ভারতে পাঁচার হওয়া মেয়ের অপেক্ষায় পথ চেয়ে মা


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০২:৩১ পূর্বাহ্ন, ১৬ই অক্টোবর ২০২২


ভারতে পাঁচার হওয়া মেয়ের অপেক্ষায় পথ চেয়ে মা
ছবি: সংগৃহীত

২০১২ সালে অভাবের তাড়নায় ১৫ বছর বয়সী মেয়ে পারভীন আক্তার সুমি কে চাকুরীর জন্য ননদের মেয়ে ফাতেমা আক্তারের কাছে দিয়েছিলাম। দশ বছরেও নারী ছেড়া ধন ফিরে আসেনি আমার কাছে। মেয়ের খোজ নিতে ফাতেমার বাড়িতে গেলে গালিগালাজ করে তাড়িয়ে দেয় ফাতেমা ও তার স্বামী শের আলী। মনে হয় মরার আগে আর মেয়েকে দেখে মরতে পারব না। কাঁদতে কাঁদতে এভাবেই আকুতি-মিনুতি করছিলেন বাগেরহাট সদর উপজেলার দেপাড়া গ্রামের আবুল খা‘র স্ত্রী খোদেজা বেগম।


মেয়ের শোকে প্রতিদিন এভাবে কাঁদেন ষাটোর্ধ খোদেজা বেগম। সুমি ছাড়াও খোদেজার দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। ছেলে আল আমিন ও স্বামী আবুল খা ভ্যান চালায় এবং দুই মেয়ে স্বামীর বাড়িতে। মেয়ের শোকে অসুস্থ্য হয়ে পড়েছেন খোদেজা বেগম। এক সময় মানুষের বাড়িতে কাজ করলেও, এখন আর কাজ করতে পারেন না তিনি। সারাদিন শুধু মেয়ের জন্য বিলাপ করেন। আর অপরিচিত কোন মানুষের সাথে দেখা হলেই মেয়েকে ফেরানোর জন্য সহযোগিতা চান খোদেজা বেগম। খোদেজা ও তার পরিবারের দাবি ফাতেমা বেগম পারভীন আক্তার সুমিকে ফরিদপুরের জাকির ও খুলনার আজমলের মাধ্যমে ভারতে পাচার করে দিয়েছে। তবে দশ বছরেও ফাতেমার বিরুদ্ধে কোন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য কোথাও কোন লিখিত অভিযোগ দেয়নি খোদেজা ও তার পরিবার।


ফাতেমা বেগম রামপাল উপজেলার গিলাতলা গ্রামের জলিল ফিরুকানা ও রিজিয়া বেগমের মেয়ে। ফাতেমার মা রিজিয়া গেম আবুল খা‘র বোন। বর্তমানে স্বামী শের আলীর সাথে ফাতেমা খুলনা শহরের সেনহাটি ২নম্বর ঘাটে বসবাস করেন।


খোদেজার প্রতিবেশী সাফিয়া বেগম বলেন, ফাতেমা এসে সুমিকে নিয়ে গেল। আর ফিরে আসেনি। শুনেছি ভারতে পাচার করে দিয়েছে। কখনও কাউকে মেয়েটা ফোনও করেনি।


পারভীন আক্তার সুমির বাবা আবুল খা বলেন, ফাতেমা বেগম আমার বোনের মেয়ে। মামা হয়ে আমি ওর পা ধরে কান্না করেছি মেয়েকে ফিরে পাওয়ার জন্য। তারপরও সে আমার মেয়েকে ফিরিয়ে দেয়নি। বরং এখন গেলে আমাদের গালিগালাজ করে ফাতেমা ও তার স্বামী শের আলী।

খোদেজা বেগম বেগম বলেন, প্রথম দিকে ভাবছিলাম মেয়েটাকে হয়ত কোথাও কাজে দিয়েছে। কিন্তু বছর দুই আগে বিভিন্ন ভাবে জানতে পেরেছি ওরা আমার মেয়েকে ভারতে পাচার করে দিয়েছে। এরপর বারবার ফাতেমার কাছে যাই। গেলেই বলে বিয়ে করে তোমার মেয়ে ফিরে আসবে। বেশি জ্বালাবা না। তাইলে কিন্তু মেয়েকে আর কখনও ফিরে পাবা না।


এতদিনেও কেন আইনের আশ্রয় নেননি এমন প্রশ্নে খোদেজা বেগম বলেন, কার কাছে যাব, কোথায় যাব টাকা পাব কোথায়। আবার সুমির বাবা রইছে খুলনা। খুলনা থেকে এবার আসলে থানায় যাব।


এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ফাতেমা বেগম ও আজমলকে ফোন করা হলে তাদের মুঠোফোন দুটি বন্ধ পাওয়া যায়।


বাগেরহাট জেলা পুলিশের মিডিয়া সেলের প্রধান সমন্বয়কারী পুলিশ পরিদর্শক এসএম আশরাফুল আলম বলেন, বিষয়টি আমাদের জানা নেই। ভুক্তভোগী পরিবারটি আমাদেরকে বিষয়টি জানায়নি। পরিবারটি যদি লিখিত অভিযোগ দেয় তাহলে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।


আরএক্স/