আর্থিক সেবা ডিজিটালকরণের নেতৃত্বে সরকারি সেবা ‘নগদ’


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


আর্থিক সেবা ডিজিটালকরণের নেতৃত্বে সরকারি সেবা ‘নগদ’

নিজস্ব প্রতিনিধি: শারীরিক প্রতিবন্ধী ছাত্রী কুসুম খাতুনকে এখন আর তার প্রতিবন্ধী ভাতা তুলতে কয়েক মাইল দূরে যেতে হচ্ছে না, তাই সে অনেক খুশী। রাষ্ট্র-পরিচালিত মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) ‘নগদ’ এর কারণে সে এই সুবিধা পাচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘খোঁড়া পা নিয়ে প্রায় ১০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে রাজশাহী সদরের কৃষি ব্যাংকে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে প্রতিবন্ধী ভাতা তোলা আমার জন্য খুব কঠিন ছিল।’

কিন্তু বাংলাদেশ পোস্ট অফিসের এমএফএস শাখা কুসুমের কষ্টের কথা জানতে পেরে নিকটস্থ এমএফএস এজেন্টের মাধ্যমেই যেন সে টাকা তুলতে পারে সেই ব্যবস্থা করেছে।

রাজশাহীর পবা উপজেলার বাসিন্দা কুসুম বলেন, ‘নগদ’ গ্রামীণ জনগণের জীবন সহজ করেছে। তাদেরকে ফোন-ভিত্তিক মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সুবিধা দিচ্ছে।

কুসুমের মতো সারা দেশে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫ কোটি মানুষ মোবাইল মানিব্যাগের মতো নগদ ব্যবহার করছে। এই প্লাটফরমের মাধ্যমে প্রতিদিন ৭০০ কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে। এটি এখন দেশের আর্থিক খাতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনে  প্রধান ভূমিকা পালন করছে।

‘নগদ’ হচ্ছে বাংলাদেশের প্রথম কোন কোম্পানি যারা গ্রাহক পরিচয় নিশ্চিত করতে ইলেক্ট্রনিক কেওয়াইসি (ই-কেওয়াইসি) চালু করে। ২০১৯ সালের ২৬ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘নগদ’ উদ্বোধন করার সময় ‘নগদ’ ছাড়া বাংলাদেশের আর কোনো কোম্পানিতে ই-কেওয়াইসি’র প্রচলন ছিল না।

ই-কেওয়াইসি প্রচলনের ফলে এক দিকে যেমন গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট খোলার জটিল প্রক্রিয়া সহজ হয়েছে, অন্যদিকে অ্যাকাউন্ট খোলা সংক্রান্ত খরচও হ্রাস পেয়েছে।  

ই-কেওয়াইসি হিসাব বা অ্যাকাউন্ট খোলার একটি প্রক্রিয়া। এতে একটি স্মার্টফোন ব্যবহার করে কোন অফিসে না গিয়ে বা কোন ফরম পূরণ  না করেই জাতীয় পরিচয়পত্রের দুই দিকে ছবি তুলে অ্যাকাউন্ট খোলা যায়।

প্রথম দিকে অনেকেই এর সমালোচনা করলেও পরে একে একে সকল মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস কোম্পানি, ব্যাংক ও আর্থিক কোম্পানিগুলো ‘নগদ’-এর উদ্ভাবনকে অনুসরণ করে। এর ফলে সময় ও খরচ বেঁচে যাওয়ার পাশাপাশি ব্যবসাও গতিশীল হয়েছে এবং ডিজিটালাইজেশনও নিশ্চিত হয়েছে।

নগদের প্রধান গণযোগাযোগ কর্মকর্তা মুহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘শুরুতে অনেকেই নগদের ই-কেওয়াইসি প্রক্রিয়ার সমালোচনা করলেও এখন সকল মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস কোম্পানি, ব্যাংক ও আর্থিক কোম্পানিগুলো ‘নগদ’-এর উদ্ভাবনকে অনুসরণ করছে।’
দেশের অধিকাংশ লোকের কাছে স্মার্টফোন না থাকায় তারা এই ই-কেওয়াইসি সুবিধা নিতে পারেছে না উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, নগদ মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোর সাথে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে একটি নতুন সুবিধা চালু করেছে। এতে একজন সাধারণ মোবাইল ব্যবহারকারীও তার মোবাইল থেকে অ্যাকাউন্ট খুলে এই সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।

ডাক বিভাগের মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ‘নগদ’ চালু হওয়ার মাধ্যমেই আর্থিক লেনদেনসহ বিল প্রদান সংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট খাতে ডিজিটালাইজেশনের রূপান্তর ঘটে। সরকারি এই সেবাটি একের পর এক নতুন নতুন উদ্ভাবন দিয়ে মোবাইল ফোনের মাধ্যমের লেনদেনের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পরিবর্তন নিয়ে আসে।

ফলে সমাজের সবচেয়ে দরিদ্র এবং পিছিয়ে পড়া মানুষটির জন্যে ডিজিটাল সেবার প্রসার ঘটে এবং তাদের জীবন-মানেরও পরিবর্তন ঘটে।
পরে ব্যাংক এবং অন্যান্য আর্থিক সেবা কোম্পানিও ই-কেওয়াইসি’র মাধ্যমে গ্রাহক হিসাব খোলার পদ্ধতি চালু করে সাফল্য পেতে শুরু করে।
ই-কেওয়াইসি জাতীয় পরিচয়পত্রের দুই দিকের ছবি তুলে অ্যাপের মাধ্যমে আপলোড করে অ্যাকউন্ট খোলার সহজ পদ্ধতি। কিন্তু দেশে যেহেতু স্মার্টফোনের ব্যবহার অনেক কম, সে কারণে পরে ‘নগদ’ *১৬৭# ডায়াল করে অ্যাকাউন্ট খোলার পদ্ধতি চালু করেছে।

ফলে এখন যে কোনো মোবাইল ফোন থেকে *১৬৭# ডায়াল করে চার ডিজিটের পাসওয়ার্ড দেওয়ার মাধ্যমে ‘নগদ’-এর অ্যাকাউন্ট খোলা সম্ভব।
এটি এখনো পর্যন্ত আর্থিক খাতে বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি। একটি সরকারি সংস্থার মাধ্যমে এমন একটি উদ্ভাবন গোটা বিশ্বকেই চমকে দিয়েছে। সে কারণে গত বছরের শেষ দিকে ‘নগদ’ তথ্য প্রযুক্তি খাতের বিশ্ব খ্যাত উইটসা পুরস্কার পায়।

জাহিদুল ইসলাম বলেন, অ্যাকাউন্ট খোলার এ প্রক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব আহমেদ ওয়াজেদের ‘পরিচয়’ অ্যাপের সুবিধা পেয়েছে ‘নগদ’। যেখানে কোনো গ্রাহক *১৬৭# ডায়াল করলে মোবাইল ফোন অপারেটরদের কাছে থাকা গ্রাহকের তথ্য পরিচয় অ্যাপের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র ডেটাবেজ থেকে যাচাই করে অ্যাকাউন্ট খোলার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার নজরে আসায় একটি স্টেট অব দ্য আর্ট উদ্ভাবন হিসেবে স্বীকৃতি স্বরূপ নগদ গত বছর প্রথম বাংলাদেশী এমএফএস হিসেবে ওয়ার্ল্ড ইনফরমেশন টেকনোলোজি অ্যান্ড সার্ভিসেস অ্যালাইয়েন্স (ডব্লিউআইটিএসএ) গ্লোবাল আইসিটি এক্সেলেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০২০ অর্জন করেছে।

একটি ডিজিটাল আর্থিক শিল্প স্থাপনে নেতৃত্বে অবস্থানকারী নগদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বাস্তবায়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশের’ লক্ষ্য গ্রামীণ মানুষকে বিশেষত যারা ব্যাংক সেবা পাচ্ছে না, সেই শ্রেণীর মানুষকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের আওতায় নিয়ে আসা।

নগদের সুবিধা নিয়ে, সরকার কোভিড-১৯ মহামারিকালে সামাজিক নিরাপত্তা ভাতা প্রদান করেছে। এছাড়াও নগদের মাধ্যমে সরকার প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত অন্যান্য আর্থিক অনুদান ও সহায়তা প্রদান করেছে।

জাহিদুল বলেন, ‘২০২০-২১ অর্থ-বছরে, সরকার নগদের মাধ্যমে সর্বাত্মক স্বচ্ছতার মাধ্যমে ৩ কোটি মানুষকে বিভিন্ন ভাতা, বিতরণ করেছে।
বাংলাদেশের আর কোনো আর্থিক কোম্পানির পক্ষে এখনো এমন আর কোনো সেবা চালু করা সম্ভব হয়নি। *১৬৭# ডায়াল করার মাধ্যমে ‘নগদ’ আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকে সহজ হয়ে যায়। ফলে সেবা চালুর মাত্র ৩২ মাসের মধ্যে ‘নগদ’-এর গ্রাহক সংখ্যা সাড়ে ৫ কোটি পেরিয়ে গেছে।

বিস্তৃত এই আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ওপর ভর করেই করোনার সময়ে ‘নগদ’-এর মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা ভাতা, প্রধানমন্ত্রীর অন্যান্য আর্থিক অনুদান ও সহায়তা বিতরণ প্রক্রিয়াকে ডিজিটালাইজড করতে পেরেছে সরকার। ২০২০-২১ অর্থ বছরে ‘নগদ’-এর মাধ্যমে সরকার তিন কোটি মানুষকে সাড়ে আট কোটিবার নানান ধরণের ভাতা, উপবৃত্তি ও অনুদান বিতরণ করেছে। যার পুরোটাই হয়েছে স্বচ্ছতার সঙ্গে।

প্রাথমিক পর্যায়ের দেড় কোটি শিক্ষার্থীর মায়ের মোবাইলে চারবার করে উপবৃত্তি বিতরণ বিশ্বের সবচেয়ে বড় ঘটনা। তাছাড়া সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতায় ৫৮ লাখ দুস্থ ও হতদরিদ্র স্বচ্ছতার সঙ্গে ‘নগদ’-এর মাধ্যমে ভাতা পেয়েছেন। এই দুটি কর্মসূচীর মাধ্যমে সত্যিকার অর্থে দেশের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে ডিজিটাল সেবার আওতায় নিয়ে আসে সরকার।

এর বাইরে এক দশকের বেশী সময় ধরে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস খাতে চলে আসা মনোপলি ‘নগদ’-এর মাধ্যমেই ভাঙতে পেরেছে সরকার। যার মাধ্যমে এই খাতের লেনদেনে একটি ভারসাম্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

কম খরচে বা নিঃখরচায় সেবা দেওয়ার কারণে একচেটিয়া দাপট নিয়ে চলা কোম্পানিও গ্রাহক খরচ কিছুটা হলেও কমাতে বাধ্য হয়। মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস খাতে এটিও সরকারের অনেক বড় সাফল্য বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

উল্লেখ্য, কেবল গত এক বছরেই বাজারে প্রচলিত সেবার খরচের তুলনায় ‘নগদ’ এর মাধ্যমে যারা সেবা নিয়েছেন তাদের এক হাজার কোটি টাকার বেশী সাশ্রয় হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারি সংস্থার মাধ্যমে চালু হওয়া একটি সেবা ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা এবং সাধারণ মানুষের দিন বদলের ক্ষেত্রে রাখছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

আধুনিক ও প্রতিযোগিতামূলক সেবার কারণেই ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা ‘নগদ’ এখন দৈনিক গড়ে সাতশ কোটি টাকার লেনদেন করছে। ইতিমধ্যে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতিতে বেড়ে ওঠা কোম্পানি হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া ‘নগদ’ জাতীয় প্রবৃদ্ধিতেও রাখছে অবদান। অচীরেই ‘নগদ’-এর মাধ্যমে নাগরিকেদের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি লেনদেন করা সম্ভব হবে বলেও জানিয়েছেন সেবা প্রদানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। শুরু থেকেই ডাক বিভাগের এই মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসটি সেন্ড মানি বা টাকার লেনদেনকে ফ্রি করেছে। একইভাবে সকল ধরণের পরিষেবার বিল ফ্রি-তে দেওয়ার প্রচলন করে ‘নগদ’। তাছাড়া এক বছরেরও বেশী সময় আগে ‘নগদ’ ক্যাশ-আউট চার্জ হাজারে ৯ টাকা ৯৯ পয়সায় (ভ্যাটসহ ১১ টাকা ৪৯ পয়সা) নামিয়ে আনে। অথচ বাজারের বিদ্যমান ক্যাশ-আউট চার্জ হাজারে ২০ টাকা।