জাতীয় স্মৃতি সৌধ সদৃশ্য ৫০০ বছরের শিমুল গাছ


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


জাতীয় স্মৃতি সৌধ সদৃশ্য ৫০০ বছরের শিমুল গাছ

ফুলবাড়ী প্রতিনিধি: কুড়িগ্রাম জেলার সীমান্ত ঘেঁষা ধরলা নদীবেষ্টিত ফুলবাড়ী উপজেলায় ৫০০ বছরের বেশি পুরনো দৃষ্টি নন্দিত বিশালাকৃতির একটি শিমুল গাছকে নিয়ে আজও রহস্য বিরাজমান। গাছটিকে ঘিরে রয়েছে নানা রুপ কথা।

শিমুল গাছটির মালিক দাবিদারদের পক্ষের দাবি একবার গাছটি কাটার চেষ্টা করা হলে একটা কোপ মারতেই গাছের গা দিয়ে রক্ত ঝরে পড়ায় সেই থেকে গাছটিকে বিক্রির চেষ্টা ও তা কাটছে না কেউ বলে জানান স্থানীয়রা। ফলে শতশত বছর পেরিয়ে গেলেও প্রাচীনতম এই শিমুল গাছটি আজও আপন মনে কালের সাক্ষী হয়ে বেঁচে আছে।

ফুলবাড়ী উপজেলা সদর থেকে ৩ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে কুটিচন্দ্রখানা গ্রামে এ গাছটি ৮ শতাংশ জমিতে তার শেকড় বিস্তৃত করে এখনও পুরো যৌবন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। প্রায় ১৫০ ফিট লম্বা এ শিমুল গাছটির গোড়ার পরিধি ৫৮ হাত।

বিশালাকৃতির এ গাছটিকে কাছাকাছি থেকে দেখলে মনে হবে সৃষ্টিকর্তা যেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতি ধরে রাখতে প্রকৃতিতে তৈরি করেছেন আর একটি স্মৃতিসৌধ। স্মৃতিসৌধ সাদৃশ্য এ গাছটির গোড়ার পাশে দাঁড়ালে মনে হবে এ যেন পাহাড়ের পাদদেশ। এ গাছের গোড়ায় দাঁড়িয়ে ক্যামেরায় ছবি উঠালে ছবিটি দেখে যে কেউ মনে করবে এ ছবি যেন পাহাড়ের পাদদেশের অথবা স্মৃতিসৌধের। এ গাছে মৌমাছির চাকসহ, বিভিন্ন প্রজাতির পাখির বাস। এ গাছটি টিয়া পাখির অভয়শ্রম। বিকেল হলেই টিয়া পাখিসহ বিভিন্ন পাখির কলরবে যে কেউ মুগ্ধ হবে।

আশ্চর্য্জনক এ গাছটি দেখার জন্য কুটিচন্দ্রখানা গ্রামে পদচারণা ঘটছে দূর-দুরান্তের প্রকৃতিপ্রেমী মানুষের। দর্শনার্থীরা এসে বাস্তবে গাছটির বয়সের সত্যতা ও নানা রহস্যময় রুপ কথা এলাকাসীর কাছে জানতে পেয়ে হতবাক হন। কেউ কেউ গাছের তলায় নিজের ছবি ফেসবুকে পোস্ট ও শেয়ার করে নিজেকে সার্থক মনে করেন। বাংলা নববর্ষ এলেই স্থানীয় বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন শিমুল গাছটির তলায় আয়োজন করেন আলোচনা সভা, কবিতা পাঠ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। হিন্দু ধর্মালম্বীরা এ দিনে গাছটির তলায় তাদের মনোবাসনা পূরণে ধর্মীয় পূজা অর্চনা করেন।

বিশালাকৃতির শিমুলগাছটির কাছে সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, গাছটির রহস্যবৃত অলৌকি‌ক রুপ কথা। দর্শনার্থীরাসহ এলাকার তরুণ, যুবক ও বৃদ্ধ জানিয়েছেন গাছটির রহস্যময় অলৈৗকিক ও রূপকথার গল্প। এসময় তারা দাবি করেছেন শিমুল গাছটি সরকারিভাবে সংরক্ষণের।

গাছটি সম্পর্কে নানাজন নানা কথা বললেও গাছটির বয়স কত? তা জানাতে পারেননি কেউ। এলাকার শতবর্ষী বৃদ্ধ আফছার আলী , শতবর্ষী বৃদ্ধা মোহিনী বালা, ৬৫ বছর বয়সী একাব্বর আলী, ৩০ বছরের যুবক আশিষ কুমারসহ এলাকার সকলে একটি কথায় জানিয়েছেন যে, আমরা আগে যেমন শিমুল গাছটি দেখেছি ঠিক তেমন অবস্থায় গাছটি এখনও রয়েছে। ঝড় বাতাসে ডাল পালা না ভাঙায় গাছটি এখনও অক্ষত রয়েছে।

শতবর্ষী বৃদ্ধ আফছার আলী  জানান, তিনি যুবক বয়সে থাকা কালে তৎকালীন কুটিচন্দ্রখানা গ্রামের সর্বোচ্চ বয়স্ক বৃদ্ধ খোকা চন্দ্র বর্মণের কাছে শুনেছেন, খোকা চন্দ্রের দাদা তার দাদার সময়ও তারা গাছটিকে বর্তমান যেমন দেখছেন ঠিক তেমনি এখনও দেখছেন। এতে এলাকাবাসীর সকলের ধারনা করছেন এই শিমুল গাছটির বয়স ৫০০ বছরেরও বেশি হবে।

শিমুল গাছটির পাশে বসবাসকারী একাব্বর আলী (৬৫) জানান, শিমুল গাছটি আগের চেয়ে দিন দিন আরো তাজা হচ্ছে। তিনি বলেন, গাছটির মহির রাবনের মত অমর হয়েছে।

শিমুলগাছটির জমির একাংশের মালিক মৃত-কোকন চন্দ্রের তার বড় ছেলে কিরন চন্দ্র (৬০) জানান, একবার এ গাছটি তার বাবা কোকন চন্দ্র ১০ হাজার টাকায় গাছ ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করে বিপাকে পড়েন। তার বাবা স্বপ্নে গাছটির অলৌকিক ক্ষমতা দেখে বাধ্য হয়ে গাছ বিক্রিত টাকা ব্যবসায়ীকে ফেরত দেন। ওই সময় গাছটির গায়ে কোপ দিলেই গাছটি থেকে রক্ত ঝরত বলেও জানান তিনি। গাছটি বিক্রি করলে ও কাটলে তাদের অমঙ্গল হবে এই ভয়ে সেই থেকে এই গাছটিকে কেউ বিক্রি ও কাটার চেষ্টা করছে না।

গাছটি এখন বিক্রি করবেন কি না? এমন প্রশ্ন করা হলে কিরণ চন্দ্র জানান, যতদিন গাছটি নিজ হতে মারা যাবে না। ততদিন পর্যন্ত তারা গাছটি বিক্রি কিংবা গাছটির কোনো ডাল কাটবেন না বলে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। পাশাপাশি তিনি বিশালাকৃতির এই দৃষ্টিনন্দিত গাছটি সংরক্ষণে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার কাছে সাহায্য সহানুভুতি কামনা করেন।

ছুটির দিনে  কুড়িগ্রাম থেকে শিমুল গাছটিকে দেখতে আসা দর্শনার্থী সাইমুম ইসলাম সাজু  জানান, আমরা এই প্রাচীনতম গাছটির রহস্যময় নানা রুপ কথা শুনে গাছটি দেখার জন্য এসেছি। সত্যিই বিশালাকৃতির এত বড় গাছ আমাদের জীবনের প্রথম দেখা। আমরা শিমুল গাছটিকে দেখে জীবনের না দেখা একটি চাহিদা পূরণ করলাম। তারা শিমুল গাছটির সরকারিভাবে সংরক্ষণ ও গাছটির চারিদিকে দর্শনার্থীদের বসার ব্যবস্থা করার দাবি জানান।

এসএ/