মহেশপুরে ফলেছে কালো সোনা নামে পরিচিত ‘ভ্যানিলা মসলা’


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৮:২৬ অপরাহ্ন, ২৯শে মে ২০২৫


মহেশপুরে ফলেছে কালো সোনা নামে পরিচিত ‘ভ্যানিলা মসলা’
ভ্যানিলা মসলা চাষ। ছবি: প্রতিনিধি

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মসলা ভ্যানিলা এই প্রথম ফলেছে ঝিনাইদহের মহেশপুর গৌরিনাথপুর গ্রামে।প্রায় চার বছর অনেক গবেষণা ও চেষ্টা করে ভ্যানিলা ফলানো গেছে। এর আরেক পরিচিতি ‘ব্ল্যাক গোল্ড’ (কালো সোনা)। বিশ্বে ছায়া ঘেরা বনাঞ্চলে এই মসলা ফলে। বিশ্বের সবচেয়ে দামী মসলা জাফরানের পরই ভ্যানিলার স্থান। এমনটি জানিয়েছেন  মহেশপুর উপজেলা কৃষি অফিসার  ইয়াসমিন সুলতানা। ভ্যানিলা চাষ পদ্ধতি অনেকটা কঠিন। এই চাষে আন্তর্জাতিক কিছু নিয়ম মানতে হয়।


আরও পড়ুন: মহেশপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে দিনমজুরের মৃত্যু


বাংলাদেশে ভ্যানিলা চাষ সম্প্রসারিত করা গেলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে পণ্যটি রফতানিমুখী করা যাবে। যা থেকে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব। ভ্যানিলা নামটি অনেকের কাছে পরিচিত। এই নামে দেশে একটি আইসক্রিম আছে। ভ্যানিলা এমন একটি মসলা যা বেকারির সকল সামগ্রী (রুটি কেক বিস্কুট) এবং আইসক্রিম বানাতে ব্যবহার করা হয়। এই ভ্যানিলা আমদানি করতে হয়। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ভ্যানিলা উৎপাদন করেছে অনেক আগেই।ভারত ছাড়াও ইরান, ইরাক, জাপান, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে উৎপন্ন হয়। বাংলাদেশে এই প্রথম ভ্যানিলা উৎপাদিত হচ্ছে।


মহেশপুরের ভ্যানিলা চাষি নজরুল ইসলাম  জানালেন ২০১৯ সালে বগুড়া মসলা গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে কয়েকটি চারা আনে বিশেষ ব্যবস্থায়। তারপর লতা বা অর্কিড জাতীয় গাছটি নারিকেলের ছোবরা ও কোকো ডাস্ট ও পচনশীল খাবারের মধ্যে রোপণ করা হয়। ভ্যানিলা বাতাস থেকে খাবার সংগ্রহ করে। তিন বছর পর লতার মতো পেঁচানো গাছে ফুল আসে। ৪/৫টি থোঁকায় প্রতিটি মঞ্জরিতে ১৩ থেকে ১৫টি করে ফুল ধরে। ১৩ দিন এই ফুলকে হাতের ছোঁয়ায় পরাগায়ন করতে হয়।


এরপর ফল ধরে। ফলটি দেখতে ছোট সিমের মতো চওড়া কম। তবে লম্বা ৫ থেকে ৬ ইঞ্চি। এর চেয়েও বেশি লম্বা হয়। তা নির্ভর করে গাছের ওপর। সাত থেকে নয় মাসে ফলটি পরিপক্কতা পায়। এরপর অন্তত দেড় মাস আন্তর্জাতিক নিয়মে প্রক্রিয়াজাত (প্রসেস) করতে হয়। তারপর কালো রঙের মসলায় একটা ফ্লেভার চলে আসে। এই ফ্লেভারের কারণে এর আরেক পরিচিতি কালো সোনা। মহেশপুর  উৎপাদিত ভ্যানিলা একবার প্রসেসিং হয়েছে। পরবর্তীতে প্রসেসিং হবে আসছে নবেম্বর ও ডিসেম্বরে।


অর্কিড লতা জাতীয় গাছটি বেড়ে ওঠার সময় হাত দিয়ে ওঠানামা করতে হয়। যেন মাটির সংস্পর্শে না আসে তা খেয়াল রাখতে হয়। এই মসলাটি সাধারণত ফলে পাহাড়ী এলাকায়। তবে যে স্থানের বনায়নে ৫০ শতাংশ ছায়া আছে এবং ৫০ শতাংশ রোদ পড়ে সেখানে ভ্যানিলা ফলে।ভ্যানিলা ফলানোর জন্য বৃক্ষের আচ্ছাদনে রোদ ও ছায়াযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে।


আরও পড়ুন: মহেশপুর ১১৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকার ভারতীয় মাদকদ্রব্য ধ্বংস করলো বিজিবি


যে কেউ নিয়ম মেনে এই ভ্যানিলা মসলা ফলাতে পারবেন। তবে এ জন্য থাকতে হবে ধৈর্য্য ও ইচ্ছে শক্তি। কারণ লতা জাতীয় গাছটি মাটিতে বেড়ে ওঠে না। নারিকেলের ছোবরা ও কোকো ডাস্টের ভেতরে চারা ভালভাবে জন্মে।

এ জন্য নিবিড় পরিচর্যা দরকার। লতা জাতীয় এই গাছের উচ্চতা পাঁচ ফুট আবার কখনও তার চেয়ে কিছুটা বেশি হয়। দেশে ভ্যানিলা আইসক্রিমে এই মসলার গুঁড়া দেয়া হয়। যে কারণে ভ্যানিলা আইসক্রিমের আলাদা ফ্লেভার আছে। আইসক্রিম বানাতে এক ধরনের বেকিং পাউডার দেয়া হয়। ভ্যানিলার আলাদা একটা স্বাদ আছে। দামও বেশি।


এসডি/