আক্রান্ত কোমলমতি শিশুরা, কমে গেছে ফসলের উৎপাদন!


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


আক্রান্ত কোমলমতি শিশুরা, কমে গেছে ফসলের উৎপাদন!

রামগঞ্জ প্রতিনিধি: আক্রান্ত কোমলমতি শিশুরা। কমে গেছে ফসলের উৎপাদন। তিনটি স্কুল ঘেঁষে তৈরি করা হয়েছে ছয়টি ইটভাটা। ওই ভাটায় দিনরাত জ্বলছে আগুন, পুড়ছে ইট। ইটের কাঁচামাল মাটি বোঝাই করে গাড়ি চলছে স্কুল ঘেঁষেই। পথের ধুলা আর ভাটায় পোড়ানো ইটের ধোঁয়ায় ছেয়ে গেছে এলাকা। এর মধ্যেই চলে শিক্ষার্থীদের চলাচল, লেখাপড়া। এ অবস্থা রামগঞ্জ উপজেলার ভোলাকোট ইউনিয়ন ও কাঞ্চনপুর ইউনিয়নে।

ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০১৩ অনুযায়ী, আবাসিক এলাকা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কৃষিজমির এক কিলোমিটারের মধ্যে কোনো ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। কিন্তু প্রশাসনের উদাসীনতায় ইটভাটার মালিকরা এই আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কয়েক বছর ধরে ইট তৈরি করে যাচ্ছে।

উপজেলার দেহলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৫০ গজের মধ্যে জেবিএম ব্রিকস, মদিনা ব্রিকস-১ ও মদিনা ব্রিকস-২। দেহলা বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২০০ গজের মধ্যে মক্কা ব্রিকস ইট তৈরি করছে। এ ছাড়া কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের ব্রাহ্মপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১০০ গজের মধ্যে এইচটিসি ব্রিকস এবং হাজীরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২০০ গজের মধ্যে তালুকদার ব্রিকেসের ইট তৈরির কাজ চলছে পুরোদমে। কৃষিজমি দখল করে এসব ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে। ভাটার কারণে পরিবেশ এখন বিপন্ন। ইটভাটা থেকে সৃষ্ট ধুলা ও ধোঁয়ার কারণে বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থী ও এলাকার বাসিন্দারা চর্মরোগ, হাঁচি, কাশি, ফুসফুসজনিত রোগসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। কমে গেছে ফসলের উৎপাদন। বিষাক্ত ধোঁয়ায় বড় বড় সব গাছ মরে গেছে। এত ক্ষয়ক্ষতির পরও নির্বিকার প্রশাসন। মাঝেমধ্যে দু-একটি ভাটায় অভিযান চালিয়ে কিছু টাকা জরিমানা করা ছাড়া তেমন কোনো পদক্ষেপ নেই।

দেহলা গ্রামের রিকশাচালক আলমগীর বলেন, রাস্তায় মাটি বহনকারী ট্রলি চলার কারণে ধুলাবালির মধ্যেই রিকশা চালাতে হচ্ছে। কয়েক বছর ধরে শ্বাসকষ্টে ভুগছি।

দেহলা গ্রামের আবদুল আজিজ বলেন, কয়েক বছর ধরে স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের সবাই চর্মরোগে আক্রান্ত।

দেহলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সেলিনা জাহান বলেন, ইটভাটার কারণে শিক্ষার্থীরা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের সমস্যা হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

জেবিএম ব্রিকসের মালিক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীদের যাতে অসুবিধা না হয়, সে কারণে বিদ্যালয়ের সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করে দিয়েছি। আর কী করার আছে।

মক্কা ব্রিকসের মালিক মুরাদ হাসান বলেন, জমির ব্যবস্থা করতে পারলে ভাটা সরিয়ে নেব। আইন অমান্য করে ইটভাটা স্থাপন করলেন কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে এইচটিসি ব্রিকসের মালিক আমিন হোসেন বলেন, এ কৈফিয়ত আপনাকে নয়, ডিসি অফিসে দেব।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাপ্তি চাকমা জনবাণীকে বলেন, ভাটার অনুমোদন দিয়েছে জেলা প্রশাসক ও পরিবেশ অধিদপ্তর। এখানে আমার কিছুই করার নেই। তবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এসএ/