মদ বিক্রিতে কেরুর লাভ শত কোটি টাকা


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


মদ বিক্রিতে কেরুর লাভ শত কোটি টাকা

কেরু এ্যান্ড কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড বাংলাদেশের চুয়াডাঙ্গা জেলায় দর্শনাতে অবস্থিত একটি ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান। এটি বাংলাদেশের বৃহত্তম চিনি কল। তবে উপজাত হিসেবে এই কারখানা থেকে মদ্য উৎপাদিত হয়ে থাকে।

এ বছর ডিস্টিলারি ইউনিট থেকে প্রতিষ্ঠানটির মদ বিক্রি করে আয় হয়েছে ৩৬৭ কোটি টাকা। লাভ হয়েছে ১০০ কোটি টাকারও বেশি যা কোম্পানিটির এ যাবৎ কালের রেকর্ড।

গত বছরের তুলনায় ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রায় ১০ লাখ প্রুফ লিটার বেশি মদ বিক্রি করেছে কেরু কোম্পানি। এই প্রথম ডিস্টিলারি ইউনিট থেকে ১০০ কোটি টাকারও বেশি মুনাফা করেছে কেরু। গত বছর এই ইউনিট থেকে লাভ হয়েছিল প্রায় ৯০ কোটি টাকা।

বিদেশি মদের আমদানি কমে যাওয়ায় এবার মদ বিক্রি এবং মুনাফায় রেকর্ড করেছে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানি। এবারই প্রথমবারের মতো কেরু কোম্পানি বিভিন্ন ইউনিট থেকে ৪০০ কোটি টাকার পণ্য বাজারজাত করেছে। যা প্রতিষ্ঠানটির ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

এদিকে প্রতি বছরের মতো এবারও চিনি ইউনিটে লোকসান হয়েছে প্রায় ৫০ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে চিনি ইউনিটের লোকসান সমন্বয়ের পরও কোম্পানির নিট মুনাফা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭০ কোটি টাকা। যা গত ২০২০-২১ অর্থ বছরে ছিল ১৪ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।

দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, অন্য বছরের তুলনায় ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫০ শতাংশেরও বেশি বারে কেরুর উৎপাদিত মদের চাহিদা রয়েছে। গত বছরের তুলনায় ২০২১-২২ অর্থবছরে আরও ৩০ শতাংশ বেড়েছে কেরুর মদের চাহিদা। ওই অর্থবছরে প্রায় ১০ লাখ প্রুফ লিটার বেশি মদ বিক্রি করেছে কেরু কোম্পানি। প্রতি মাসে গড়ে ১২ থেকে ১৩ হাজার কেস কেরুর উৎপাদিত মদ বিক্রি হয়েছে।

কেরু অ্যান্ড কোম্পানি ১৭৫ মিলিলিটার, ৩৭৫ মিলিলিটার এবং ৭৫০ মিলিলিটারের বোতলে মদ বাজারজাত করে থাকে। প্রতিটি কেসে ৭৫০ মিলিলিটারের ১২টি, ৩৭৫ মিলিলিটারের ২৪টি এবং ১৭৫ মিলিলিটারের ৪৮টি মদের বোতল থাকে। কেরুতে মদের ৯টি ব্র্যান্ড রয়েছে। এগুলো হলো- ইয়েলো লেবেল মল্টেড হুইস্কি, গোল্ড রিবন জিন, ফাইন ব্র্যান্ডি, চেরি ব্র্যান্ডি, ইম্পেরিয়াল হুইস্কি, অরেঞ্জ কুরাকাও, জারিনা ভদকা, রোসা রাম ও ওল্ড রাম।

কেরু কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, দেশে বিদেশি মদের আমদানি নিয়ন্ত্রণ করায় কেরুর মদের চাহিদা বেড়েছে। গত বছর শুল্ক ফাঁকি রোধে মদ আমদানিতে নজরদারি বাড়ায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এতে বৈধপথে হ্রাস পায় মদ আমদানি। এ কারণে বিদেশি মদের সংকট দেখা দেয় দেশের অনুমোদিত বারগুলোতে। তারপর থেকে ক্রমেই বৃদ্ধি পায় দেশে উৎপাদিত মদের চাহিদা। সেই চাহিদা পূরণে উৎপাদন বাড়ায় কেরু কোম্পানি।

কেরুর ডিস্টিলারি বিভাগের মহাব্যবস্থাপক ফিদাহ হাসান বাদশা জানান, বর্তমানে কেরুতে চিনি, ডিস্টিলারি, ফার্মাসিউটিক্যালস, বাণিজ্যিক খামার, আকন্দবাড়িয়া খামার (পরীক্ষামূলক) এবং জৈব সার এই ছয়টি ইউনিট রয়েছে। এর মধ্যে শুধু ডিস্টিলারি ও জৈব সার ইউনিট লাভজনক। আখের রসের গুড় থেকে অ্যালকোহল ও বিভিন্ন ধরনের স্পিরিট তৈরি করে থাকে কোম্পানিটি। যা চিনি উৎপাদনের উপজাত।

দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোশাররফ হোসেন জানান, ১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানটির উন্নয়নের লক্ষ্যে ১০২ কোটি ২১ লাখ টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। প্রকল্পটি শেষ হলে উৎপাদন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় করা হবে। প্রকল্পটির বাস্তবায়ন সম্পন্ন হলে উৎপাদন সক্ষমতা দ্বিগুণ হবে। 

কেরু অ্যান্ড কোম্পানির ঢাকা, চট্টগ্রাম ও চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনায় তিনটি বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে। এছাড়া পাবনার রূপপুর, কক্সবাজার ও পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় ১টি করে বিক্রয় কেন্দ্র এবং রাজশাহী ও রামুতে ১টি করে ওয়্যারহাউস নির্মাণের মাধ্যমে বাজার সম্প্রসারণের পরিকল্পনাও করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

চিনি উৎপাদনের জন্য আখের রস আহরণের পর তিনটি উপজাত পাওয়া যায়। এর মধ্যে রয়েছে গুড়, ব্যাগাস ও প্রেস মাড। মদ বা অ্যালকোহল উৎপাদনের প্রধান উপাদান হল গুড়। গুড়ের সঙ্গে ইস্ট প্রক্রিয়াকরণের পরে তৈরি করা হয় অ্যালকোহল।

বর্তমানে সারাদেশে কেরুর ১৩টি ওয়্যারহাউস ও ৩টি বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে। এরই মধ্যে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর কেরুর ২টি নতুন বিক্রয়কেন্দ্রের অনুমোদন দিয়েছে।

আরএক্স/