কুষ্টিয়ায় রক্সি পেইন্টের এরিয়া ম্যানেজারকে হত্যা, আটক ২
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২
কুষ্টিয়ায় র্যাবের অভিযানে ভেড়ামারা উপজেলায় রক্সি পেইন্টের এরিয়া ম্যানেজার লোকমান হোসেন হত্যা মামলায় কিলিং মিশনের প্রধান আসামি সহ ২ জন গ্রেফতার হয়েছে। রবিবার (৭ আগষ্ট) বিকালে ঢাকা জেলার সাভার এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামীরা হলেন- ভেড়ামারা চাদগ্রামপৌর রেলগেইট দক্ষিণ পাড়া এলাকার মৃত দাউদ খন্দকার ওরফে মতিয়ার রহমানের ছেলে মােঃ দর্পণ আলী (৬১) ও দর্পনের ছেলে সােহানুর রহমান সােহান (২২)। সোমবার (৮ আগষ্ট) সকালে সম্মেলন কক্ষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন র্যাব-১২ কুষ্টিয়া ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডার স্কোয়ান্ড্রন লিডার ইলিয়াস খান।
র্যাব-১২ কুষ্টিয়া ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডার স্কোয়ান্ড্রন লিডার ইলিয়াস খান জানান, “গত ৩ আগষ্ট সকাল আনুমানিক সাড়ে ৯ টার সময় কুষ্টিয়া ভেড়ামারা সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের গলির পাশে পলিথিন দ্বারা মােড়ানাে অবস্থায় একটি অজ্ঞাত পরিচয়ের মৃতদেহ উদ্ধার করে ভেড়ামারা থানা পুলিশ। পরবর্তীতে মৃতদেহটি রক্সি পেইন্ট কোম্পানি লিমিটেড এর কুষ্টিয়া অঞ্চলের এরিয়া ম্যানেজার লােকমান হােসেন এর বলে তার স্ত্রী শনাক্ত করে। নিহত লােকমান হােসেন গত ১ আগষ্ট সকাল সাড়ে ১০ টার সময় কুষ্টিয়া শহরে তার ভাড়া বাসা হতে কোম্পানির মালের অর্ডার নেওয়া ও বকেয়া বিল আদায়ের জন্য ভেড়ামারা এলাকার উদ্দেশ্যে বের হন। ঐদিন বিকেলে তার স্ত্রী লােকমান হােসেন এর মােবাইল ফোনে কল দিলে ফোন বন্ধ পান এবং এরপর থেকে লােকমান হােসেন নিখোঁজ হন। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে তার স্ত্রী গত ২ আগষ্ট কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা থানায় তার স্বামী নিখোজ বলে একটি সাধারন ডায়েরি করেন। উক্ত হত্যাকান্ডের প্রেক্ষিতে নিহতের স্ত্রী জিন্নাত আরা টুম্পা বাদী হয়ে ৩ আগষ্ট ভেড়ামারা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। হত্যাকান্ডটি বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকা ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারিত হলে দেশব্যাপী ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। ফলশ্রুতিতে, আসামিদের গ্রেফতারে র্যাব উদ্যোগী হয়ে গােয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রাখে। এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-১২ সিপিসি-১, কুষ্টিয়া ক্যাম্প এর একটি আভিযানিক দল র্যাব সদর দপ্তর এর গােয়েন্দা শাখার সহায়তায় আসামী দর্পনের বোনের বাসা ঢাকা সাভার এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত আসামি সােহানুর রহমান সােহানের দেখানাে মতে হত্যাকান্ডের স্থান দর্পণ হার্ডওয়্যারের ভাড়াকৃত গােডাউন হতে হত্যাকারীদের রক্তমাখা পােশাক উদ্ধার করা হয়।
তিনি আরও জানায়, গ্রেফতারকৃত আসামীদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মামলার আসামি মােঃ সােহানুর রহমান সােহান লােকমান হােসেন হত্যাকান্ডে তার সক্রিয় অংশগ্রহনের কথা প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে। নিহত লােকমান হােসেন ভেড়ামারা উপজেলায় অবস্থিত দর্পণ হার্ডওয়্যারের নিকট কোম্পানির বকেয়া বিল আদায়ের উদ্দেশ্যে গেলে দোকানের মালিক মােঃ দর্পণ আলীর ছেলে মােঃ আব্দুল আউয়াল র্যাভেন তার বাবার বকেয়া না দেয়ার উদ্দেশ্যে লােকমান হােসেনকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মতে র্যাভেনের ছােট ভাই সােহান লোকমানকে তাদের ভাড়াকৃত গােডাউনে হত্যার উদ্দেশ্যে নিয়ে যায়। সেখানে আগে থেকে অবস্থান করা ভেড়ামারা কাচারিপাড়া এলাকার শেরেগুল ইসলামের ছেলে প্রান্ত ইসলাম সাব্বির (২১) ও একই এলাকার তাহাজের ছেলে মােঃ শুভ (২৩) এর সহযােগিতায় এরিয়া ম্যানেজার লোকমান হোসেনকে হাতুড়ি দিয়ে মাথায় আঘাত করে এবং শ্বাসরােধ করে হত্যাকান্ড সম্পন্ন করে। হত্যাকান্ডের পরের দিন সকালে সােহান তার বাবা দর্পণ আলীকে বিষয়টি জানায়। তখন দর্পণ আলী সােহানকে মৃতদেহটি গুম করে ফেলার নির্দেশ দেয়। এরপর ২ আগষ্ট নিহত লােকমানের খোঁজে তার স্ত্রী দর্পণ হার্ডওয়্যার এ আসলে দর্পণ আলী জানায় যে, লােকমান আগেরদিন তার দোকানে এসেছিল এবং বকেয়া টাকা নিয়ে চলে গেছে। একই দিন গভীর রাতে র্যাভেনের বন্ধু জীবন এবং দর্পণ হার্ডওয়্যার এর কর্মচারী তুহিন এর পাহারায় লোকমানের লাশ ভেড়ামারা সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশের গলিতে ফেলে রাখে। তারপর ৩ আগষ্ট সকালে পুলিশের প্রেফতার এড়াতে দর্পণ আলী তার ছােট ছেলে সােহানকে নিয়ে বাড়ি থেকে আত্মগােপনে চলে যায়।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত গ্রেফতারকৃত আসামীদের আদালতে প্রেরণ করে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন ছিলো।
এসএ/