জনবাণী এর সকল স্বত্ব সংরক্ষিত। কপিরাইট © ২০২৫

Developed by: AB Infotech LTD