ফুলবাড়ীতে সাদকি জাতের কমলা চাষে ব্যাপক সাফল্য


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১১:৩২ অপরাহ্ন, ১২ই নভেম্বর ২০২২


ফুলবাড়ীতে সাদকি জাতের কমলা চাষে ব্যাপক সাফল্য
ছবি: জনবাণী

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে এই প্রথম বানিজ্যিক ভাবে দার্জিলিং সাদকি জাতের কমলার চাষবাদ করে এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন কৃষক আবু বক্কর সিদ্দিক।


কমলা রোপণের শুরুর দিকে স্থানীয়সহ অনেকের বিরুপ মন্তব্য থাকলেও বর্তমানে তার কমলা চাষের সাফল্য দেখে এখন কমলা চাষ করার জন্য স্থানীয়সহ অনেকেই আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। সেই সাথে কিভাবে কমলার চাষ করে সাফল্যসহ লাভবান হওয়া যায় এ বিষয়ে কৃষক আবু বক্কর সিদ্দিকের কাছে গিয়ে পরামর্শ নিচ্ছেন এবং অনেকেই কমলার চাষাবাদ শুরু করেছেন। 


এরই মধ্যে উপজেলার ভাঙ্গামোড় ইউনিয়নের সুজনেরকুটি গ্রামটি নতুন ভাবে পরিচিতি পেয়েছে কমলার গ্রাম হিসাবে। আবু বক্করের কমলার বাগানে থোকায় থোকায় কমলা দেখে অনেকেই মুগ্ধ হচ্ছে এবং এতো সুন্দর বাগান করায় কৃষক আবু বক্কর প্রশাংসায়ও পাচ্ছেন। বর্তমানে তার বাগানে বিভিন্ন আকারের রসাল কমলার ভারে নুয়ে পড়া ডালগুলো বাঁশের ‘ঠেকাথ দিয়ে উঁচু করে দেওয়ায় থোকায় থোকায় পাকা ও আধা পাকা কমলাগুলো বাতাসে দোল খাচ্ছে। কমলা গাছের এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখে প্রতিবেশিসহ দুর-দুরান্তর থেকে দেখতে আসা দর্শনার্থীদের মন ভড়িয়ে যায়।


সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে,বাগানের প্রতিটি গাছে গাছে কাঁচা সবুজ ও হলুদ কমলা ঝুলে আছে । দার্জিলিং সাদকি জাতের এ ফল মিষ্টি ও সুস্বাদু হওয়ায় বাজারেও এর ব্যাপক চাহিদা। ওই এলাকার সমতল ভূমিতে কমলা চাষের সূচনা করেন কৃষক আবু-বক্কর সিদ্দিক। আবু বক্কর ৪ বছর আগে যশোর জেলার মহেশ গ্রামে এক আত্মীয় বাড়ীতে বেড়াতে যান। সেখানেই স্থানীয় আশরাফুল আলমের নার্সারী ও তার কমলার বাগান দেখে মুগ্ধ হয়েছেন। সেখানই তিনি কমলা চাষাবাদ করার চিন্তা মাথায় নেন এবং সেখানেই নার্সারীর মালিক ও কমলা চাষি আশরাফুল আলমের সঙ্গে কমলা চাষ করার পরামর্শ নেন। পরবর্তীতে তিনি ওই নার্সারী থেকে দার্জিলিং এর সাদকি জাতের ২১০ টি চারা সংগ্রহ করে ৩০ শতক জমিতে চারাগুলো ১০ ফুট দুরত্ব রেখে রোপন করেন। 


অক্লান্ত পরিশ্রম করে ১৩৫ টি গাছ রক্ষা করতে পেরেছেন। প্রতিটি গাছে গাছে কম পক্ষে ৭০ থেকে ১০০ টিরও অধিক ফল ধরেছে। প্রতিদিন কমলার বাগানে পাকা কমলার স্বাদ নিতে স্থানীয়রাও দুর-দুরান্তর অনেকেই আসেন। এমন দৃশ্য দেখে মনে হচ্ছে কমলা বাগানটি যেন মিনি পর্যটক কেন্দ্র। দেখতে যেমন সুন্দর, খেতে অনেক সু-মিষ্টি। তার এ উদ্যোগ এ অঞ্চলের বেলে-দোআঁশ সমতল মাটিতে কমলা চাষে ব্যাপক সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে।


সামান্য রাসায়নিক সারের সাথে প্রচুর পরিমাণে জৈব সার প্রয়োগ করায় ২৮ মাস পর ফল আসা শুরু হয়। বিক্রির উপযোগী হলেও এখন পর্যন্ত বিক্রি শুরু করেননি। গাছের ফল বিক্রির জন্য পাইকারদের সাথে কথা বলেছেন আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে কমলা বিক্রি শুরু করবেন। সেই সাথে কিছু গাছের ফল ভালোভাবে পাকিয়ে কমলার বীজ সংগ্রহ করে চারা উৎপাদন করে চারা বিক্রি করলে প্রচুর অর্থ আয় হবে এখান থেকে। প্রত্যেকটি গাছে ৮০ থেকে ৯০ কেজি কমলা ধরেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।


কমলা বাগানের মালিক কৃষক আবুবক্কর সিদ্দিক জানান, দেশে পাহাড়ি এলাকায় কমলার বাগান আছে। এ ছাড়া বাজারে ভুটান ও ভারতের দার্জিলিং থেকে আমদানি করা কমলার প্রাধান্য। আশপাশের অনেকে এখন তার বাগান দেখতে আসছেন। 


তিনি আরও বলেন, সুস্বাদু কমলা চাষ সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে পারলে আর বিদেশ থেকে কমলা আমদানি করার প্রয়োজন হবে না। এমন সুস্বাদু কমলা বিদেশে রপ্তানি করা যাবে। তার এই কমলার চাষ করতে তিনি অন্য চাষিদের উৎসাহিত করছেন। কমলার বাগান করতে তিনি আরও দেড় থেকে দুই বিঘা জমিতে প্রস্তুতি নিয়েছেন। বর্তমান বাগানে যে কমলা আছে তা বিক্রি করলে যাবতীয় খরচ মিটিয়ে কমপক্ষে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা আয় করবেন বলে তিনি আশা করছেন। সব মিলিয়ে তার ১ লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।


স্থানীয় মুসা মিয়া ও জাহের আলী জানান, যখন আবু বক্কর প্রথম কমলার চারা রোপন করে তখন আমরা বিশ্বাস করতে পারিনি,যে আমাদের অঞ্চলের মাটিতে কমলা চাষ হবে। অনেকেই তামাশাও করেছেন। কিন্তু আবু বক্কর কারো কোন কথা না শুনে তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করে কমলার বাগানে ছোট ছোট চারাগুলোর সঠিক সময়ে পরিচর্চা করে তিনি কমলা চাষে সাফল্য অর্জন করে এ অঞ্চলের মধ্যে এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এখন শুধু এলাকার মানুষ নয়, আবুবক্করের কমলার বাগান দেখতে দুর-দুরান্তর থেকে অনেক মানুষ আসছেন ।এ জাতের কমলা চাষ তিনি খুবই সাড়া ফেলেছেন। তারা এখানে এসে আকৃষ্ট হচ্ছেন গাছের সৌন্দর্যের প্রতি। সেই সাথে বাগান দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেকেই বাগান শুরু করেছেন। কেউ কেউ প্রস্তুতিও নিচ্ছেন। আমরা তার সাফল্য কামনা করছি।


উপজেলা কৃষি অফিসার নিলুফা ইয়াছমিন জানান, এ উপজেলার মাটি লেবু জাতীয় ফল চাষের জন্য খুবই উপযোগী। এই প্রথম বানিজ্যিক ভাবে কৃষক আবু বক্কর সিদ্দিক কমলার চাষ করে এক বিরল দৃষ্টান্ত দেখিছেন। তার কমলার বাগান দেখে আমরাও অবাক হয়েছে। তার বাগানের কমলা খেতে খুবই মিষ্টি। তবে এখানকার আবহাওয়া এবং মাটি অনুকুলে থাকায় প্রচুর কমলার চাষ করা সম্ভব। ওই কৃষকের পাশাপাশি ওই গ্রামের অনেকেই কমলা চাষে এখন আগ্রহী। কৃষি বিভাগ কমলা চাষি আবু বক্করকে সকল ধরণের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে। সেই এ অঞ্চলে বানিজ্যিক ভাবে কমলার চাষাবাদ বৃদ্ধির জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কমলার বাগান করলে তিন থেকে চার বছরে মধ্যে ফল পাওয়া যায়।

জেবি/ আরএইচ/