সম্পূর্ণ বধিরতা থেকে স্বাভাবিক জীবনে ৬ শতাধিক শিশু


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


সম্পূর্ণ বধিরতা থেকে স্বাভাবিক জীবনে ৬ শতাধিক শিশু

রবিবার (৭ আগস্ট) ১২টা ৩০ মিনিটে এ ব্লক অডিটোরিয়ামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উদ্যোগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সানুগ্রহে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় সম্পূর্ণ শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য অত্যন্ত ব্যয়বহুল কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট বরাদ্দপত্র সম্পূর্ণ বিনামূল্যে প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। 

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ইতোমধ্যে এই কর্মসূচীর আওতায় ছয় শতাধিক শিশু স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেয়েছে। যারা কানে শুনত না এবং কথাও বলতে পারতো না। তারা এখন কানে শুনতে পারছে, কথা বলতে পারছে। সমাজ ও পরিবারের বোঝা থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছে এসব শিশুরা। 

শুধু কি তাই যে মা-বাবা তার প্রিয় সন্তানের মুখে কোনোদিন মা-বাবা ডাক শুনতে পায়নি, তারা তাদের জীবনে মা-বাবা ডাক শুনতে পেয়েছেন। সত্যিই এটা ওই মা-বাবার জন্য এক বিরাট পাওয়া, বিশাল আনন্দের। আর বর্তমান সরকারের জন্য এটা একটি বড় অর্জন। মোট ৬ শত ২৫ জন স্বাভাবিক জীবনে ফিরে পেয়েছে। এদের মধ্যে ৬ শত ৫ জনই শিশু। বাকিরা বিভিন্ন বয়সের। তবে এই চিকিৎসা পদ্ধতি যেমন জটিল তেমন ব্যয়বহুল। শুধু মাত্র কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট ডিভাইসের দাম হল ৬ থেকে ১৪ লক্ষ টাকা। 

২০১০ সালে যখন এই মহতী কর্মসূচীটি চালু হয় তখন ডিভাইস সহ চিকিৎসার ব্যয় ছিল প্রায় অর্ধকোটি টাকা। তবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অটোল্যারিংগোলজি হেড নেক সার্জারি বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ, অডিওলজিস্ট, স্পিচ থেরাপিস্টসহ সুদক্ষ টিম বর্তমান আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের সহায়তায় সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এই মহতী সেবাটি দিয়ে আসছে।   

আজকের এই মহতী অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আছেন বলেই টয়েটা গাড়ির সমানমূল্যের একটি ডিভাইস বিনামূল্যে প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন এমনভাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়কে গড়ে তুলছে যাতে সব ধরণের আধুনিক চিকিৎসা এখানেই দেয়া সম্ভব হয় এবং রোগীদের চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যেতে না হয়।  

সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মোঃ জাহিদ হোসেন, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট কার্যক্রম বিএসএমএমইউ এর কর্মসূচী পরিচালক ও অটোল্যারিংগোলজি-হেড এন্ড নেক সার্জাারি বিভাগের অটোলজি ডিভিশনের ডিভিশন প্রধান অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম জহুরুল হক সাচ্চু। 

অনুষ্ঠানে বলা হয়, শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালিত কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট কার্যক্রম-বিএসএমএমইউ-এর কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট বরাদ্দ পত্র বিতরণ অনুষ্ঠান আজ পরিচালিত হচ্ছে। এই কার্যক্রমটি কর্মসূচী পরিচালক অধ্যাপক ডা. এএইচএম জহুরুল হক-এর তত্ত্বাবধানে অটোল্যারিংগোলজি-হেড এন্ড নেক সার্জারি বিভাগ এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সরাসরি অর্থায়নে পরিচালিত হচ্ছে। 

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট বা বায়োনিক ইয়ার হলো শ্রবণ সহায়ক অত্যাধুনিক অত্যন্ত ব্যয়বহুল এমন একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস যা মারাত্মক বা সম্পূর্ণ বধির ব্যক্তিকে শব্দ শুনতে সহায়তা করে। প্রতিটি রোগীর কানে কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট স্থাপনে শুধু ডিভাইসের জন্যই ব্যয় হয় ৬ থেকে ১৪ লক্ষ টাকা। এই ইমপ্লান্টটি কানের জটিল অপারেশনের মাধ্যমে অন্তঃকর্ণে স্থাপন করা হয়। পরবর্তীতে দক্ষ অডিওলজিস্ট ও স্পীচ থেরাপীস্ট-এর মাধ্যমে দীর্ঘ সময় ধরে কথা বলার প্রশিক্ষণের মাধ্যমে রোগীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা হয়।

শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে ২০১০ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ডেভলপমেন্ট অব কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট প্রোগ্রাম ইন বিএসএমএমইউ’ কর্মসূচী চালু হয়। এখানে ২০১১ সালে প্রথম  রোগীর কানে সফলতার সঙ্গে কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট স্থাপন করা হয়। এরপর থেকে ধীরে ধীরে এই চিকিৎসার কথা ছড়িয়ে পড়ে দেশব্যাপী। বাংলাদেশ সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে এই কর্মসূচীটি পরিচালিত হচ্ছে। কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট বরাদ্দ নীতিমালার আলোকে বরাদ্দপত্র প্রদানের মাধ্যমে নির্বাচিত রোগীদের কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট ডিভাইসটি প্রাপ্তির ব্যাপারে সনদ প্রদান করা হয়। আজকের এই অনুষ্ঠানে মোট ১০০ জনকে কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট ডিভাইস বরাদ্দপত্র প্রদান করা হয়েছে।

এ পর্যন্ত বিএসএমএমএউ-তে মোট ৬২৫ জন শ্রবণ প্রতিবন্ধীকে সার্জারির মাধ্যমে কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট স্থাপন করা হয়েছে। এই ইমপ্লান্ট প্রোগ্রামটি কোভিড কালীন সময়ে কয়েক মাস বন্ধ থাকার পর আবার চালু হয় এবং এ সময়ে ৬ মাসে প্রায় ১০০টি কক্লিয়ার  ইমপ্লান্ট সার্জারি সম্পন্ন হয়। বর্তমানে এই কার্যক্রম থেকে চিকিৎসকসহ অন্যান্যদের ট্রেনিং প্রদান করা হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে অধ্যাপক ডা. এএইচএম জহুরুল হক-এর নেতৃত্বে এই কর্মসূচিতে ছয় জনের একটি টিম নিয়মিত কাজ করছেন। অন্যরা হলেন অধ্যাপক ডা. অসীম কুমার বিশ্বাস ও সহকারী অধ্যাপক ডা. হারুনুর রশীদ তালুকদার। 

এখানে দক্ষ স্পিচ থেরাপিষ্ট, অডিওলজিস্ট এবং সার্জনের সবন্বয়ে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে জটিল এই চিকিৎসা সহজেই করা সম্ভব হচ্ছে।

আরএক্স/