দুই প্রতিষ্ঠানের বর্জ্যে বিপন্নের পথে বুড়িগঙ্গা
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৬:১২ পূর্বাহ্ন, ২৭শে সেপ্টেম্বর ২০২২
***ওয়াসা-সিটি করপোরেশনের বর্জ্যই বেশি
***দুর্গন্ধ-দূষণে হারিয়ে গেছে জলজ প্রাণী ও মাছ
***নদী রক্ষার উদ্যোগ নিলেও নেই সুফল
রাজধানী ঢাকার প্রাণ বুড়িগঙ্গা নদীর যৌবন রক্ষায় বিভিন্ন সময়ে নানা উদ্যোগের কথা শোনা গেছে। যুগের পর যুগের পার হলেও কার্যকর কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ হয়নি। ওয়াসা, সিটি করপোরেশন, শিল্প কারখানা ও নৌযানের বর্জ্যে পানি দূষণের সব মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। হাজার হাজার টন বর্জ্য ফেলে বুড়িগঙ্গা এখন ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। পানির উৎকট দুর্গন্ধ ও দূষণের প্রভাবে হারিয়ে গেছে জলজ প্রাণী ও মাছ। নদীর দুই পারে বসবাসকারীরা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বর্জ্যে নদীর তলদেশে ১০ ফুট ভরাট হয়ে গেছে।
এক নিরীক্ষায় দেখা গেছে, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দুই সংস্থা ঢাকার ওয়াসা ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ড্রেনের মাধ্যমে প্রতি বছর বুড়িগঙ্গায় অন্তত ২৫ হাজার টন বর্জ্য নিক্ষেপ করছে। আর নদীতীরের শিল্প কারখানাগুলো থেকে আরও ১০ হাজার টন বর্জ্য নদীতে ফেলা হচ্ছে। এছাড়া নৌযান থেকে উপর্যুপরি পোড়া তেলসহ নানা বর্জ্য ফেলা হয়। সবমিলিয়ে বছরে অর্ধলক্ষাধিক টন বর্জ্য ফেলা হয় বুড়িগঙ্গায়। এসব বর্জ্য নদীর পানিতে মিশে পানি কুচকুচে কালো হয়ে গেছে। বিদ্ঘুটে দুর্গন্ধ নাকে আসে নদীর অনেক দূর থেকেও। পানি অস্বাভাবিক দূষিত হওয়ার কারণে বুড়িগঙ্গা কোনও ধরনের জলজ প্রাণী বা মাছের অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। সিংহভাগ বর্জ্যই রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান দুটির।
সূত্র জানিয়েছে, বুড়িগঙ্গা নদীর কয়েকশ’ পয়েন্ট দিয়ে প্রতিদিন ওয়াসা ও সিটি করপোরেশনের শত শত টন বর্জ্য নদীতে ফেলা হয়। কামরাঙ্গীরচর, ইসলামবাগ, পোস্তা, লালবাগসহ নদীর পার এলাকায় গড়ে উঠেছে কয়েকশ’ পলিথিন ও প্লাস্টিক রিসাইক্লিং কারখানা, পার্শ্ববর্তী কেরানীগঞ্জের দুই শতাধিক ড্রাইং কারখানাসহ হাজারেরও বেশি কারখানা। এছাড়া শ্যামপুর, পাগলা-ফতুল্লা এলাকার শত শত কারখানা থেকে ক্যামিকেল মিশ্রিত পানি নদীতে মিশে দূষণ বাড়াচ্ছে। যুগ যুগ ধরে এসব প্রতিষ্ঠান প্রকাশ্যে লক্ষ লক্ষ টন বর্জ্য বুড়িগঙ্গায় ফেলছে, অথচ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই। আর দুই পারের বাসিন্দারা তাদের বাসাবাড়ির দৈনন্দিন বর্জ্য ফেলে নদীর তীরে ময়লার ভাগাড় সৃষ্টি করেছে।
নিয়মানুযায়ী, পরিশোধনের পর ড্রেনেজ বর্জ্য নদীতে নিক্ষেপ করার কথা। কিন্তু অদ্যাবধি তরল বর্জ্য পরিশোধনের জন্য ঢাকায় কোনো শোধনাগারই স্থাপন করতে পারেনি ওয়াসা ও সিটি করপোরেশন। নারায়ণগঞ্জের পাগলায় ওয়াসার একটি শোধনাগার থাকলেও সেটি কয়েক বছর ধরে কাজে আসছে না।
এ বিষয়ে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) আহ্বায়ক আবু নাসের খান বলেন, বুড়িগঙ্গার স্বাভাবিক অবস্থা রক্ষায় আমরা বহু বছর ধরে কাজ করছি। বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে বারবার আহ্বান করা হয়। তারা বিভিন্ন সময়ে কিছু উদ্যোগের কথা বললেও সেগুলোর সুফল দেখা যায় না। ঢাকার প্রাণ এই নদী রক্ষায় সর্বোচ্চ উদ্যোগ নিতে হবে। নিয়ম মেনে নদীতে দূষিত বর্জ্য ফেলার বিষয়টি মানাতে বাধ্য করতে হবে প্রতিষ্ঠানগুলোকে। সরকারি যেসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্যে দূষণ বাড়ছে, তাদেরও দূষণ রোধে যথাযথ কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, বছরের পর বছর ধরে শিল্প কারখানা, ওয়াসা ও সিটি করপোরেশন বুড়িগঙ্গায় বর্জ্য ফেলে পরিবেশ নষ্ট করছে। আরো ১০ বছর আগে সুয়ারেজ বর্জ্য পরিশোধনে তারা প্রকল্প গ্রহণ করেছে, দুর্ভাগ্যজনকভাবে ওইসব প্রকল্পের কোনোটিই আলোর মুখ দেখেনি।
জেবি/ আরএইচ/