তুলশি চাষ করে লাভবান সাজু মিয়া


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৪:৪০ পূর্বাহ্ন, ২৮শে সেপ্টেম্বর ২০২২


তুলশি চাষ করে লাভবান সাজু মিয়া
তিনি তুলশির পাশাপাশি বাসক

গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে বাণিজ্যিকভাবে ঔষধি তুলশি চাষ করে লাভবান হয়েছেন সফল ভেষজ চাষি সাজু মিয়া। তিনি তুলশির পাশাপাশি বাসক, অর্শ্বগন্ধা ও কালোমেঘের চাষ করে এলাকায় সাড়া ফেলে দিয়েছেন। তার দেখাদেখি এখন অনেকেই তুলশি চাষ করে সংসারে সচ্ছলতা এনেছেন।

উপজেলার মহদীপুর ইউনিয়নের বুজরুক বিষ্ণুপুর গ্রামের সাজু মিয়া স্থানীয় বাজারে কাপড় সেলাই করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। ৯ বছর আগে মহদীপুর ইউনিয়নের কেত্তার পাড়া দোকানঘর সেবাদানকারী সমবায় সমিতি লিমিটেড ও কৃষি কালেকশন কেন্দ্রের পরিচালক রফিকুল ইসলামের পরামর্শে প্রথম বাড়ীর পরিত্যক্ত বাঁশ ঝাঁড়ের পার্শ্বে ১০ শতাংশ জমিতে তুলশি চাষ করেন। সে বছর ১০ শতক জমি থেকে ৯ মন তুলশি পান। সেই তুলশি কেত্তারপাড়া দোকানঘর কৃষি কালেশন পয়েন্ট থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে ভালো লাভ পান। এরপর অন্যের জমি ইজারা নিয়ে ৯০ শতাংশ জমিতে তুলশি, কালোমেঘ, বাসক, অর্শ¦গন্ধা চাষ করেন। 

চাষি সাজু মিয়া জানান, আমি কলার জমির মাঝে ও আরো অন্যখানে ২০ শতক জমিসহ তুলশি চাষ করেছি এক একর জমিতে। তুলশির চারা রোপন করি জৈষ্ঠ্য মাসে। চারা লাগানোর দুই মাসের মাথায় ফল পাওয়া যায়। এসব ভেষজ ঔষধি গাছ ছায়াযুক্ত স্থান, পরিত্যাক্ত জমি, পুকুর পাড়, বিভিন্ন সড়ক মহাসড়কের ধারে লাগানো যায়। এ গাছের পাতা গরু, ছাগল খায়না রোগ বালাই কোন এবং ঝুঁকি ঝামেলা নেই। প্রতি শতকে তুলশি এক মন করে পাওয়া যায়। কৃষি কালেশন পয়েন্ট থেকে এসব শুকনা তুলশি পাতা ১৬শ টাকা মন দরে বিক্রি করা হয়। এসব ভেষজ পাতা একমি ঔষধ কোম্পানিসহ আরো বেশ কিছু ঔষধ কোম্পানিতে বিক্রি করা হয়। তারা গাড়ী নিয়ে এসে এসব ভেষজ পাতা নিয়ে যায়। 
 

তিনি আরও বলেন, আমি এবছর ১০০ শতক তুলশির চাষ করেছি। এর থেকে প্রায় ৯০ মন তুলশি পাব। কালোমেঘ চাষ করেছি ২০ শতাংশ জমিতে। সেখান থেকে ১৩ মন ২৫ কেজি। কালোমেঘ বিক্রি করেছি ২ হাজার টাকা মন দরে। অর্শ্বগন্ধা ৯০ শতক জমিতে চাষ করেছি। 

মহদীপুর ইউনিয়নের কেত্তারপাড়া দোকানঘর কৃষি কালেশন পয়েন্টের পরিচালক ও ভেষজ চাষি রফিকুল ইসলাম জানান, বতর্মানে ঔষধি গাছের বাণিজ্যিক চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে। এসব ভেষজ ঔষধি চাষ ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করছে। আমি কৃষি কালেশন পয়েন্ট থেকে কৃষকদের উদ্ধুদ্ভ করতে এবং এসব বিক্রি করতে সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছি। আমি টনে টনে তুলশি পাতা, বাসক পাতা, অর্শ¦গন্ধা, কালোমেঘ একমি কম্পানিতে চুক্তিভিত্তিতে সরবরাহ করে আসছি। এছাড়াও এই কৃষি কালেশন পয়েন্ট থেকে শত শত টন ভার্মি কম্পোষ্ট সার বিক্রি করে থাকি। এর পাশাপাশি বাসক গাছের চারা,তুলশি গাছের চারাও সারা দেশে সরবরাহ করে থাকি। 

বিশেষ করে পাহাড়ি অঞ্চলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, সমবায় অধিদপ্তরের প্রশিক্ষক হয়ে পাহাড়ি চাকমাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে ভেষজ ঔষধি বাগান করতে উৎসাহিত করা হয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফাতেমা কাওসার মিশু জানান, পলাশবাড়ী উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে ভেষজ ঔষধি উদ্ভিদের চাষ বেড়েছে। বাড়ির ছাদের টবে ও বাগানে ঘৃতকমল, তুলশি, বাসকসহ বিভিন্ন ঔষধি গাছ লাগাতে পারেন। এক মাস থেকে এক বছরের মধ্যে এসব গাছই হবে আপনার আয়ের উৎস। আর্থিক বিশ্লেষণে ভেষজ উদ্ভিদের চাষ অন্য যেকোনো কৃষির চেয়ে অধিক লাভজনক। দেশ-বিদেশে ভেষজ উদ্ভিদের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ভেষজ উদ্ভিদ চাষ অপেক্ষাকৃত কম শ্রমসাধ্য এর পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না।

জেবি/ আরএইচ/