সাফারি পার্কে ৯ জেব্রার মৃত্যুর কারণ উদঘাটন
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২
গাজীপুর প্রতিনিধি: গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি
পার্কে তিন সপ্তাহের ব্যবধানে নয়টি জেব্রার মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে চারটি মারামারি
করে ও পাঁচটি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণে মারা গেছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
মঙ্গলবার
(২৫ জানুয়ারি) বিকেলে সাফারি পার্কের ঐরাবতি বিশ্রামাগারে মৃত্যুর কারণ উদঘাটনে প্রাণী
বিশেষজ্ঞ ও গবেষক দলের মধ্যে বৈঠকের আয়োজন শেষে এ কথা জানানো হয়।
গত
২ জানুয়ারি থেকে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত এ পার্কে ৯টি জেব্রার মৃত্যু হয়। নেতিবাচক পরিস্থিতির
কথা ভেবে পার্ক কর্তৃপক্ষ তা জনসম্মুখে প্রকাশ করেনি। ৯টির জেব্রার মৃত্যুর পর এখন
পার্কে জেব্রার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০টিতে।
এসব
প্রাণীর মৃত্যুর পর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার উপস্থিতিতে ময়না তদন্ত সম্পন্ন করা
হয়। পরে বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের নমুনা ঢাকার মান নিয়ন্ত্রণ গবেষণাগার ও ময়মনসিংহের
কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগারে পাঠানো হয়েছিল। এরই মধ্যে এর প্রতিবেদন এসেছে। বিশেষজ্ঞরা
প্রতিবেদনের আলোকে মৃত্যুর সঠিক কারণ ব্যাখ্যা করেন।
বিশেষজ্ঞ
দলে ছিলেন- জাতীয় চিড়িয়াখানার সাবেক কিউরেটর ডা. এ বিএম শহীদ উল্লাহ, বাংলাদেশ কৃষি
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাথলজি অনুষদের অধ্যাপক ড. মো.আবু হাদী নুর আলী খান, একই বিশ্ববিদ্যালয়ের
ভেটেরিনারি অনুষদের সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল আলম, একই বিশ্ববিদ্যালয়ের
ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম, গাজীপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা
ডা. এসএম উকিল উদ্দিন ও সাফারি পার্কের ভেটেরিনারি কর্মকর্তা ডা. হাতেম সাজ্জাত জুলকারনাইন।
ডা.
এ বি এম শহীদুল্লাহ আরও জানান, জেব্রা দলবেঁধে চলে। মৃত্যুর আগ থেকে এদের মধ্যে কোনো
রোগের উপসর্গ দেখা যাচ্ছে না। প্রাণীগুলো বন্য, এদের কাছেও যাওয়া যায় না। হঠাৎ তারা
দল থেকে আলাদা হয়ে মাটিতে পড়ে যায়, সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় শ্বাসকষ্ট। পেট ফুলে গিয়ে মুখ
দিয়ে ফেনা বের হতে থাকে। এক সময় মারা যাচ্ছে। করোনা সন্দেহে পিসিআর ল্যাবে মৃত জেব্রাগুলোর
নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। রিপোর্টগুলো নেগেটিভ এসেছে। এছাড়াও খাবারে বিষক্রিয়ায় মৃত্যু
হতে পারে- এমন সন্দেহে খাবারগুলোও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। মৃত জেব্রাগুলোর ফুসফুস,
লিভার, মৃত্যুর পর পেটে থাকা অর্ধগলিত খাবারগুলো পরীক্ষা করা হয়েছে। যার রিপোর্ট সভার
আগেই আমাদের কাছে চলে আসে।
মেডিকেল
বোর্ডের সভায় জেব্রার নিরাপদ আবাসনের জন্য ১০ দফা সুপারিশ করা হয়েছে।
সেগুলো হলো-জেব্রাগুলোকে আলাদা করে রাখতে হবে। যেখান থেকে জেব্রাগুলোকে ঘাস দেওয়া হতো, সেখান থেকে ঘাস সরবরাহ আপাতত বন্ধ রাখতে হবে। যেসব ব্যাকটেরিয়ার ভ্যাকসিন নেই সেসব ব্যাকটেরিয়া থেকে বাঁচাতে খাবারের সঙ্গে এন্টিবায়োটিক পাউডার ব্যবহার করতে হবে। খাবারগুলো টুকরো করে কেটে ট্রের মধ্যে পানিতে করে দিতে হবে।
সাফারি
পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তবিবুর রহমান বলেন, হঠাৎ করে এভাবে প্রাণিগুলোর মৃত্যু
খুবই কষ্টকর। নিজের হাতে লালন পালনের পর চোখের সামনেই এদের মৃত্যু দেখতে হলো। এখানে
আমাদের কারও কোন ধরনের গাফিলতি ছিল না।
ওআ/