চাঁদার দাবিতে যুবলীগ নেতার সিনেমা হল দখল!


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


চাঁদার দাবিতে যুবলীগ নেতার সিনেমা হল দখল!

পটুয়াখালীর বাউফলে জমির মালিকেরা প্রায় এক বছর আগে মালামালসহ সিনেমা হল বিক্রি করে দিয়েছেন। স্থানীয় প্রভাবশালী এক যুবলীগ নেতা চাঁদার দাবিতে সেই জমি জোড়পূর্বক দখলে রেখে সিনেমা হলের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার কাগুজিরপুল এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।

ওই যুবলীগ নেতা দাসপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সুখ রঞ্জন নট্টের ছেলে সুধীর নন্দী (৪০) তিনি উপজেলা যুবলীগের সদস্য।

স্থানীয় বাসিন্দা ও মালিক পক্ষ জানান, ৯০ দশকের দিকে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের কয়েকজন উপজেলা সদরের কাগুজিরপুর এলাকায় বৈশাখী নামে সিনেমা হল প্রতিষ্ঠিত করে ব্যবসা শুরু করেন। সিনেমা হলের দর্শক কমে আসলে ২০১৫ সালের শেষ দিকে মালিক কর্তৃপক্ষ সিনেমা হলটি বন্ধ করে দেয়া।

পরবর্তীতে সিনেমা হলের প্রচারণার মাইকিং এর দায়িত্বে থাকা সুধীর নন্দী সিনেমা হল পরিচালনা কমিটির সভাপতি সত্য রঞ্জন সাহাকে ম্যানেজ করে শর্ত সাপেক্ষে সিনেমা হলটি চালু করেন। যদিও সত্য রঞ্জন সিনেমা হল  কিংবা সিনেমা হলের জমির কোনো মালিক ছিলেন না। মালিকপক্ষ (সত্য রঞ্জন) এলাকার সম্মানিত ব্যক্তি হিসেবে তাঁকে সিনেমা হল পরিচালনা কমিটির সভাপতি বানিয়েছিলেন । সম্প্রতি তিনি মারা যান।

সিনেমা হলটির মালিক সনজিৎ কুমার সাহা বলেন, ‍“মালিকপক্ষের অনুমতি না নিয়েই এক সময় সিনেমা হলের মাইকিং এর দায়িত্বে থাকা সুধীর নন্দীকে সত্য রঞ্জন সাহা সিনেমা চালানোর অনুমতি দিয়েছিলেন। কিন্তু সত্য রঞ্জনের দেওয়া শর্ত অনুযায়ী পৌরসভার কর ও জমির খাজনা পর্যন্ত পরিশোধ করেননি। সিনেমা হল চালিয়ে ব্যবসা করলেও মালিকপক্ষকে কোন টাকা পয়সা দিতে না সুধীর।”

আরেক মালিক গৌতম সাহা বলেন, “সিনেমা হল নিয়ে দিনে দিনে পৌরকর ও খাজনাসহ অন্যান্য ঋণ বেড়ে যাওয়ার কারণে সব মালিক ও তাঁদের ওয়ারিশগণেরা সর্ব সম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নিয়ে ২০২১ সালের ৮ সেপ্টেম্বর মালামালসহ সিনেমা হল ২৪ শতাংশ জমি স্থানীয় মো. রুহুল আমিন হাওলাদারের ছেলে মো. আরিফুর রহমানের কাছে ৮৩ লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছেন।” 

মালিক মোহন সাহা বলেন, “সুধীর এক সময় তাঁদের সিনেমা হলের মাইকং করতেন ও হলের মধ্যে বাদাম বিক্রি করতেন। কয়েক বছর আগ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যাওয়া-আসার সুযোগে মাননীয় প্রধাণমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ছবি তুলে সেই ছবি বিভিন্ন জায়গায় টাঙিয়ে নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর পালিত ছেলে পরিচয় দিয়ে প্রভাব বিস্তার করে আসছে। যা প্রশাসনসহ এলাকার সবাই জানেন। এ কারণে সুধীর প্রসঙ্গে সবাই নীরবতা পালন করে।”

বর্তমান মালিক আরিফুর রহমান বলেন, “কবলা সূত্রে মালিক হওয়ার পর জমি বুঝে নিতে গেলে সুধীর নন্দী বলে, জমি কিনলেই দখল পাওয়া যায় না। দখল নিতে হলে তাঁকে (সুধীর) ২৬ লাখ টাকা দিতে হবে। এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ করলেও অদৃশ্য কারণে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।”

এ বিষয়ে যুবলীগ নেতা সুধীর বলেন, “আরিফুর রহমান নামে কাউকে তিনি চেনেন না। তিনি সত্য সাহার কাছ থেকে ২০ বছরের জন্য সিনেমা হল লিজ নিয়েছেন। তিনি লিজ মালিক।” 

এ সংক্রান্ত নিববন্ধিত (রেজিষ্ট্রি)  দালিলিক কোনো প্রমাণ আছে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “নিববন্ধিত দালিলিক কোনো প্রমাণ নাই। প্রধানমন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে কোনো প্রভাব বিস্তার করছেন না বলেও সুধীর দাবি করেন।”

বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল মামুন লিখিত অভিযোগের বিষয়ে বলেন, “দুই পক্ষই স্থানীয়ভাবে আপোস-মীমাংসার কথা বলেছে। এ কারণে ওই বিষয়ে আর অগ্রসর হননি। ফের অভিযোগ করলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

 কে এই সুধীর?

দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সুধীর সবার বড়। বাবা সুখ রঞ্জন নট্ট ছিলেন পান বিক্রেতা। মা ঝিয়ের কাজ করতেন। অভাবের কারণে তিন ভাই-বোনের কেউ পড়াশোনা করতে পারেননি। সিনেমা হলের প্রচারণার মাইকিং করতেন। কয়েক বছর আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আসা-যাওয়ার পর থেকে তিনি নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর পালিত ছেলে বলে দাবি করেন। এরপর তাঁর প্রভাবে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ গুরু মানতে শুরু করেন। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

বাউফল পৌরসভার বকুলতলা সড়কে রয়েছে সুরোম্য দ্বিতল ভবন ও দাসপাড়া গ্রামেও রয়েছে একতলা পাকা ভবন। বাউফল থানার পূর্ব পাশে রয়েছে জুয়েলারি ব্যবসা ও জুতার দোকান। বাউফল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সামনের সড়কে রয়েছে বিদ্যুতের মালামালের ব্যবসা। এসবের উৎস নিয়ে রয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে কৌতুহল।

এসএ/