কক্সবাজারের আবাসিক হোটেলগুলোতে এত মৃত্যু কেন?


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


কক্সবাজারের আবাসিক হোটেলগুলোতে এত মৃত্যু কেন?

কক্সবাজারের আবাসিক হোটেলে বেড়েছে মৃত্যুর সংখ্যা। প্রাথমিক অবস্থায় এসব মৃত্যু আত্মহত্যা বা অস্বাভাবিক বলা হলেও বেশিরভাগই পরিকল্পিত হত্যা বলে প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ।

কক্সবাজার জেলা পুলিশের তথ্য বলছে, চলতি বছর ৬ আগস্ট পর্যন্ত কক্সবাজারের আবাসিক হোটেল থেকে ১০ জনের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। এর আগে উদ্ধার হয়েছে ২০২১ সালে ৯ জন এবং ২০২০ সালে হয়েছে ৫ জনের মৃতদেহ ।

পুলিশের তথ্য মতে, গত ৬ আগস্ট কক্সবাজার শহরের কলতালী হোটেল-মোটেল জোনের ‘সী কক্স’ আবাসিক হোটেলের স্টাফ কোয়ার্টার থেকে খালেদ আশরাফ বাপ্পি (২২) নামে এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সে ওই হোটেলের ফ্রন্ট ডেস্কের ম্যানেজার। নিহত খালেদ আশরাফ বাপ্পি কক্সবাজারের বাংলাবাজার কাজীর রোড এলাকার বাসিন্দা। সে কক্সবাজার সরকারি কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। ওই হোটেলে সে পার্ট টাইম চাকুরী করতো। যদিও এ ঘটনা মৃত্যুর কারণ পুলিশ এখনো নিশ্চিত করতে পারেননি।

এর আগে ৩ আগস্ট কক্সবাজার শহরে আবাসিক হোটেল কক্ষ থেকে মো. কাওছার আলম (৪১) নামের ‘পর্যটকের’ মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ; এসময় মৃতের ‘নিজ হাতে লেখা- একটি সুইসাইড’নোট পাওয়া গেছে। মো. কাওছার আলম (৪১) জয়পুরহাট জেলার সদর উপজেলার হানাইল ইউনিয়নের দিঘী পাড়ার মো. মোফাজ্জল হোসেনের ছেলে। সুইসাইড নোটের কারণে এটা আত্মহত্যা বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।

এর আগে ১ আগস্ট কলাতলী হোটেল থেকে সৌরভ শিকদার (৩৪) নামের একজনের মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত সৌরভ কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়া উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নের শিকদার পাড়া এলাকার বাসিন্দা। কলাতলীর ডলফিন মোড় এলাকার “ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্ট” থেকে তার মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সৌরভ শিকদার তার স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে ওই রিসোর্টে ছিলেন। গলায় রশি বেঁধে ফ্যানে ঝুলন্ত মৃতদেহ, হত্যা না কি আত্মহত্যা তা নিশ্চিত হতে পুলিশ ময়না তদন্তের প্রতিবেদনের অপেক্ষায় আছে।

১৭ মে আবাসিক হোটেল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ঢাকার যাত্রাবাড়িতে বসবাসকারি মো. মনিরের পুত্র লাবণী মনি (১৯) এর মৃতদেহ। এ ঘটনায় পরিকল্পিত হত্যা অভিযোগে মামলা হলেও মামলাটি এখনো তদন্তাধিন।

২০ মে আবাসিক হোটেল থেকে উদ্ধার করা হয় ছেনোয়ারা বেগম (২১) নামের এক রোহিঙ্গা নারীর মৃতদেহ। এ ঘটনায় পরিকল্পিত হত্যা করে সাক্ষ্য প্রমাণ বিলুপ্ত করে লাশ গুম করার চেষ্টার অভিযোগে মামলা হয়েছে। এই মামলাটি এখনো ততন্তাধিন রয়েছে।

৭ জুন উদ্ধার করা হয় চকরিয়া উপজেলার রুবি আকতার মিম (২১) নামের এক নারীর মৃতদেহ। এ ঘটনায়ও পরিকল্পিত হত্যার অপরাধে মামলা হয়েছে। এই মামলাটিও তদন্তাধিন রয়েছে।

১৮ মে হোটেল রয়েল টিউলিপের কক্ষে অসুস্থ হলে হাসপাতালে আনা হলে মৃত্যু বরণ করেন গোপাল গঞ্জের মারফুয়া খানম রুজি (২৮) নামের এক নারী। এ ঘটনায় মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হতে ময়না তদন্তের প্রতিবেদনের অপেক্ষায় আছে পুলিশ।

২৩ মার্চ আবদুল্লাহ ফয়সাল হৃদয় (২৪) নামের কুমিল্লার এক ব্যক্তির মৃতদেহ। যিনি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।

১৮ মে উদ্ধার হওয়া মো. মনিরুল ইসলাম (৪৬) এর মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এই মামলাটিও এখনো তদন্তাধিন রয়েছে।

১ ফেব্রুয়ারি টেকনাফে মো. মানিক (২৩) নামের একজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত করতে মামলাটি তদন্তাধিন রয়েছে।

২০২১ সালের ১৬ মার্চ কক্সবাজারের একটি আবাসিক হোটেল থেকে উদ্ধার করা হয় শহরের বাদশাঘোনা এলাকার জাকির হোসেনের ছেলে আবদুল মালেক (২৪) এর মৃতদেহ। যার ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন মতে পূর্ব পরিকল্পিত হত্যা বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।

২০২১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর ফারজানা (২৬) নামের কুমিল্লার এক নারীর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল। এটি পরিকল্পিত হত্যা বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।

২০১২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি টেকনাফে উদ্ধার করা হয় নারায়নগঞ্জের মো. বাচ্চু মিয়া (৫২) এর মৃতদেহ। এটি আত্মহত্যা প্রমাণিত হওয়ায় আদালতে চ‚ড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। একই বছর আরো ৬ জনের মৃতদেহ উদ্ধার হয় আবাসিক হোটেল কক্ষ থেকে। যে ৬ টি মৃত্যুকে আত্মহত্যা, হৃদরোগ বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ।

এর আগে ২০২০ সালে আবাসিক হোটেল থেকে উদ্ধার করা হয় ৫ জনের মৃতদেহ। যেখানে ২ টি পরিকল্পিত হত্যা আর ৩ টি অস্বাভাবিক মৃত্যু বলে পুলিশের তথ্য বিবরণীতে বলা হয়েছে।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, ‍“আত্মহত্যা বা অস্বাভাবিক মৃত্যুর ক্ষেত্রে কোন পরিকল্পনার প্রয়োজন হয় না। ভ্রমণে এসে সঙ্গির সাথে অভিমান, নানা কারণে হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যু হতে পারে। তবে হত্যাকাণ্ড গুলো পরিকল্পিত বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। কৌশলে ভ্রমণের নামে এসে এসব পরিকল্পিত হত্যাগুলো হচ্ছে। পুলিশ গুরুত্বের সাথে মামলা তদন্ত করে জড়িতদের শনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছে।”

এ পরিকল্পিত হত্যা ঠেকাতে আবাসিক হোটেল কর্তৃপক্ষকে আরো সজাগ হওয়ার পরার্মশ দেন তিনি।

এসএ/