পণ্য দ্রব্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশের মানুষের কষ্ট হচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, করোনা মহামারির প্রভাবে বিশ্বের অর্থনীতি একটা হুমকির মুখে পড়েছিল। কিন্তু করোনা মহামারি শেষ না হতেই শুরু হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এর ফলে পণ্য দ্রব্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশের মানুষের কষ্ট হচ্ছে। আমাদের সেই কষ্ট লাগবের চেষ্টা করতে হবে।
সোমবার (২২ আগস্ট) বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ৭৩ তম বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সের সমাপনী অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই যুদ্ধের কারণে বিশ্বে বড় বড় দেশগুলো সংকটের মধ্যে পড়েছে। সেখানে আমাদের অবস্থা আরও করুণ। তারপরও আমাদের যে সীমিত সম্পদ আছে তাই দিয়ে আমরা জনগণের সেবা করে যাব।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি একটা কাজ করেছি যেটা পৃথিবীতে বিরল, যেটা হয়ত আর কেউ করেনি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তান হওয়ার পর থেকে যখন তিনি ভাষা আন্দোলন শুরু করে। তখন থেকেই পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা তার বিরুদ্ধে রিপোর্ট লেখা শুরু করে। সেই রিপোর্টগুলো আমাদের পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি) কাছে ছিল। সেগুলো আমি সংগ্রহ করি, সেখানে প্রায় ৪৫ হাজার পেপারর্স ছিল। সেগুলোর আমরা পাঠ উদ্ধার করি এবং প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নেই। ২০ বছর ধরে কাজ করে ইতোমধ্যে ১১ খণ্ড বের করা হয়েছে। আরও তিন খণ্ড বের হবে। Secret Documents of Intelligence Branch on Father of The Nation, Bangladesh: Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman এটাতে যদি চোখ বুলানো যায় তাহলে বাংলাদেশ সম্পর্কে অনেক তথ্য পাওয়া যাবে।
এ সময় নবীন প্রশিক্ষণার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, এই দেশটা আমাদের এই চিন্তা চেতনা যদি নিজের অন্তরে ধারণ করা যায়, এদেশের মাটি ও মানুষ আমাদের। সুতরাং তাদের কল্যাণেই আমাদের কাজ করতে হবে। তাহলেই আমাদের এ দেশ এগিয়ে যাবে এবং অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে যাবে।
দেশের প্রতিটি জেলা ও অঞ্চলে যারা ভূমি ও গৃহহীন রয়েছেন তাদেরকে শনাক্ত করে ঘর এবং জীবিকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হচ্ছে। কেউ বাদ পড়েছে কিনা তা খুঁজে বের করতে সরকার ও আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশের কেউ গৃহহীন থাকবে না, সেই লক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে এবং সেগুলো বাস্তবায়ন করছে। সরকারের পক্ষ থেকে যেমন করছি, তেমনি আমাদের কৃষক লীগসহ অন্যান্য সংগঠনকে কাজে লাগাচ্ছি। তাদেরকে নির্দেশ দেওয়া আছে। আওয়ামী লীগকে নির্দেশ দেওয়া আছে- যার যার অঞ্চলে, গ্রামে একেকটা জেলা ধরে ভূমিহীনদেরকে খুঁজে বের করার পরেও কেউ বাদ গেল কি না তাদের তালিকা করার নির্দেশ দিয়েছি। অনেকে নানা কারণে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় চলে যায়। তাদেরকে আমরা খুঁজে বের করছি। তাদেরকে বিনা পয়সায় ঘর করে দিচ্ছি। জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।’
সরকারপ্রধান নতুন কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমি চাই, যারা নতুন কর্তব্য নিয়ে যাবেন- তারাও ওই দিকে নজর দেবেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০৪১ সালে আমরা যে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ব, এই নতুন অফিসাররা, এই নবীন সেই দেশ গড়ার কারিগর হিসেবে কাজ করবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা যদি নিজেদের মধ্যে ধারণ করতে পারেন যে দেশটা আমাদের, দেশের মাটি ও মানুষ আমাদের, তাদের কল্যাণে আমাদের কাজ করতে হবে। তাদের জীবনমান উন্নয়ন হলে বাংলাদেশের উন্নতি হবে এবং বাংলাদেশে তার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে। লাখো শহীদের রক্তের প্রতি আমরা শ্রদ্ধা দেখাতে পারব, তাদের মহান আত্মত্যাগের প্রতি আমরা শ্রদ্ধা দেখাতে পারব। তাহলে এ দেশ এগিয়ে যাবে। আজকের যে নবীন কর্মকর্তা তারাই আমাদের ৪১ এর মূল কারিগর হবে। আপনারাই হবেন আমাদের কারিগর।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘৪১ এ থামলে হবে না, আমাদের আরও এগিয়ে যেতে হবে। এসডিরজি আমাদের যেমন বাস্তবায়ন কতে হবে, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়তে হবে। পাশাপাশি ২১০০ সালের ডেল্টা প্লান সেটাও করে দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের বদ্বীপ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য আমরা অনেকগুলো পদক্ষেপ নিয়েছি। সেদিকে লক্ষ্য রেখে ডেল্টা প্লান ২১০০ এটাকে প্রণয়ন করে দিয়ে গেলাম। কোনো কোনোটা আমরা বাস্তবায়ন শুরু করেছি।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘উন্নয়নটা যেন সবসময় টেকসই হয়, সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ উন্নত জীবন এটাই আমাদের লক্ষ্য। আমার সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আমি এটা কাজ করেছি, যেটা পৃথিবীতে বিরল। যেটা আর কেউ কখনও করেনি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তান হওয়ার পর থেকেই ভাষা আন্দোলন শুরু করেন, তখনই পাকিস্তানি গোয়েন্দারা তার বিরুদ্ধে রিপোর্ট লেখা শুরু করে। আমি অনেক নেতার বিরুদ্ধে রিপোর্ট খুঁজে দেখার চেষ্টা করছে। কিন্তু সেখানে কিছু পাইনি। আমি যখন ১৯৯৬ সালের সরকারে এসে সেই রিপোর্টগুলো দেখি, যেটা ছিল ইন্টেলিজেন্সের কাছে। আমি সমস্ত কাগজপত্র সংগ্রহ করি। সেখানে প্রায় ৪৫ হাজার পেপার ছিল। আমি নিজে এবং আমার সঙ্গে এক বান্ধবী ছিল সেটা আমরা পুরোটা দেখি এবং সেটা সিদ্ধান্ত নেই এটা প্রকাশ করব।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রায় ২০ বছর কাজ করে সেগুলো আমরা প্রকাশ করছি। ইতোমধ্যে ১১ খণ্ড বের হয়েছে, ১৪ খণ্ড হবে।’
ওআ/