নড়িয়ায় সম্পত্তির লোভে বৃদ্ধ মাকে রাতে ঘর থেকে বের করে দিলো ছেলে
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১১:১৭ অপরাহ্ন, ২৩শে অক্টোবর ২০২২
"রাত আনুমানিক প্রায় ১০টা, খাবার খেতে বসা অবস্থায় গালমন্দ ও মারধরের ভয়ভীতি দেখিয়ে বৃদ্ধা মায়ের ভাতের প্লেট রেখে দিতে বাধ্য করে ঘর থেকে বের করে দেয় নিজের বড়ো ছেলে ও তার স্ত্রী, ছেলের দাবী পিতার রেখে যাওয়া বসত ভবনটি তাকে একাই ভোগ করতে দিতে হবে"
শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলাধীন ফতেজঙ্গপুর ইউনিয়নের ০৬ নং ওয়ার্ডে মৃত জয়নাল আবেদিন রাঢ়ীর বাড়িতে গত ২৩সেপ্টেম্বর ২০২২ ইং তারিখ রাত আনুমানিক ১০টার সময় ঘটনাটি ঘটেছে। পরিবারের বড়ো সন্তান আতাউর রহমান রাঢ়ী বাবার রেখে যাওয়া বসত ভবনটি নিজে একা ভোগ করবে এই ইচ্ছা পোষন করলে মা রাশিদা বেগম তাকে বোঝাতে চান বাকি ভাইদেরও ওয়ারিশ আছে ওরা কোথায় যাবে, এই অবস্থায় তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে আতাউর রহমান এবং তার স্ত্রী কিরন মালা রাশিদা বেগমকে গালমন্দ এবং মারধরের হুমকি সহ ধাক্কা মেরে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে বাধ্য করেন, এতে তিনি শারীরিকভাবে এবং মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হন। এবং মায়ের ঘরের সমস্ত মালামাল তার রুম থেকে বাইরে ফেলে দেয়। এসময় ঘরে থাকা তৃতীয় ছেলে লিটন রাঢ়ী এবং তার স্ত্রী লাকী আক্তার বাধা দিলে তাদেরকে দা নিয়ে কোপাতে গেলে তারা ভয়ে রুমে ঢুকে দরজা আটকে দেন।
ভুক্তভোগী বিধবা বৃদ্ধা রাশিদা বেগম(৭৫), মৃত জয়নাল আবেদিন রাঢ়ীর স্ত্রী এবং ০৮ সন্তানের জননী। ঘটনার পর রাশিদা বেগম ঐ রাতে স্থানীয় গ্রামে মান্ডা নিজের পিতা আকুব আলী শেখের বাড়িতে আশ্রয় নেন। পরের দিন ফিরে এসে নিজ ঘরে ঢুকতে গিয়ে ছেলে আতাউর এবং তার স্ত্রী কিরন মালার বাধায় ব্যর্থ হলে বড়ো মেয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেন এবং আইনী সহায়তা চেয়ে গত ০৪ অক্টোবর শরীয়তপুর জেলা আমলী আদালতে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন তিনি।
ঘটনাস্থলে গিয়ে ও ভুক্তভোগীর দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারি, জয়নাল আবেদিন রাঢ়ী ও তার স্ত্রীর সংসারে কোন অভাব অনটন ছিলো না, তাদের আট সন্তানের মধ্যে ০৪ ছেলে ও ০৪ কন্যা নিয়ে উক্ত গ্রামে নিজ বাড়িতে বসবাস করতেন। সন্তানদের বড়ো করে একে একে ০৪ ছেলেকেই তারা বিদেশে পাঠান ও কন্যাদেরও বিয়ে দেন। পরিবারের ০৩ ছেলে লিটন রাঢ়ী, আজিজুল রাঢ়ী, ইশান রাঢ়ী প্রতি মাসে যা আয় করতেন তা সরাসরি তাদের বড়োভাই আতাউর রহমান রাঢ়ীর কাছে প্রদান করতো আর আতাউর রহমান তাদের পিতার কাছে সবার মাসিক আয়ের টাকা পাঠাতেন।
সকলের সম্মতিতে ২০১১সালে নিজ বসত ভিটায় একটি ভবন নির্মানের কাজ শুরু করেন পিতা জয়নাল আবেদিন, ভবনটি সমাপ্ত হয়। সকলেই একসাথে মিলেমিশে বসবাস করতে থাকে, এরই মধ্যে অভিযুক্ত বড়ো ছেলে আতাউরের বিয়ে হয় কিরন মালার সাথে, কিছুদিন পর আতাউর পুনরায় বিদেশে চলে যান, হঠাৎ আতাউর পিতার কাছে অতিরিক্ত জমি দাবী করে মুঠোফোনে নানা গালমন্দ ও হুমকিস্বরুপ কথা বলতে শুরু করেন, দেশে থাকা তার স্ত্রী কিরন মালা এবং কিরন মালার দুই ভাইও নানা রকম হুমকি ধামকি তিতে থাকে। এক পর্যায়ে মানসম্মান রক্ষা করতে তিনি জমির একটা অংশ তাদের কে দিয়েও দেন।
এরপর শুরু হয় ভবনটি তাদের দিয়ে দিতে হবে আর বাকিদের অন্যত্র চলে যেতে হবে, কিন্তু তা না করায় পিতা মাতার উপর মানুসিক নির্যাতন করতে থাকে যার দরুন পিতা জয়নাল আবেদিন রাঢ়ী হঠাৎ স্টোর করে মৃত্যুবরন করেন। মৃত্যুর পরে রাশিদা বেগমও অসুস্থ্য হয়ে পড়েন, স্বামীর রেখে যাওয়া বসত ভবনটিতে সকলেকে নিয়ে থাকতেন। গত ০৪মাস আগে বড়ো ছেলে অভিযুক্ত আতাউর দেশে ফিরলে আবারও ঝামেলা শুরু করে এই ভবনটির একা মালিকানা দাবী করেন। সকলের ওয়ারিশ বাতিল করে দিতে অস্বীকার করায় গত ২৩ সেপ্টেম্বর মারধর এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে বাড়ি ছাড়া করেন নিজের জন্মদাত্রী বিধবা বৃদ্ধ মাকে। কিছু ভিডিও ক্লিপ দেখিয়ে বলেন দেখেন কিভাবে মারধর করতে যায়। পরিবারের লোকজন সহ এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ একাধিক এলাকবাসী এবং এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবী করেছেন তারা।
ঘটনার ভুক্তভোগী রাশিদা বেগম প্রায় নির্বাক, তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, সন্তান জন্ম দিয়েছে, পেলেপুষে বড়ো করেছে, বিদেশ পাঠিয়েছেন, বৃদ্ধ বয়সে তাকে ঘড় ছাড়া হতে হবে তা তিনি বিস্বাস করতে পারছেন না, তার স্বামীর ঘর থেকে তাকে বেরিয়ে যেতে হবে এটা দেখার চেয়ে মৃত্যু অনেক ভালো ছিলো, তার কাছে সব সন্তান এক সমান, সকলেই পিতার ওয়ারিশ পাবে, এই ভবনটি ওদের বাবার রেখে যাওয়া সম্পদ যার প্রতি সকল সন্তানই এক সমান অধিকার রাখবে, কিন্তু বড়ো সন্তান আতাউর ও তার স্ত্রী কিরন মালা সব একাই ভোগ করতে চায়, কখনো আবার চায় পিতার রেখে যাওয়া জমি থেকে আলাদাভাবে বেশি জমি, এটা মেনে নিতে পারছেন না তিনি, শুধু ছেলে আতাউর কিরন মালাই না সাথে কিরন মালার দুই ভাই আওলাদ আর মুরাদের হুমকি ধামকিতেও পরিবারের সকলে আতংকিত।
তিনি বলেন, আমি একজন মা, আমার বিরুদ্ধে আমার মতামত না যেনে একজন সাংবাদিক আইনা ইন্টারনেটে নাকি কি সব সংবাদ প্রচার করেছে, ওর বাবা নিজের টাকা আর ০৪ ছেলের টাকায় বাড়িটা করেছে, ছোট ছেলে ইশান বিদেশ গিয়েও ভবনের ধার দেনার টাকা শোধ করেছে, আমার বড়ো ছেলে বিদেশে লোক পাঠানোর ব্যবসা করতো সেখানে লোকসান হইছে সেই টাকাও আমার বাকি ৩ ছেলে শোধ করছে, আমাদের দেশে কি আইন নাই, ইউএনও স্যার এসিল্যান্ড স্যারদের কাছে সুবিচার দাবী করে নিজের স্বামীর ভবনে মৃত্যু পর্যন্ত নিরাপদে সন্তানদের নিয়ে আশ্রয় নিয়ে বাঁচতে চান তিনি, মা সম্মানের কথা চিন্তা করে এতোদিন বিলম্ব করেছেন তিনি।
এই ঘটনায় অভিযুক্ত আতাউরকে ঘটনাস্থলে না পেয়ে তার স্ত্রী কিরন মালার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সব অভিযোগ মিথ্যা। এগুলা নিয়া মেম্বার চেয়ারম্যানরা বসতে চাইছে আসেন বসেন তারপর দেখেন কি হইছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্যর কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে, তিনি এবং ইউপি চেয়ারম্যান ঘটনা সম্পর্কে অবগত আছেন বলে জানিয়েছেন। এবং উভয়ের নোটিশ পাঠিয়েছেন বলেও জানান।
উপরোক্ত ঘটনায় এই পরিবারের স্বজন ও স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এই ঘটনাটা বড়োই মর্মান্তিক, এ ধরনের ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না সমাজের অশুভ সংকেত। দ্রুত সুষ্ঠু সমাধান ও নিষ্পত্তি করা উচিৎ।
আরএক্স/