রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্পে রপ্তানি বাড়বে দ্বিগুণ
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২
বর্তমানে দেশের রাজশাহী, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, সাতক্ষীরা, মেহেরপুরসহ চট্রগ্রাম বিভাগে মানসম্মত ও রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন হচ্ছে। রাজধানী থেকে অধিক দূরুত্বের জন্য পরিবহন, সংরক্ষণ, বাজারজাতকরণসহ বিভিন্ন কারণে প্রতিবছর উৎপাদিত আমের ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ নষ্ট হয়। তবে এবার নষ্ট রোধ করে প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে বিদেশে বাড়তি আম রপ্তানির উদ্যোগ নিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্পের আওতায় এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ৪৯ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। প্রকল্পটি জুলাই ২০২২ থেকে জুন ২০২৭ মেয়াদে বাস্তবায়ন করবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। অধিক আম উৎপাদন হয় এমন জেলার যে সব কৃষকের ৫০ শতকের বেশি কৃষিজমিতে আম বাগান রয়েছে তাদের উপকারভোগী কৃষক হিসেবে বাছাই করে রপ্তানিমুখী বাজার সংযোগ স্থাপনই এই প্রকল্পের অন্যতম লক্ষ্য।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে ইংল্যান্ড, ইতালি, নেদারল্যান্ডস ও হংকংয়ে ১ হাজার ৬২৩ মেট্রিক টন আম বিদেশে রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানায়, বছরে দেশে এক লাখ ৭৯ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদন হয় এর মধ্যে নষ্ট হয় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ। প্রকল্পের আওতায় ৫ শতাংশ আমের উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ আম নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষাসহ বিদেশে রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন বাড়ানো হবে। এতে রপ্তানি বাড়বে দ্বিগুণ।
রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্পের ফোকাল পারসন কৃষিবিদ মোহাম্মদ আরিফুর রহমান জনবাণীকে বলেন, প্রস্তাবিত প্রকল্প এলাকায় যে সব কৃষকের ৫০ শতকের বেশি কৃষিজমিতে আম বাগান রয়েছে তাদের উপকারভোগী কৃষক হিসেবে বাছাই করা হয়েছে। মানসম্মত আম উৎপাদন বাড়িয়ে রপ্তানি আয়ও বাড়ানো হবে। প্রতি বছর দেশে এক লাখ ৭৯ হাজার মেট্রিক টনের অধিক আম উৎপাদন হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে আমের উৎপাদন আরও বাড়বে। প্যাকেজিং, আম ব্র্যান্ডিং, ওয়াশিংসহ সব ধরনের সুবিধা পাবেন কৃষক। আমাদের মূল লক্ষ্য আম নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা করে বিদেশে রপ্তানি বাড়ানো।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, প্রকল্প এলাকার অন্তর্ভুক্ত দেশের চারটি বিভাগের ১৫টি জেলার ৪৬টি উপজেলা। রাজশাহী জেলার বাঘা, চারঘাট, পুঠিয়া, তানোর, মোহনপুর। নওগাঁ জেলার বদলগাছি, সাপাহার, পোরসা, মান্দা। নাটোর জেলার সদর, বড়াইগ্রাম, বাগাতিপাড়া, লালপুর। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর, শিবগঞ্জ, নাচোল, ভোলাহাট, গোমস্তাপুর। রাঙ্গামাটি জেলার সদর, নানিয়ারচর, বরকল। বান্দরবান জেলার সদর, দিঘীনালায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।
এছাড়া তালিকায় আরও রয়েছে খাগড়াছড়ি জেলার সদর ও দিঘীনালা। রংপুর জেলার সদর, পীরগঞ্জ, মিঠাপুকুর, বদরগঞ্জ। ঠাকুরগাঁও জেলার সদর ও পীরগঞ্জ। যশোর জেলার সদর, মনিরামপুর, শার্শা। সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া ও দেবহাটা। কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর ও দৌলতপুর। চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা এবং মেহেরপুর জেলার সদর ও মুজিবনগর।
উত্তম কৃষি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মানসম্মত আমের বর্তমান অবস্থা থেকে ৫ শতাংশ উৎপাদন বাড়ানো, রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদনের মাধ্যমে কৃষকের আয় বাড়ানো, নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, রপ্তানি আয় বাড়ানো ও গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়ন। মানসম্মত আম উৎপাদন ও সংরক্ষণ বিষয়ে কৃষক, কর্মকর্তা এবং সুবিধাভোগী জনগোষ্ঠীর সক্ষমতা বাড়ানো হবে।
নানান কারণে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হচ্ছে বলে দাবি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের। ডিএই জানায়, আম পুষ্টিকর ফল। অতুলনীয় স্বাদের জন্য একে ফলের রাজা বলা হয়। বিশ্বে আম উৎপাদনকারী দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম। বাংলাদেশে প্রায় ৭২ জাতের আম উৎপাদিত হয়, যার মধ্যে জনপ্রিয় জাতগুলো হলো- খিরসাপাত, গোপালভোগ, ল্যাংড়া, ফজলি, হাড়িভাঙা ও আম্রপালি।
বাংলাদেশে জুনের মাঝামাঝি সময় থেকে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত আমের সরবরাহ থাকে। সামগ্রিক বিবেচনায় পুষ্টিকর, সুস্বাদু আম আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিরাপদ ও উচ্চ মানসম্মত আম উৎপাদন করা সম্ভব হলে দেশের রপ্তানি আয় বাড়বে। পাশাপাশি করোনাকালীন গ্রামে ফেরা মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
উত্তম কৃষি চর্চার মাধ্যমে আম উৎপাদনে ২ হাজার ৩০০টি প্রদর্শনী, ২ হাজার ৩০০টি রপ্তানিযোগ্য জাতের আম বাগান সৃজন, বিদ্যমান ১ হাজার ৮৪০টি আম বাগানে সার ও বালাই ব্যবস্থাপনা করা এবং ১ হাজার ৮৪০টি বাগানে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার (ব্যাগিং ও বালাই ব্যবস্থাপনা) করে মানসম্মত আম উৎপাদন। ৯২০ ব্যাচ কৃষক প্রশিক্ষণ, রপ্তানিকারক, বাজারজাতকারী ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডার প্রশিক্ষণ, আম পরিবহন, কার্গো ব্যবস্থাপনায় জড়িতদের প্রশিক্ষণ, কৃষি অফিসার্স প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।
কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণ ভ্রমণ, পাঁচটি ম্যাংগো গ্লোডিং, ক্লিনিং ও কুলিং শেড নির্মাণ, ৯২০টি ক্ষুদ্র কৃষি যন্ত্রপাতি সংগ্রহ ও সরবরাহ, চারটি হাইড্রোলিক ম্যাংগো হারভেস্টার, ৪৬টি গার্ডেন টিলার, ৯২০টি ফুট পাম্প, ৪৬০টি পাম্প।
প্রকল্প দলিলে প্রস্তাবিত ভ্রমণ ব্যয়, অন্যান্য মনিহারি,ব্যবহার্য দ্রব্যাদি, প্রযুক্তির ব্যবহার করে প্রদর্শনী এবং কৃষিপ্রযুক্তির তথ্য আদান-প্রদান ও সংরক্ষণ, ফটোকপিয়ার, স্ক্যানার মেশিন খাতের ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে হ্রাস করা প্রয়োজন বলে জানায় কমিশন।
প্রকল্পটির মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ২৫ কোটি টাকার বেশি হওয়ায় সেন্টার ফর রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট স্ট্যাডিস সি (সিআরডিএস), আম গবেষণা কেন্দ্র ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় সম্ভাব্যতা যাচাই কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) শরিফা খান জনবাণী কে বলেন, প্রকল্পের প্রস্তাবনা আমাদের হাতে এসেছে। আমরা পিইসি সভা করেছি। প্রকল্পের বিষয়ে আমাদের কিছু পযর্বেক্ষণ দিয়েছি। আমাদের পযর্বেক্ষণ সঠিকভাবে প্রতিপালন করেছে ডিএই। সেই মোতাবেক আমরা প্রকল্পটি অনুমোদন করেছি।
প্রকল্প প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, বিদেশে আম রপ্তানির অন্যতম সমস্যা আমরা কোয়ালিটিফুল আম উৎপাদন করতে পারি না। আমের মুকুল আসার পর থেকে কীভাবে এটা সংরক্ষণ ও প্যাকেজিং করা যায় সে বিষয়ে কৃষকদের হাতে-কলমে শিক্ষা দেওয়া হবে। ফলে বিদেশে মানসম্মত আম রপ্তানি করতে পারবো।
এসএ/