১৪৫ টাকা মজুরি নির্ধারণ: মানছেন না চা শ্রমিকরা
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২
শ্রম অধিপ্তর ও সরকারের সঙ্গে বৈঠকের পর ১৪৫ টাকা মজুরির আশ্বাসে ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন চা শ্রমিক নেতারা। তবে সাধারণ শ্রমিকরা এর সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করেছেন।
শনিবার (২০ অঅগস্ট) বিকেলে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের কার্যালয়ে বৈঠকের পর চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে আমরা ধর্মঘট প্রত্যাহার করছি। আমাদের মজুরি ২৫ টাকা বাড়িয়ে ১৪৫ টাকা করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর থেকে এসে আমাদের সঙ্গে বসবেন বলে জানিয়েছেন। সেখানে আমাদের দাবি-দাওয়া তাকে জানানো হবে। তাই তার আশ্বাসে আমরা আপাতত ধর্মঘট প্রত্যাহার করছি।’
রোববার (২১ আগস্ট) থেকে সব শ্রমিক কাজে যোগ দেবে বলেও জানান নৃপেন পাল।
এদিকে, নেতাদের এই সিদ্ধান্তের পর শ্রম দপ্তরের সামনেই বিক্ষোভ শুরু করেন সাধারণ শ্রমিকরা। তারা ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার কথাও জানান তারা।
এ সময় সমিতির নেতাদের প্রতিও ক্ষোভ প্রকাশ করেন সাধারণ শ্রমিকরা।
অঞ্জন গোয়ালা নামের এক শ্রমিক বলেন, ‘আমরা ৩০০ টাকা মজুরির দাবি জানিয়েছি। এখন মাত্র ২৫ টাকা মজুরি বাড়ালে কিভাবে ধর্মঘট প্রত্যাহার করবো। এই বাজারে ১৪৫ টাকায় কিভাবে চলবো।’
তিনি বলেন, ‘নেতারা আপোষ করতে পারেন। কিন্তু আমরা আপোস করবো না। ধর্মঘট চালিয়ে যাবো।’
চা শ্রমিকদের সঙ্গে ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মৌলভীবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য মো. আব্দুস শহীদ।
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী চা শ্রমিকদের প্রতি খুবই আন্তরিক। তারই নির্দেশে আমি আজকে এখানে এসেছি। মালিকপক্ষ ২০ টাকা মজুরি বাড়াতে চেয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী নিজে আরও ৫ টাকা বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছেন।’
আব্দুস শহীদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর থেকে এসে চা শ্রমিকদের সঙ্গে তাদের দাবি দাওয়া নিয়ে বসবেন।’
বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের উপ পরিচালক নাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘চা শ্রমিকরা ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। কাল থেকে তারা কাজে যোগ দেবেন।’
এদিকে, আজ বিকেলে সিলেট ও হবিগঞ্জের চা শ্রমিক নেতাদের নিয়ে বসবেন স্ব স্ব জেলা প্রশাসক।
প্রসঙ্গত, দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে গত শনিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট শুরু করেন দেশের সব চা বাগানের শ্রমিকরা।
টানা ১২ দিন কর্মবিরতির কারণে চা শ্রমিকদের মধ্যে এখন খাদ্য সংকট, সাপ্তাহিক রেশন, এনজিওদের কিস্তি পরিশোধ না করতে পারাসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিয়েছে। এদিকে ন্যায্য মজুরী ৩শ’ টাকা না পেলে তাঁরা কর্মবিরতি থেকে সরে আসবেনা বলে জানান চা শ্রমিক ও নের্তৃবৃন্দরা।
এদিকে দিন যতো গড়াচ্ছে প্রচন্ড বিক্ষোভ ও ক্ষোভে ফুঁসে উঠছেন চা শ্রমিকরা। মজুরী বৃদ্ধির দাবিতে তাঁদের আন্দোলন ক্রমে জোরদার হচ্ছে।
এখন তাঁরা শ্লোগান দিচ্ছে মালিক পক্ষের দালালরা, চা শ্রমিকের দালালরা সাবধান। ১৪৫ টাকা মজুরী মানবোনা। সরেজমিন শনিবার দুপুর শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভাড়াউড়া চা বাগানে গিয়ে এই দৃশ্য দেখা যায়। গত রোববার সাপ্তাহিক ছুটি, সোমবার শোক দিবস ও শুক্রবার শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমি বাদ দিলে ২ ঘন্টা কর্মবিরতি ও পূর্নদিবস কর্মবিরতি মিলে আজ শনিবার ১০ দিনে পড়েছে তাঁদের এই কর্মবিরতি।
ভাড়াউড়া বাগানের শকুন্তলা ফুলমালি, দীপালি ফুলমালি, পরমেশ্বর হাজরা জানান, সাপ্তাহিক রেশন, প্রত্যহ খাদ্য সংকট, মেডিক্যাল সংকটসহ বিভিন্ন সংকট দেখা দিয়েছে।
এছাড়া ব্র্যাক, আশা, হিড, ব্যুরো বাংলাদেশ, উদ্দীপন, এফআইডিবিসহ বিভিন্ন এনজিও সংস্থার কিস্তি পরিশোধ করতে চাপ দিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। ফলে দিশেহারা হয়ে পড়ছেন চা শ্রমিকরা। এঅবস্থায় তাঁরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
এদিকে যেসব চা শ্রমিকের কাছে জমানো টাকা নেই তারা পড়েছেন চরম কষ্টে। ঘরে কোন ধরনের খাদ্য নেই। একবেলা খেলে অন্যবেলা খেতে পারছেন না। আন্দোলন করতে গিয়ে এখন অভুক্তই থাকতে হচ্ছে অনেককে।
বাগানের মেরী ভুইয়া বলেন, এফআইভিডিবি থেকে ১০ হাজার টাকা কিস্তি নিয়েছিলাম। সপ্তাহে সাড়ে তিনশ, টাকা কিস্তি দিতে হয়। এখন কাজ নাই কিযে করি।
এদিকে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান জানান, “প্রধানমন্ত্রী মানবিক দিক বিবেচনা করে আরো ৫ টাকা মজুরী বৃদ্ধি করতে বলেছেন। আমি আজ বিকেলে চা শ্রমিক নের্তৃবৃন্দ ও মালিক পক্ষের প্রতিনিধি নিয়ে বৈঠক করে প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবটি জানাবো। আশা করি চা শ্রমিক নের্তৃবৃন্দ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করবেন।”
খাইছড়া চা বাগানের পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি পুষ্প কুমার কানু জানান, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ৫ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন বলে জেনেছি সেটা মানা সম্ভব নয়। আমরা ৩শ’ টাকার নীচে মানবোনা। প্রয়োজন হলে না খেয়ে মরবো। তবু ন্যায্য দাবি ছাড়বোনা।”
এসএ/